স্কুলের যারা পাঠ্যতালিকা তৈরি করেন তাদেরও দোষ নয়। এটা এই উপনিবেশিক শিক্ষাপদ্ধতির দোষ।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) চট্টগ্রাম একাডেমি আয়োজিত চার দিনব্যাপী ১৭তম স্বাধীনতার বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. পবিত্র সরকার বলেন, বই নানাভাবে আমাদের হাতে আসে। স্কুলের বই পড়তে হয়। অনেক সময় বাধ্য করা হয়। সেটা হচ্ছে বাঁধাধরা বই। এ বইগুলো আমাকে পড়তেই হবে। পড়ে পাঠ মুখস্থ করতে হবে। পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় পাস করতে হবে। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা যখন যাই ছেলেবেলা থেকে যত ভালো বই হোক বইগুলো আমাদের একসময় খুব খারাপ লাগতে শুরু করে।
আমার তো মনে আছে। অনার্স যখন পড়ি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’, তার আগেই আমি অন্ততপক্ষে ছয়-সাতবার পড়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু অনার্সে যখন সেটি পাঠ্য হয়ে এলো এবং আমাকে সমালোচনা পড়তে হলো, সমালোচনা লিখতে হলো, প্রশ্নের উত্তর লিখতে হলো তখন ‘পথের পাঁচালী’ বইটাকে আমার বেশ খারাপ লাগতে লাগল। এটা ঘটে।
শিক্ষকেরা যেমন বোঝেন, অভিভাবকেরা বোঝেন। এ সময় দরকার আটকে রাখা বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। জ্ঞান একটা বিশাল সমুদ্রের মতো। যে বই পড়লে ভালো লাগবে সেটি স্বাধীনতার জায়গায় পৌঁছে দেয়। ভালো লাগা মানে আমার স্বাধীনতা। এটি ব্যক্তির স্বাধীনতা। জাতির স্বাধীনতা নয়।
ডিসি হিলের মুক্তমঞ্চ দেখে গ্রিস দেশের প্রাচীন নাট্যশালার কথা মনে পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম এ উপমহাদেশের এক বিশেষ গৌরবের ভূমি। এখানকার মানুষের বিদ্রোহ এবং নানা সাংস্কৃতিক কাজকর্মে এ উপমহাদেশে তার স্থান উজ্জ্বল হয়ে আছে। আমরা সবাই চট্টগ্রামের কাছে নানা সময়ে নানা উপলক্ষে শ্রদ্ধায় মাথা নিচু করে থাকি। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার চট্টগ্রাম আসা হলো। আশাকরি, আপনাদের শুভেচ্ছায় যদি আরও কয়েকটা বছর পাই তবে আসার জন্য উৎসুক হয়ে থাকব।
বইমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আমিনুর রশীদ কাদেরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাহবুবুল হক, লেখিকা ড. আনোয়ারা আলম ও প্রাবন্ধিক নেছার আহমদ। আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক জিন্নাহ চৌধুরী। শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন অরুণ শীল।
স্বাধীনতার বইমেলায় আসছেন পবিত্র সরকার
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
এআর/টিসি