ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাজস্ব ফাঁকি

ইলিয়াছের ৯ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৭
ইলিয়াছের ৯ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত

চট্টগ্রাম: বন্ড সুবিধায় আমদানি করা পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে একজন মালিকের নয়টি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্তৃপক্ষ।

এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক মো.ইলিয়াছ। অপরাধ প্রবণ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ২০২ ধারার বিধান প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত সোমবার ২০২ ধারা জারির ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। দেশের কোন বন্দর দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য খালাস হবে না।

ব্যাংক লেনদেনও বন্ধ হয়ে গেছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের কোন চালান যাতে খালাস না দেয় সেজন্য দেশের সব স্থল ও নৌ বন্দরের কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, সকল ইপিজেড, বেপজা, সকল লিয়েন ব্যাংককে অবহিত করা হয়েছে।

যে নয়টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে সেগুলো হলো- হাটহাজারী উপজেলার দক্ষিণ পাহাড়তলী মাহমুদাবাদ এলাকার মেসার্স এমআইপি বিডি লিমিটেড, মেসার্স এমি এক্সেসরিজ (বিডি) প্রাইভেট লিমিটেড, মেসার্স সানরাইজ এক্সেসরিজ লিমিটেড, মেসার্স চিটাগাং কার্টুনস লিমিটেড, হাটহাজারী ফতেয়াবাদ এলাকার মেসার্স লিবার্টি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, মেসার্স নিউ কার্টুন প্যাক, চান্দগাঁও বহদ্দারহাট এলাকার মেসার্স লিবার্টি এক্সেসরিজ (বিডি) লিমিটেড, মেসার্স ইমতি পলি প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি, নগরীর উত্তর পতেঙ্গা কেইপিজেডে অবস্থিত মেসার্স লিবার্টি পলি জোন বিডি লিমিটেড।

চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার মোহাম্মদ মুবিনুল কবির বাংলানিউজকে জানান, ইলিয়াছের মালিকানাধীন মেসার্স এমআইপি বিডি লিমিটেড বন্ড সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে ৯৯ টন পিপি (ফিল্ম) পণ্য আমদানি করে অবৈধভাবে অপসারণ করে। এতে প্রতিষ্ঠানটি ২৬ লাখ ২ হাজার ৭৮০ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়।

তিনি বলেন, জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়লে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় এবং কর্তৃপক্ষ অপরাধ স্বীকার করে সংক্ষিপ্ত বিচারাদেশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির আবেদন করে। পরে ২৬ লাখ রাজস্ব ফাঁকি ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে টাকা পরিশোধ করনি। ফলে ২০২ ধারা বিধান প্রয়োগের প্রথম নোটিশ জারি করা হয়।

এরমধ্যেও সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, দ্বিতীয় নোটিশ জারি করা হয়। এরই মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠান টাকা পরিশোধ না করে আপিলাত ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে। পরে আপিলাত ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন।  

আপিল মামলা খারিজ ও ২০২ ধারার দ্বিতীয় নোটিশ জারি সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি সরকারি রাজস্ব পরিশোধ করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ২০২(১) প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারি রাজস্ব সুরক্ষার স্বার্থে সরকারি পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট’র ছাড়পত্র ছাড়া এই প্রতিষ্ঠান বা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অথবা একই মালিকের মালামাল সমুদ্র ও বিমানবন্দর, অন্য কোন কাস্টমস স্টেশন দিয়ে খালাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মো.ইলিয়াছের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অপরাধপ্রবণ আখ্যায়িত করে বন্ড কমিশনার বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিলে সরকারি রাজস্ব আসবে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ভাল কাজ করবে তাদের সহযোগিতা করবো। আর যারা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো.ইলিয়াছ বাংলানিউজকে বলেন, উচ্চ আদালতে আপিলের ৯০ দিন সময় থাকে। কিন্তু কমিশনার ৯০ দিনের আগেই আমার প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

নিয়ম না মেনেই ২০২ ধারা জারি করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমি কমিশনারকে বলেছি কাস্টমস ডিউটি দিয়ে পণ্য খালাস নেব। বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করবো না। এরপরও তিনি আমাকে পণ্য খালাসের সুযোগ দেননি। আমি আগামী কাল (বৃহস্পতিবার) উকিল নোটিশ পাঠাব।

বন্ড লাইসেন্স ব্যবহার করে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করেননি দাবি করে তিনি বলেন, আমাকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। অন্যান্য কর্মকর্তারা আমাকে দেখতে পারে সেটাই আমার অপরাধ।

১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে করা ১৬টি মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন পাওনা নেই। যা পাবে তা নিয়ে মামলা আছে। মামলার রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৭

এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।