ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভুয়া পরিচয়পত্র দেখাতে গিয়েই ধরা খেল জঙ্গিরা

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৭
ভুয়া পরিচয়পত্র দেখাতে গিয়েই ধরা খেল জঙ্গিরা ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ছবি: উজ্জ্বল ধর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সীতাকুণ্ড থেকে: লামারবাজারের আমিরাবাদের সাধন কুটির ভবনের নিচতলার বাসাটি ১০-১২ দিন আগে ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা। ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণের জন্য তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি চান বাড়ির মালিক। কিন্তু ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে গিয়েই বাড়ির মালিকের কাছে ধরা খায় জঙ্গিরা। আর তারপর সোজা পুলিশের হেফাজতে।

বুধবার (১৫ মার্চ) সীতাকুণ্ড পৌরসভার লামারবাজার আমিরাবাদের সাধন কুটির থেকে দুই জঙ্গিকে আটকের পর এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন বাংলানিউজকে জানান, সাধন কুটির ভবনটির মালিক সুভাষ নামে এক ব্যক্তি।

বেশ কিছুদিন আগে তিনি জামালপুরে বেড়াতে যান। এর ফাঁকে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী এসে বাসা ভাড়া চাইলে সুভাষের স্ত্রী তাদের দ্বিতল ভবনটির নিচতলার বাসা  ভাড়া দেন।
মঙ্গলবার রাতে ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণের জন্য তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি চান সুভাষের স্ত্রী।   এ কথা শুনে রাতেই পুরুষদের দুইজন পালিয়ে যায়। ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ

বুধবার দুপুরে আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি চাইলে বাসায় থাকা এক নারী ও পুরুষ বাড়িওয়ালীকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন।   সুভাষদের পাশের বাসায় থাকেন সাগর নামে এক যুবক। তিনি কম্পিউটারের ব্যবসা করেন। সাগরের কাছে কাগজটি নিয়ে গেলে কম্পিউটারে চেক করার পর সেটি যে ভুয়া তা ধরা পড়ে।

সাথে সাথে নিচতলার বাসায় গিয়ে দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন সুভাষের স্ত্রী ও সাগর।   সুভাষের স্ত্রী এসময় বলেন, তোমরা তো ভুয়া কাগজ দিয়েছ।   তোমাদের তো সমস্যা আছে।   এর আগে ওই বাসায় বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামও দেখেছিলেন সুভাষের স্ত্রী।

এরপর জঙ্গিদের ধরতে গেলে নারী জঙ্গিটি সুভাষের স্ত্রীর হাতে কামড় দেয় ও পুরুষ জঙ্গির সঙ্গে ধস্তাধস্তির ফলে সাগরের শার্ট ছিঁড়ে যায়। শোরগোল শুনে আশপাশের মানুষ এসে জঙ্গিদের আটক করে ও পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে জঙ্গিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এসময় জঙ্গিরা জানায় তারা আগে কলেজ রোডের ছায়ানীড় ভবনে ভাড়া ছিল।   এরপরই ছায়ানীড় ভবনে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ

এদিকে ছায়ানীড় ভবনে অভিযানের ফলে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।   জঙ্গি আস্তানার ভেতরে আটকে পড়া নারী ও শিশুদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।   এছাড়া উৎসুক জনতাও ভিড় করছেন। তবে পুলিশ সবাইকে নিরাপদ দুরত্বে সরিয়ে দিয়ে পুরো বাড়িটি ঘিরে রেখছে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সীতাকুণ্ড পৌরসভার কাউন্সিলর শফিউল আলম মুরাদ বাংলানিউজকে জানান, এর আগে লামারবাজার থেকে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এখানে অভিযান চালানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বাংলানিউজকে বলেন, আস্তানার ভেতরে অস্ত্র-গুলি, হ্যান্ডগ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার ও জেলার রিজার্ভ টিম অভিযানে যোগ দিয়েছে।   সিএমপি থেকে বিস্ফোরক নিস্ক্রিয়করণ ইউনিট ও সোয়াত টিম ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। তারা গেলে মূল অভিযান শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানা, পুলিশের ওপর হাতবোমা নিক্ষেপ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।