ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আইএস আছে কি নেই, তবে জামায়াত-শিবির আছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
‘আইএস আছে কি নেই, তবে জামায়াত-শিবির আছে’ যুব ইউনিয়নের কনভেনশন

চট্টগ্রাম: দেশে যত সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আছে সবগুলোর ‘মাদার অর্গানাইজেশন’ জামায়াত ইসলামী এবং ছাত্রশিবির বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড.মঈনুল ইসলাম।  সরকার এটা জেনেও জামায়াত-শিবিরের নাম উচ্চারণ করে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

শুক্রবার (২৪ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে যুব ইউনিয়ন আয়োজিত সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মঈনুল ইসলাম বলেন, দেশে আইএস আছে কি নেই, সেটা অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক।

  বাংলাদেশে যেটা আছে সেটা হচ্ছে জামায়াত ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির।   একটা রসুনের কোয়া ১০টা হতে পারে, কিন্তু গোড়া একটা।
  জামায়াত ইসলামী, এটাই মাদার অর্গানাইজেশন।  

‘হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ, আনসারুল ইসলাম, আনসারুল ইসলাম বাংলাদেশ, জেএমবি, জেএমজেবি, এগুলোর মধ্যে দয়া করে কেউ পার্থক্য খুঁজবেন না। এগুলোর আর্ন্তজাতিক নেটওয়ার্ক একটাই।   সেটা হচ্ছে জামায়াত ইসলামী। ’

‘সরকার সব জানে, সব বুঝে।   কিন্তু ভাসুরের নাম উচ্চারণ করে না।   দয়া করে ওটাকে টার্গেট করেন।   ভাসুরের নাম উচ্চারণ করেন।   ওরাই জঙ্গিবাদের মাদার অর্গানাইজেশন, বাকিগুলো সব তাদের পকেট থেকে বেরুচ্ছে। ’ বলেন মঈনুল ইসলাম

সরকারের হেফাজত তোষণেরও কঠোর সমালোচনা করেন ড.মঈনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পাঠ্যসূচির পরিবর্তন প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারিয়েট (কার্যালয়) থেকে করা হয়েছে।   যার জন্য  শিক্ষামন্ত্রীরও মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না।   হেফাজতের সাথে একটা সমঝোতা করার জন্য এই পরিবর্তনটা আনা হয়েছে।  

‘আমরা ভুলে যাই ২০০৬ সালেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা সমঝোতা মৌলবাদি দলগুলোর সঙ্গে হয়েছিল।   এখন আবারও খেলা চলছে।   আওয়ামী লীগ ভাবছে হেফাজতকে যদি জামায়াত থেকে একটু আলাদা করা যায়।   নাউজুবিল্লাহ। ’

‘হেফাজতে ইসলামের একটি ভোটও কখনো আওয়ামী লীগের বাক্সে পড়বে না।   ক্ষমতাসীন জোটের বাক্সে পড়বে না।   এগুলো কি চিন্তা, কাদের মাথা থেকে এগুলো আসে, হেফাজত ইসলামকে নাকি তারা নিজেদের সঙ্গে রাখতে পারবে।  জামায়াত-হেফাজত এক জায়গায় গিয়ে এক হতে বাধ্য।   আওয়ামী লীগ যদি হেফাজতকে আলাদা করতে চায়, এটা আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হবে। ’

তিনি বলেন, দেশে প্রতি তিনজন ছাত্রের একজন মাদ্রাসায় পড়ে।   ৩৫ লাখ ছাত্রছাত্রী এখন মাদ্রাসা ছাত্র।   এরা কোনদিন আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে ? চিন্তা করা যায় ? এসব কাদের মাথা থেকে আসে ? হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, এসব চিন্তা কোত্থেকে আসে।

জামায়াত প্রসঙ্গে মঈনুল ইসলাম আরও বলেন, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান তাদের আইনগত অস্তিত্ব দিল।   এরশাদ তাদের সোনার খনি দিয়ে দিল, ইসলামী ব্যাংক।   আজ তাদের যে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য আমরা দেখছি, এর সোনার খনি তো ইসলামী ব্যাংক।  তাদের মতো এত সম্পদশালী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি নেই।   ইসলামী ব্যাংকের ২০ লাখ উদ্যোক্ত‍ার শতকরা ৯৫ জন জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার।   কর্মকর্তা-কর্মচারিদের শতকরা ৯৫ জন শিবিরের ক্যাডার।    

‌‘আশির দশকে শিবিরের মিছিল থেকেই স্লোগান দেয়া হত, আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান।   ওই তালেবান, আলকায়েদা থেকেই এসেছে জঙ্গিবাদ।   এখন বাংলাদেশও জঙ্গিবাদে আক্রান্ত হয়েছে। ’

‘মায়ানমারে আরএসও কারা সৃষ্টি করেছে ? জামায়াত ইসলাম।   আরএসওকে কক্সবাজারে এনে ট্রেনিংও দিয়েছে।   আবার তাদের আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসেবে পাঠিয়েছে।   বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে সৌদিআরবে পাঠিয়েছে। ’

বামপন্থীদের শত্রু  চিনতে ভুল না করার আহ্বান জানিয়ে মঈনুল বলেন, যারা সমাজতন্ত্রী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের বলব চিন্তাভাবনা করে রাজনীতি করুন।   শত্রু কে আর মিত্র কে, চিহ্নিত করতে হবে।   আপনার শত্রু  জামায়াত, শিবির, হেফাজত, কওমি মাদ্রাসা।  

আলোচনায় অংশ নেন কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মো.শাহ আলম, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, অধ্যাপক কানাই দাশ, যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল।

যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আমির হোসেনের সভাপতিত্বে কনভেনশন সঞ্চলনা করেন সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি রিপায়ন বড়ুয়া।   এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুব ইউনিয়নের রাঙামাটির সভাপতি এম জিসান বখতিয়ার, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল শিকদার, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক সনৎ বড়ুয়া এবং কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আক্তার মার্টিন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।