ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আড়াই ঘণ্টা দুই বাড়িতে তল্লাশি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আড়াই ঘণ্টা দুই বাড়িতে তল্লাশি চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আড়াইঘণ্টা বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নগরীর আকবর শাহ থানার দুটি এলাকায় দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।  বাড়ি দুটি হচ্ছে, কর্নেল হাট সিডিএ আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়কে মোয়াজ্জেম হোসেনের মালিকানাধীন মমহ ভবন এবং উত্তর কাট্টলি ঈশান মহাজন সড়কে শ্রীশ সাহার মালিকানাধীন একটি বাড়ি।

সোমবার (২০ মার্চ) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে প্রথমে কর্ণেলহাটের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ।   সেখান থেকে পুলিশের কিছু সদস্য গিয়ে উত্তর কাট্টলির বাড়িটি ঘেরাও করে।

  উত্তর কাট্টলির বাড়িতে এবং পর্যায়ক্রমে কর্ণেলহাটের বাড়িতে তল্লাশি শেষ হয় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায়।  

তবে আড়াইঘণ্টার অভিযানে জঙ্গি সন্দেহে কাউকে পাওয়া যায়নি।

 অস্ত্র-বিস্ফোরকেরও সন্ধান মেলেনি।

সূত্রমতে, সীতাকুণ্ড পৌরসভার নামারবাজারে সাধন কুটির থেকে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গি দম্পতি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীতে তাদের আরও দুই-তিনটি আস্তানা আছে।  এই তথ্য পাবার পর চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা দ্রুত সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহারের সঙ্গে গিয়ে বৈঠক করেন।   বৈঠকে দ্রুত আকবর শাহ থানা এলাকায় অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।  

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আড়াইঘণ্টা বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ।  ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অভিযানে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) ফারুকুল হকের নেতৃত্বে সোয়াত টিম, বোমা নিস্ক্রিয়করণ ইউনিট, আকবর শাহ থানা ও রিজার্ভ ফোর্সসহ প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ অংশ নেয়।

তল্লাশি শেষে উপ পুলিশ কমিশনার ফারুকুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ৮ মার্চ থেকে আমাদের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলছে।   এই অভিযানের আওতায় আমরা কর্ণেলহাটে এবং উত্তর কাট্টলিতে অভিযান চালিয়েছি।   পুরো নগরীতে আমাদের জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার দূরে উত্তর কাট্টলি এলাকার ঈশান মহাজন সড়কে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ‍সামনে শ্রীশ সাহার পাঁচতলা বাড়ি।   তিনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক মহাব্যবস্থাপক।

পাঁচতলা বাড়ির চারতলা পর্যন্ত প্রতি ইউনিটে দুটি করে মোট আটটি ফ্ল্যাট আছে।   চিলেকোঠায় আছে আরেকটি ফ্ল্যাট।  অভিযান শুরুর পর সোয়াত টিমের সদস্যরা প্রত্যেক ফ্ল্যাটে গিয়ে তল্লাশি করেন।  

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আড়াইঘণ্টা বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ।  ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীশ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে আমি চার বছর আগে বাড়িটি করেছি।   আমার ভাড়াটিয়া যারা আছেন আমি তাদের সবাইকে চিনি।   আমার বাড়িতে রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা সমাজবিরোধী কোন কার্যকলাপ হয় না।  

ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া পিডিবির সাবেক কর্মকর্তা সুনীল কান্তি সেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সবার পরিচয়পত্র বাড়ির মালিকের হাতে জমা আছে।   এই বাড়িতে কখনও সন্দেহজনক কিছু আমি দেখিনি।

আকবর শাহ থানা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা দিলীপ দাশ বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশর অভিযানের খবর পেয়ে আমি এসেছি।   এই এলাকায় যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোন কর্মকান্ড হয় তাহলে আমরা সর্বতোভাবে পুলিশকে সহযোগিতা করব।

চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে আড়াইঘণ্টা বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ।  ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেনের মালিকানাধীন মমহ ভবন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। কর্ণেলহাট সিডিএ আবাসিক এলাকার   প্রভাতি শিক্ষা নিকেতনের পাশে চারতলা এই বাড়ি।   মমহ ভবনের আটটি ফ্ল্যাটেও গিয়ে তল্লাশি করেছে পুলিশ।

এর আগে দুপুরে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে দুই জঙ্গি তাদের আরও ২-৩টি হাইড আউটের কথা জানিয়েছে।   আকবর শাহ থানা এলাকায় একটি কিংবা একের অধিক আছে।  

আকবর শাহ থানা এলাকার আস্তানায় দ্রুত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তের কথা তখনই জানিয়েছিলেন ডিআইজি।

এর আগে ১৫ মার্চ দুপুরে সীতাকুণ্ড পৌরসভার লামারবাজার আমিরাবাদের সাধন কুটির থেকে এক নারীসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলেজ রোডের চৌধুরীপাড়ার প্রেমতলা এলাকার ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ।  বুধবার বিকেল তিনটা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ছায়ানীড় ভবনে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০ ঘণ্টার এ অভিযানে ২০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়।   এছাড়া চার জঙ্গিসহ পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।   অভিযানে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।

গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে পুলিশ হেফাজতে আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭

আরডিজি/টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।