অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি ঘটেছে গত ১০ ফেব্রুয়ারি নগরীর কোতয়ালি থানার রহমতগঞ্জে গুডস হিলের পাশে। ঘটনার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি তমালের বাবা বাবুল চন্দ্র দে বাদি হয়ে অ্যানি ও তার স্বামী সুমিত দাশ এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু মামলা দায়েরের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ আসামিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ দৃশ্যমান কোন উদ্যোগও নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বাবুল চন্দ্র দে।
চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র দে বাংলানিউজকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছি। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার ছেলে আর মৌমিতার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যাচাইবাছাই করা নিয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করছেন। আসামিদের নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর সব দিয়েছি। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করছেন না।
আসামিপক্ষ থেকে টাকা নিয়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না বলে ধারণার কথাও জানালেন বাবুল।
জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালি থানার এস আই প্রিয়তোষ দে বাংলানিউজকে বলেন, বাদি যে ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সেগুলো সঠিক নয়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। আমি তিনজন সোর্স লাগিয়ে রেখেছি। এই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আমি অন্য কোন মামলাও নিচ্ছি না।
তবে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রিয়তোষ নিজ থেকেই ঘটনার দায় তমালের উপরও কিছুটা দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রজাপতির ডানা নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তমালকে ডেকে নেয়া হয়েছিল। ফোনে কথা হয়নি। অ্যাকাউন্টটা কার, সেটাও জানত না। তাহলে তমাল সেখানে গেল কেন ?
‘বাদি খুবই আবেগপ্রবণ মানুষ। তিনি যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত, তিনি অনেক কিছুই বুঝতে চান না। কোন কথাও শুনতে চান না। আমি যেভাবে বুঝ দেয়া দরকার সেভাবে তাকে বুঝিয়ে বিদায় করি আর কি। ’ বলেন প্রিয়তোষ
অভিযুক্ত মৌমিতা দত্ত অ্যানি ও তার স্বামী সুমিত দত্ত উভয়ই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। স্নাতক পাস তমালের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মৌমিতা।
তমাল বাংলানিউজকে জানান, ২০১৫ সালে আত্মীয়তা হওয়ার পর মৌমিতা তাকে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এক বছর পর তমাল জানতে পারে, সে সুমিত নামে একজনের সঙ্গে ৫ বছর ধরে প্রেম করে আসছে।
বিষয়টি শোনার পর তমাল মৌমিতাকে একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মৌমিতা সুমিতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে এবং তাদের কোর্ট ম্যারেজ হয়েছে বলেও জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মৌমিতাকে চড় মারেন তমাল।
তখন মৌমিতা কান্না করে সুমিতকে বলে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় বলে জানান তমাল।
তমাল জানান, এই ঘটনার মাসখানেক পর প্রজাপতির ডানা নামে একটি আইডি থেকে বন্ধু হবার আমন্ত্রণ পান তিনি। নিয়মিত কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাকে ওই আইডি থেকে রহমতগঞ্জে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
‘আমি গুডস হিলের পাশে যাই। এসময় একজন যুবক আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার মুখে অ্যাসিড ছুঁড়ে দেয়। এসময় মনে হচ্ছিল আমার মুখে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আমি পানি পানি বলে চিৎকার করতে থাকি। ওই যুবকটা যাবার সময় বলল, অ্যানির সঙ্গে প্রেমের মজা বুঝ। ’ বলেন তমাল
তমালের ধারণা, ওই যুবকই মৌমিতার স্বামী সুমিত। মৌমিতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর পর সুমিত তাকে কয়েকবার ফোন করে হুমকি দিয়েছিল বলে দাবি তার।
এস আই প্রিয়তোষ দে বাংলানিউজকে বলেন, প্রজাপতির ডানা অ্যাকাউন্টটা যে মৌমিতা কিংবা তার স্বামী সুমিতের সেটার তো কোন প্রমাণ নেই। আগে সেটা তাদের কি না সেটা যাচাই বাছাই করে নিতে হবে। এজন্য আমি বিষয়টি বিটিআরসির কাছে পাঠিয়েছি।
তমালের বাবা জানান, তমালকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ঢাকার আগারগাঁওয়ে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। ডাক্তার তাকে জানিয়েছে, ব্যাটারির পানি জাতীয় অ্যাসিড ছুঁড়ে মারা হয়েছিল। কিন্তু চোখে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। একটি চোখ ফেলে দিতে হবে। ইনফেকশনে ওই চোখ থেকে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। আরেকটি চোখেও দৃষ্টিশক্তি নেই।
তমাল কান্নাজড়িত কন্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুই চোখেই এখন আর দেখতে পাই না। আমারা পুরো মুখে ব্যান্ডেজ। ভালভাবে কথা বলতে পারি না। আমার অপরাধটা কি ? আমার জীবনটা কেন নষ্ট করে দেয়া হল ?
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য মৌমিতার মোবাইলে ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
আরডিজি/টিসি