৪০ ফুটের ১২টি কন্টেইনারে করে আমদানি নিষিদ্ধ ফটোকপি মেশিন, উচ্চ শুল্কের বিদেশি সিগারেট, এলইডি টিভি ও মদ নিয়ে আসেন আমদানিকারক খোরশেদ আলম।
ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ঘোষণায় চীন থেকে আমদানি পণ্য চালান দুটি খালাসের দায়িত্বে ছিল সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান রাবেয়া অ্যান্ড সন্স।
জালিয়াতির মাধ্যমে আনা ১২টি কন্টেইনারে ১৬ হাজার ১৭০ বোতল মদ, ৩ কোটি ৮৪ লাখ শলাকা সিগারেট, ৪ হাজার ৭৪টি এলইডি টেলিভিশন ও ২৮১টি আমদানি নিষিদ্ধ ফটোকপি মেশিন রয়েছে বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড.মইনুল খান।
এসব পণ্যের বাজার মূল্য ১৩৪ কোটি টাকা জানিয়ে তিনি বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা সপ্তাহ ধরে চালান দুটির ১২ কন্টেইনারকে নজরদারিতে রাখে। এসব কন্টেইনারে আমদানি নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর পণ্য রয়েছেন এমন তথ্য আমাদের কাছে ছিল।
প্রথম চালানের ৬টি কন্টেইনার ৩ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে ল্যান্ড করে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি কন্টেইনার বহনকারী জাহাজটি বহির্নোঙরে আসে।
চট্টগ্রাম বন্দরে আটক ১২টি কন্টেইনারের মধ্যে রোববার ৬টি কন্টেইনার সংশ্লিষ্ট সংস্থার উপস্থিতিতে নামানো হয়। এসব কন্টেইনারে মিথ্যা ঘোষণা আনা এলইডি টিভি, সিগারেট ও মদ পাওয়া যায়।
৬টির মধ্যে রোববার চারটি কন্টেইনারের কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারে শুল্ক গোয়েন্দা। এরমধ্যে ইজি, বেনসন্স এন্ড হেজেজ, মন্ড, ৩০৩ ও ব্লাক ব্রান্ডের ২ কোটি শলাকা সিগারেট, সামসাং, সনি ও শার্প ব্রান্ডের ৯০, ৬৫, ৫৫, ৪৯, ৪৮, ৪০, ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি, ৬ বোতল রয়াল সেলুট, শিভাস রিগাল ১ হাজার ১৮৮ বোতল, ১০০ পাইপারস ৩ হাজার ৬০০ বোতল, ব্যালেন্টাইনস ৩ হাজার ৬০০ বোতল, ব্লাক লেবেল ১ হাজার ২০০ বোতল, টাকিলা সিলভার ৬০০, এবসলুট ভদকা ২ হাজার ৩৫২ বোতল, ৩ হাজার ৬২৪ পাসপোর্ট রয়েছে।
এসব পণ্যের বাজার মূল্য ৬৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৫৯৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ শুল্ককরসহ সিগারেটের বাজার মূল্য ৩৭ কোটি টাকা, ৯০ শতাংশ শুল্ককরসহ এলইডি টিভির মূল্য ১৫ কোটি টাকা, ৬০০ শতাংশ শুল্ককরসহ বিদেশি মদের মূল্য ১৭ কোটি টাকা।
সোমবার ৮টি কন্টেইনারের কায়িক পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ব্যানসন অ্যান্ড হেজেজ, ইজি, মন্ড, জো ব্লাক ব্রান্ডের ১ কোটি ৮৭ লাখ শলাকা সিগারেট পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ৩৭ কোটি টাকা। ৩০ কোটি টাকা মূল্যের সনি, স্যামসাং ও প্যানাসনিক ব্রান্ডের ২ হাজার ৯৮৫টি এলইডি টিভি, ২ কোটি ৭১ লাখ টাকার আমদানি নিষিদ্ধ ২৮১টি ফটোকপি মেশিন পাওয়া যায়।
মইনুল খান জানান, দ্বিতীয় চালানের ৬টি কন্টেইনার ১ মার্চ বহির্নোঙরে আসে। ৪ মার্চ এগুলো বন্দরে ল্যান্ড করে। কন্টেইনারগুলো ল্যান্ড করার আগেই সতর্কতামূলকভাবে আটক করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে জাহাজ দুটি সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাঙ হয়ে আসে।
তিনি জানান, কাস্টমসের কাছে শিপিং এজেন্ট’র আইজিএম এর তথ্য অনুযায়ী আমদানিকারক উভয় চালানের ক্ষেত্রে পোলট্রিফিডের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ হিসেবে ঘোষণা দেয় আমদানিকারক। চীনের জাম রাজ ইন্ডাস্ট্রিস থেকে হেনান আনহুই অ্যাগ্রো এলসি ও অ্যাগ্রো বিডি অ্যান্ড জিপির নামে আমদানি করা হয়। প্রথম চালানের ৬টি কন্টেইনার খালাসের জন্য আমদানিকারকের পক্ষে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিলএফএন্ট্রি(২৯১৪২১) দাখিল করে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান বাবেয়া অ্যান্ড সন্স। ৩১ হাজার ৪৬২ ইউএস ডলার মূল্যে এসব পণ্যের শুল্কায়নও সম্পন্ন করে ২ লাখ ৭ হাজার ৬৩০ টাকা পরিশোধ করা হয়।
পণ্য চালান দুটি আমদানি করতে আইএফআইসি ব্যাংকের ঢাকার মতিঝিল শাখা থেকে এলসি খোলা হয়।
প্রথম চালানের ৬ কন্টেইনার নিয়ে এমভি ভাসি সান জাহাজটি ২১ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর থেকে ছেড়ে আসে। বাকি ছয়টি এমভি সিনার সুভাং ২৩ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর ছেড়ে আসে।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের ডিজি বলেন, আমরা মনে করে একটি চক্র এই চোরাচালানের সাথে জড়িত। তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা নিজেই তদন্ত করবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে অপরাধের অভয়ারন্যে পরিণত করার যে কোন অপচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করবে শুল্ক গোয়েন্দা। একইসাথে ব্যাবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে জেরালো ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৭
এমইউ/টিসি