ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও ৪৮ জনের ‘ঘামে’ থানচিবাসীর স্বপ্নপূরণ

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৭
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও ৪৮ জনের ‘ঘামে’ থানচিবাসীর স্বপ্নপূরণ প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও ৪৮ জনের ‘ঘামে’ থানচিবাসীর স্বপ্নপূরণ

থানচি থেকে ফিরে: আরও আট-নয় বছর আগে সড়ক পথে থানচিযাত্রা ছিল স্বপ্নের ব্যাপার। সেই দুর্গমে এখন সড়ক পথে যাওয়া যায়। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর সেখানে গেল বিদ্যুৎ-ও।

বুধবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে থানচিবাসীর সেই স্বপ্নের ‘থানচি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিদ্যুৎ পাওয়ায় উচ্ছ্বাসিত চিমাহ মারমা নামের থানচির এক স্কুল শিক্ষার্থীর বক্তব্যও শুনেন।

তবে এই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ ছিল না। বান্দরবান থেকে থানচি-এই ৮০কিলোমিটারের সড়কটির প্রায় পুরোটা পথই পাহাড়ের উপর দিয়ে চলে গেছে।

এই সড়ক দিয়েই দুর্গম থানচি উপজেলায় গেছে বিদ্যুৎ।

২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ‘থানচি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে’র অনুমোদন দেয়। এর কিছুদিন পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ধাপে-ধাপে কাজ করার পর প্রায় ১৪ মাসের মাথায় ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। আরও কিছু কিছু ছোটখাটো স্থাপনকাজ বাকি থাকায় এর দুই মাসের মাথায় ২৪ আগস্ট থেকে বিদ্যুৎ পায় উপজেলার বাসিন্দারা। এ পর্যন্ত ৩০০ এর উপর অধিক সংযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ ও ৪৮ জনের ‘ঘামে’ থানচিবাসীর স্বপ্নপূরণ

পিডিবি সূত্র জানায়, বান্দরবান থেকে ওয়াই জংশন পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং ওয়াই জংশন থেকে চিম্বুক পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার পথ আগে থেকেই বিদ্যুতের আওতায় ছিল। থানচি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অধীনে চিম্বুক থেকে বলিপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ ৩৩ কেভি এবং বলিপাড়া থেকে থানচি বাজার পর্যন্ত প্রায় ২০কিলোমিটার পথ ১১ কেভি নতুন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এই ৬০ কিলোমিটার পথে মোট ১ হাজার ২৯৮টি খুঁটি স্থাপন করতে হয়েছে।

কিন্তু এই বিদ্যুতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন যে সহজ ছিল না তা একবার বান্দরবান থেকে থানচি সফর করলেই বুঝা যাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তাদেরও মুখে মুখে ছিল অসম্ভব সম্ভব করার কথা।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী উজ্জ্বল বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাহাড়ের আবহাওয়া অন্যরকম। গরমের সময় এখানে খুব গরম, বর্ষাকালে খুব বৃষ্টি। আর বান্দরবান-থানচি সড়কটির কোথাও কোথাও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯০০ ফুট উপরে। এই সড়কে কাজ করা ছিল অসামান্য ব্যাপার। এসব সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল  পানির সমস্যা। তাই কাজ চালিয়ে নিতে খুব বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। এতো কিছুর পরেও প্রকল্পটি ঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করে থানচিবাসীর মুখে হাসি আনতে পারায় আমরা খুব খুশি। ’

পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী ও থানচি বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়াদের একজন নুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাহাড়ের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ থানচি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াটা ছিল খুব কঠিন কাজ। আমি মনে করি সমতলের চেয়ে পাহাড়ে কাজ করা একশ ভাগ বেশি কঠিন কষ্ট। শ্রমিকরা একটানা কাজ করতে পারছিল না, তারা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। তাই এই এক বছরে তিনভাগে কাজ করে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হয়েছে। পিডিবির তিন কর্মকর্তার অধীনে প্রতি ভাগে ১৫ জন করে শ্রমিক কাজ করেছেন। সবমিলিয়ে তিনজন কর্মকর্তা ও ৪৫ জন শ্রমিকের কষ্টে বাস্তবায়িত হয়েছে এই প্রকল্প। ’১৯শ ফুট উপরে বিদ্যুতের খুঁটি

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থানচির মানুষরা। গত রোববার থানচি বাজারে কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘একসময় আমার উপজেলায় আসার সড়ক পথও ছিল না। নদীপথে আসতে অনেক সময় লেগে যেত। সেই উপজেলার মানুষের কাছে ১৯০০ ফুট উপর দিয়ে বিদ্যুৎ আসবে-সেটা ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা ভেবেছেন বলেই এটা আর কল্পনার নয়, বাস্তব। ’

শুধু জনপ্রতিনিধির মুখে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তা নয়। যাদের সঙ্গেই কথা হয়েছে সবার মুখেই ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার সুর।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, ০১ মার্চ, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।