কাপড় বিক্রেতার বেশে দিনাজপুর থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নে এসে সোহেল রানা তিনজনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থেরও যোগান দেন এই সোহেল রানাই।
তিনজনের মধ্যে হাসান গত ৭ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনায় পুলিশের উপর বোমা ছুঁড়তে গিয়ে আরেক জঙ্গি ইমতিয়াজ অমিসহ গ্রেফতার হন। জিয়াউল হক জসিম ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ড পৌরসভার নামারবাজার এলাকায় সাধন কুটির থেকে তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা ওরফে আরিজনাসহ গ্রেফতার হন।
জিয়াউল হক জসিম ও তার স্ত্রী আরজিনা বর্তমানে আদালতের নির্দেশে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। জিজ্ঞাসাবাদের তাদের কাছ থেকে ধর্মগুরুর বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা।
‘জসিম, হাসান এবং কামাল তিনজন বন্ধু। তাদের জঙ্গিবাদে যে মোটিভেট করেছে তার বিষয়ে কিছু তথ্য আমরা জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছি। তারা এটাকে ধর্মগুরু বলে। লোকটা একেবারে সাধারণ টাইপের। এর বেশি তথ্য আমাদের কাছে এই মুহুর্তে নেই। ’ বলেন এসপি
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে দিনাজপুর থেকে সোহেল রানা বাইশারিতে যান। সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে কাপড় ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন। পরে কিছুদিন রাবার বাগানেও কাজ করেন। সোহেল আলিম পাস। বয়স ৩৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তার স্ত্রীও নব্য জেএমবির সঙ্গে যুক্ত। তাদের পাঁচ মেয়ে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, জসিম, হাসান এবং কামাল তিনজনের বাড়িই বাইশারিতে। হাসানের বাইশারিতে একটি চা এবং পান-সিগারেটের দোকান ছিল। কাপড় বিক্রি করতে গিয়ে ওই দোকানে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতেন সোহেল রানা। সেখানেই হাসানের সঙ্গে তার সখ্যতা।
‘সোহেল রানা দেখেন, তিন যুবক নিয়মিত নামাজ পড়েন। ধর্মের বিষয়ে তাদের আগ্রহ আছে। সোহেল প্রথমে তাদের বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর নির্যাতনের কিছু ছবি দেখান। এরপর ইসলাম ধর্মের অবমাননাসহ নানা বিষয়ে প্রতিবাদ করার জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করেন। কিছু কিছু অর্থও তাদের হাতে তুলে দেন। এক পর্যায়ে তারা সোহেল রানার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন এবং উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়েন। ’ বলেন ওই কর্মকর্তা
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এক বছর আগে দিনাজপুরের ওই জেএমবি নেতা বাইশারিতে গিয়েছিল। জসিম ও তার ভগ্নিপতি কামাল এবং হাসানকে জঙ্গিবাদের পথে নিয়ে আসে এই জেএমবি নেতা। টাকাপয়সা দেয়। এক পর্যায়ে স্বামীর হাত ধরে কামাল এবং জসিমের স্ত্রীও একই পথে পা দেয়।
পুলিশ সূত্রমতে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নের চাকপাড়া বৌদ্ধমন্দিরে গত বছরের ১৪ মে মংশৈ উ চাককে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনার পর কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি টিম সোহেল রানাকে গ্রেফতারের জন্য বাইশারিতে গিয়ে দুই দফা অভিযান চালায়। কিন্তু সোহেল রানাকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নাম পেয়েছিলাম সোহেল রানা। তবে এটি তার সাংগঠনিক নাম হতে পারে। আমরা অভিযান চালানোর পর তাকে আর এলাকায় কাপড় বিক্রি করতে দেখা যায়নি। এরপরই মূলত সে বাইশারি থেকে পালিয়ে যায়।
সূত্রমতে, মিরপুর থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই খালাত ভাই আয়াত আল হাসান (১৯) এবং রাফিদ আল হাসান (১৭) বাইশারিতে গিয়ে দুই মাস ছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য পাওয়া গেছে। কুমিল্লায় আটক ইমতিয়াজ অমি তাদের আগেই বাইশারি যান। জসিমের আরেক বোন মনজি আরার সঙ্গে দুই খালাত ভাইয়ের একজনের বিয়ে হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে পুলিশ।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বাংলানিউজকে বলেন, কুমিল্লায় আটক দুই জঙ্গিকে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে আমরা মিরসরাইয়ের মামলায় রিমান্ডে আনব। এরপর জসিম ও আরজিনাকে তাদের মুখোমুখি করব। তখন বৌদ্ধভিক্ষু হত্যার বিষয় এবং দিনাজপুরের জেএমবি নেতার পরিচয় হয়ত জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৭
আরডিজি/টিসি