ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আলাওলের সঙ্গে ‘মৃত্যু হলো’ মায়ের স্বপ্নেরও…

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
আলাওলের সঙ্গে ‘মৃত্যু হলো’ মায়ের স্বপ্নেরও… আলাওলের সঙ্গে ‘মৃত্যু হলো’ মায়ের স্বপ্নেরও। ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ছেলে পড়ার ফাঁকে বাবার দোকানে বসতে চাইতো বলে বকা দিতেন মা। রাত ৯টার মধ্যে ঘরে না ঢুকলে ছেলের মুঠোফোনে ফোনের উপর ফোন যেত মায়ের। স্নাতকে পড়ার সময়েই ছেলে চাকরি করতে চাইলে পড়ালেখার ক্ষতি হবে এই ভয়ে তাও করতে দেননি মা। মায়ের আশা ছিল ছেলে পড়ালেখা শেষ করুক আগে, তারপরেই না হয়  চাকরি।

মায়ের সেই আশা অধরাই যে রয়ে গেল ! এর আগেই ছেলে মো. আলাউদ্দিন আলাওলের নিথর দেহ দেখতে হলো মাকে।

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকায় খুনের শিকার হতে হলো তাকে।

আলাউদ্দিন  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এবার স্নাতকোত্তরে উঠেছিল।

যে ছেলেটি মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল সেই ছেলেটি মায়ের কাছে ফিরলো বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) মরদেহ হয়ে।

একজন মায়ের জন্য পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কিইবা হতে পারে !

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহ শনাক্ত করতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন আলাওলের বাবা মো. শাহআলম এবং ছোট ভাই সালাহ উদ্দিন।

শাহ আলমের দুই ছেলের মধ্যে আলাওল ছিলেন বড়। তাদের বাড়ি হাটহাজারীর মদনহাট এলাকার হেলাল উদ্দিন চৌধুরী পাড়ায়।

এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমার মাকে কি জবাব দিবো? যে মা, বড় ভাইকে সবসময় চোখে রাখত। সন্ধ্যার পর বাড়িতে বড় ভাই না আসলে ফোনের উপর ফোন করতেন। পড়ালেখার ক্ষতি হবে এই ভয়ে চাকরি পাওয়া সত্বেও তা করতে দেননি বড় ভাইকে। কি বলবো, কি জবাব দেব আমার মাকে?

আলাওলের বাবা শাহ আলম বলেন, ‘বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে অক্সিজেনে থাকা তার এক বন্ধুর বাসায় যাবে বলে বের হয় আলাওল। রাত ৯টায়ও বাড়িতে না আসায় তার মুঠোফোনে ফোন করি। কিন্তু তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। আধা ঘণ্টা পরও তার সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় অক্সিজেনে থাকা তার বন্ধু সাদেকের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু সে জানায় তার বাসায় আলাওল যায়নি। ’

‘তারপর পুরো রাত আমরা চিন্তায় ছিলাম। কারণ কোনোদিন সে না বলে কোথাও থাকে না। পরে সকালে বায়েজিদে তার লাশ পাওয়া গেছে বলে শুনতে পাই। ’-বলেন আলাওলের বাবা।

আলাওলের খালাতো ভাই মো. রিয়াদ হোসেন বলেন, ‘আলাওল ভাই আমার প্রায় সমবয়সী ছিল। তাই সে সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করত। কারও সাথে কোনো দ্বন্দ্ব আছে কি না? সে বিষয়ে কোনোদিন কিছু বলেনি। কোনো রাজনীতির সাথেও সে জড়িত ছিল না, এমনকি খারাপ অভ্যাসও তার মধ্যে ছিল না। ’

আলাওলের সহপাঠী সাদেক হোসাইন বলেন, ওইদিন সে আমার বাসায় আসেনি। রাত ১১টার পর তার বাবা আমাকে বিষয়টি জানানোর আমি জানি। পরেরদিন (বৃহস্পতিবার) সকালে ফেসবুকের একটি গ্রুপে বন্ধু আলাওলকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে একটি পোস্ট দিই। এর ঠিক এক ঘণ্টা পর শুনি বায়েজিদ এলাকায় যে যুবকের মরদেহ পাওয়া গেছে সেই আমাদের আলাওল। ’

বুধবার রাত দেড়টার দিকে বায়েজিদ থানা এলাকার পশ্চিম শহীদনগর এলাকায় হাত-পা বাধা অবস্থায় বাসার টয়লেট থেকে আলাওলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, ফটিকছড়ির বাসিন্দা ওমান প্রবাসী আবু ছৈয়দের মালিকানাধীন শহীদনগর এলাকার চারতলা বাড়ির তিন তলার একট বাসা খালী ছিল। বিজ্ঞপ্তি দেখে মঙ্গলবার এক যুবক ও এক তরুণী বাসা ভাড়া নিতে আসেন। তবে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক  হাসিনা আক্তার না থাকায় ওইদিন তাদের বাসা দেখানো সম্ভব হয়নি।

বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিন যুবক ও এক তরুণী পুনরায় বাসা দেখতে আসেন। এসময় তারা এক বস্তা মালামালসহ নিয়ে আসেন। পরে বাসা খুলে দেওয়া হলে তারা বাসাটা পরিস্কারের জন্য তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে একটি বালতি নেন। পরে তারা বাজার আর অন্যান্য মালামাল নিয়ে আসার কথা বলে বাসা থেকে বের হন।

এদিকে রাত ১১টার দিকে বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ওই বাসার সামনে দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখেন বাসার দরজা খোলা। পরে ভেতরে কারও আওয়াজ না শুনে তিনি সেখানে প্রবেশ করেন। বাসার টয়লেটের দরজা খোলে দেখেন এক যুবক হাত-পা বাধা অবস্থায় সেখানে পড়ে রয়েছেন। এরপর পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে সিআইডি গিয়ে ঘটনাস্থলের আলামত সংগ্রহ করেন।

বায়েজিদে খুন হওয়া যুবক চবি ছাত্র আলাওল

সন্ধ্যায় নেয় বাসাভাড়া, রাতে হত্যা করে উধাও

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭

জেইউ/টিসি 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।