ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে মিরপুর তীর্থভূমি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭
ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে মিরপুর তীর্থভূমি দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা শোনান কলকাতার গৌতম ভট্টাচার্য

চট্টগ্রাম: সচীন টেন্ডুলকারকে ‘ক্রিকেট-ঈশ্বর’ আখ্যা দিয়ে কলকাতার খ্যাতিমান সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য বলেছেন, সচীন স্বর্গলাভ করেছিলেন বাংলাদেশের মিরপুরে। সেখানেই তার শততম সেঞ্চুরি করেছিলেন। সচীনের প্রতি আগেও বাংলাদেশের ভালোবাসা ছিল। শততম সেঞ্চুরির পর বাংলাদেশ ও সচীন আরও বেশি মাখামাখি হয়ে যায়। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে মিরপুর তীর্থভূমির মতো।   

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাত আটটায় রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ’র মেজবান হলে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) আয়োজিত ব্রাইট অ্যান্ড ব্রিলিয়ান্ট জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড নাইট শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, টেন্ডুলকারকে ঘিরে অদৃশ্য অনেক রূপকথা আছে।

যেগুলো বাস্তব নয় রূপকথার মতো। আমাদের একেক সময় মনে হয় যে আমরা কি সত্যিই সচীনকে দেখেছিলাম।
না স্বপ্নে দেখা একটা চরিত্রের মতো। বাবাকে হারিয়ে যখন খেলতে এলেন। আমার এখনো মনে আছে, ওয়ার্ল্ড কাপ ১৯৯৯। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বাবা মারা গেছেন, ফিরে এলেন। মা বলেছিলেন, বাবা খুশি হতেন তুমি দেশের হয়ে খেললে, তুমি ফিরে এলে কেন। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং সেঞ্চুরি করে যখন মেঘের মধ্যে বাবাকে খুঁজছেন, আপনারা এখানে অনেকে দেখেছেন। ল্যান্ডমার্ক পূর্ণ করার পর তিনি আকাশের দিকে তাকাতেন না।

‘ঢাকাতে শততম সেঞ্চুরি করার পর আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম উনি বলেছিলেন, ৯৯টা সেঞ্চুরি করার পরও যেভাবে সবাই আমায় বলেছিল একটা সেঞ্চুরি কেন হচ্ছে না। তাতে আমার নিজেরই সন্দেহ হয়েছিল আমি সত্যিই ৯৯টা করেছি? না আমি করিনি। মনে হচ্ছিল একটা সেঞ্চুরি না হলে আমার আর কিছু হবে না। তখন আমি অভিমানে বলেছিলাম, ঈশ্বর তুমি আমাকে এত দিলে কেড়ে নিতে চেয়েছিল কেন। ’ যোগ করলেন গৌতম ভট্টাচার্য।

অমিতাভ বচ্চনের ইন্টারভিউতে দুটি ভয় 

গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, ১১ অক্টোবর অমিতাভ বচ্চনের বয়স হবে ৭৫। আমি ৮-৯ বার তার ইন্টারভিউ করেছি। এক্ষেত্রে দুটি ভয় কাজ করে। প্রথমটি টাইমিং। ১০ মিনিট দেরি হলো তো টাইম ইজ ওভার। দ্বিতীয়টি হচ্ছে নার্ভ ঠিক রেখে প্রশ্ন করা। কলক‍াতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কোনায় অমিতাভের প্রথম পোর্ট পোলিও স্যুট হয়েছিল। ওই ছবিটা মুম্বাই পাঠিয়েছিলেন। ওই ছবি তাকে কলকাতা থেকে মুব্বাই নিয়ে গিয়েছিল। তিনি কলকাতা এলে রাতের বেলা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। তাকে প্রেমের ঘা-ও দিয়েছিল কলকাতা।

তিনি বলেন, অমিতাভ প্রথম সুনীল দাদের সিনেমায় চরিত্র পেয়েছিলেন বোবা আর কালার। মনমোহন দেসাই নামের একজন তাকে বলেছিলেন, রোল চাইয়ে... চিকেন রোল চাইয়ে। রাজেশ খান্না সুপার স্টার ছিলেন। তিনি ১৭ বার আলাপের পর জিজ্ঞেস করেছিলেন উনি কে! জীবনের যত অপমানজনক অভিজ্ঞতাগুলো, সেগুলোকে তিনি ব্যবহার করেছেন ফিল্মে।

এই তো সেদিন ইন্ডিয়া পাকিস্তান একটা ম্যাচ ছিল। বাংলাদেশ টিমও ছিল। সেই ম্যাচের আগে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাইছিলেন অমিতাভ। সৌরভের ঘরে ইমরান খান ঢুকলেন। অমিতাভ কোন‍ায় বসে ছিলেন। ইমরান কথা বলার চেষ্টা করলেন। কেমন আছেন ছাড়া আর কোনো কথা বলেননি। সবাই বললেন, ইমরানের সঙ্গে কি সম্পর্ক ভালো নেই! সৌরভ বলেছেন, অমিতাভ বচ্চন জাতীয় সংগীতের প্রতি মনো সংযোগ করেছিলেন। অমিতাভ শুধু ভারতবর্ষের নয়, উপমহাদেশের বিস্ময়।  

ম্যারাডোনা বললেন, ‘পেলে’ দুর্ধর্ষ ফুটবলার

কলকাতায় ম্যারাডোনার সাক্ষাৎকার গ্রহণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে গৌতম ভট্টাচার্য বললেন, ব্রাজিলের  পেলের কথা উঠল। ম্যারাডোনা বললেন, পেলের সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে চাই না। পেলে দুর্ধর্ষ ফুটবলার। পেলে ভালো ফুটবলার। আমি (গৌতম) দোভাষীর দিকে তাকালাম। উনি হাসতে শুরু করলেন। বললেন, ডিয়াগো যদি পেলেকে ভালো বলেন তখন সবাই ধরে নেবেন পেলে ভালো নন। ডিয়াগো চাইলে ব্রাজিলিয়ান লকার রুমে ঘুরে আসতে পারবেন। কিন্তু পেলে পারবেন না।  

ইংলিশ বলতে জানার পরও বলেন না কেন জানতে চাইলে ম্যারাডোনা বলেন, ইংলিশ বলার চেষ্টা করে দেখেছি, আমি কোনো মজা পাই না। ইটালিয়ান বলে মজা পাই।  

‘হ্যান্ড অব গড গোল’ প্রসঙ্গে ম্যারাডোনা বলেন, ইংরেজরা বলেন হ্যান্ড অব গড গোল আমি করেছিলাম। ভালো কথা।   ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে বিতর্কিত গোলটি নিয়ে আজ সমালোচনা আছে। ইংরেজদের সিলেকটিভ মেমোরি। তারা কিছু মনে রাখে, কিছু কিছু ভুলে যায়।

পরে এলে কলকাতাকে কীভাবে দেখতে চান জানতে চাইলে বলেন, শুধু কলকাতা নয়, এ সাব কন্টিনেন্টে কলকাতা, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা যখন পরে আসবো তখন যেন দেখি নীল-সাদা ফ্ল্যাগে ছেয়ে গেছে। হলুদ ফ্ল্যাগ একটিও নেই।

সামনের সারিতে বসে বান্ধবীর চুলে বিলি কাটছিলেন

অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী সম্পর্কে বলেন, নকশাল আন্দোলনে পুলিশের গুঁতো খেয়ে কলকাতা ছাড়তে হয়েছিল মিঠুনকে। সেখান থেকে চলে যান ফিল্ম স্টুডিওতে। সেখান থেকে মৃণাল সেন তাকে শনাক্ত করেন অদ্ভুতভাবে। তিনি স্মারক বক্তৃতা দিচ্ছেন, এ সময় তিনি দেখেন সামনের সারিতে বসে অবলীলাক্রমে পাশের বান্ধবীর চুলে বিলি কাটছিলেন। তখন মৃণাল সেন বললেন, ওই ছেলেটাকে চাই।   ওই ছেলেটরা বন্য ব্যাপারটা আমার চরিত্রে লাগবে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে প্রথম সারির ছবি জোগাড় করা হলো। মিঠুনের কাহিনি যেকোনো বাঙালির গর্বের কাহিনি।

তিনি বলেন, মিঠুনকে আমরা বলতাম ফাদার তেরেসা। যিনি অকাতরে আর্থদের বিলি করেছেন টাকা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কোনো সরকার তাকে আজ পর্যন্ত জমি দেননি, তার কোনো বাড়ি নেই। শহর থেকে হয়তো তিনি ভালোবাসা পেয়েছেন। কিন্তু স্বীকৃতি পাননি। আজ সাইফ আলী খান, বিদ্যা বালান পদ্মশ্রী হয়েছেন। মিঠুন পদ্মশ্রী দেওয়া হয়নি। এখন কলকাতায় ফেরদৌস, জয়া আহসানরা অভিনয় করছেন। একটা সময় বম্বেতে বাঙালিদের রসগোল্লা বাবু বলা হতো। যারা রসগোল্লা খায় আর ঘুমোয়। সেই ইমেজ চেঞ্জ করে মিঠুন অন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন। কিন্তু আজ এমনই ট্র্যাজিডি, তার করা বিভিন্ন ট্র্যাজিক চরিত্রের মতো শরশয্যায় শুয়ে আছেন যেখানে না সাংবাদিকের মোবাইল ফোন পৌঁছ‍ায়, না বন্ধুর আর্তি পৌঁছায়, না সাহায্য পৌঁছায়।  

বাংলানিউজের রমেনসহ পাঁচজন পেলেন ব্রিলিয়ান্ট অ্যাওয়ার্ড

একুশে টেলিভিশনের ‘অ্যাওয়ার্ড নাইট’ শুরু

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৭

এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।