শুক্রবার (২৪ মার্চ) বিকেলে নগরীর মুসলিম হলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা শাখার দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সন্তু লারমা বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি শুধু বাঙালিদের রাষ্ট্র হয়ে থাকে তাহলে বাঙালিদের মধ্যে-তো বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান আছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দুটি জাতীর ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হয়। হিন্দুদের নিয়ে ভারত আর মুসলিমদের নিয়ে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতে বহু জাতীর বসবাস রয়েছে তেমনি বাংলাদেশেরও। তাহলে আমার মতো অনেকেরই প্রশ্ন হতে পারে, দ্বি-জাতী তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ কি যথার্থ হয়েছে?’
‘বাংলাদেশে বহু ধর্মের মানুষ বসবাস করে। যে মতাদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল, যারা প্রথম দিকে এ দেশের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, দেশ পরিচালনা করেছিলেন সেই ভাবনা কি বর্তমানে আছে? দেখবেন, এর কোন অংশ এখন নেই। ’ বলেন-সন্তু লারমা।
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে এই সংবিধানকে সংশোধন করা হয়েছে। পরবর্তীতেও আমরা দেখি, বর্তমান সরকার বিদেশে গণতান্ত্রিক, অসম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল সরকার বলে দাবি করলেও সেই সরকার এদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তাহলে প্রশ্নটা কি এভাবে করতে পারি- বাঙালি হিসেবে সংখ্যালঘুদের অবস্থানটা কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচার-নিপীড়ন এগুলো কারা করছে? যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, নীতি নির্ধারক তারাই-তো সংখ্যালঘুদের উপর এই শোষণ নিপীড়ন করছে। এইসব নিয়ে আমি ক্ষমতাসীন দলের কাছে দাবিও জানাব, আবার সেই দলের সঙ্গী হয়ে দলভুক্ত হয়ে থাকব, তাতো হয় না। এরকম হলে, এটি পরস্পর বিরোধী অবস্থান হচ্ছে না?’
নিজে শোষণের শিকার দাবি করে সন্তু লারমা বলেন, ‘আমি নির্যাতীত নিপীড়িত। আমার কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ আমি সেই দলে আছি যে দল কোনো অধিকার দিচ্ছে না। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যে সরকার তা গণতান্ত্রিক না, অসাম্প্রদায়িক না এবং প্রগতিশীল না। বাংলাদেশের ৪৬ বছরের মধ্যে জনমুখী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় নি। আর কখনো হবেও না। ’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আড়াইকোটি হিন্দু ছিল সেটা কেন কমে গেল? তারা কেনো অন্য দেশে চলে গেল। সরকার যদি প্রগতিশীল হয়, অসম্প্রদায়িক হয় তাহলে এদেশের হিন্দুরা কেনো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিবে। কেন, মারমাসহ আধিবাসীরা মায়ানমারে আশ্রয় নিবে।
শান্তি চুক্তি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি দাবি করে সন্তু লারমা বলেন, এই সরকারই পার্বত্য শান্তিচুক্তি করেছিল। কিন্তু কোথায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হল? সেনাবাহিনীকে-তো পার্বত্য অঞ্চল থেকে এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি। তাই কোনো সরকারের পক্ষে আর প্রগতিশীল হওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের সংখ্যালঘুদের মধ্যে থেকে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে। আমাদের দাবি আমাদেরই জানাতে হবে।
তিনি বলেন, একজন মহান নেতার কথা বলতে চাই। তার নাম হলো-মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। আমাদের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘‘তোমার মুক্তি তোমাকে অর্জন করতে হবে। তুমি গিয়ে একটি দল গঠন কর। ’’ সেই ভাসানী আমাদের পরম বন্ধু। আমাদের এখন সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে। ’
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল, ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও আর্ন্তজাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, কেন্দ্রীয় নেতা ইন্দুনন্দন দত্ত, হিন্দু ফাউণ্ডেশনের মহাসচিব শ্যামল কুমার পালিত, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
জেইউ/টিসি