ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কক্সবাজারে লালমুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্ত অনেকেই ‘ভুয়া’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
কক্সবাজারে লালমুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্ত অনেকেই ‘ভুয়া’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা

কক্সবাজার: কক্সবাজারে লালমুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্ত থাকা অনেকেই ‘ভুয়া’ মুক্তিযোদ্ধা বলে অভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এস এম নুরুল হক বীরপ্রতীক।

তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পূর্বে কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ ও সংগ্রামী নেতাকর্মীরা বার্মায় (মিয়ানমার) শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজার শহর পাক হানাদার বাহিনীর দখলে থাকায় এখানে কোন মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি।

  তাই কক্সবাজারে মুক্তিযোদ্ধা লালমুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্ত অনেকেই ‘ভুয়া’, যাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের নজির নেই।  

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা এসএম কামাল উদ্দিন বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে।  আর কিছু মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের ‘যুদ্ধাপরাধী নয়’ বলে ‘প্রত্যয়নপত্র’ দিচ্ছে। টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টা চলছে।  তবে এটি সম্ভব হবে না। চূড়ান্তভাবে তারা ঠেকে যাবে।  

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ভুয়াদের দাপটে আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রশাসনসহ সব জায়গায় তাদের প্রভাবের কারণে আমরা ঠাঁই পাই না। কক্সবাজারে মুক্তিযুদ্ধের সময় সোবহান গ্রুপ ছাড়া কারও কোনো অস্তিত্ব ছিল না।  

এদিকে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর ১০ জনকে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি করে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এস এম নুরুল হক বীরপ্রতীক।   ওই তালিকায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মো. শাহাজানের (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০৩০) নাম রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাচালে তার বাবা হাজী আরিফুর রহমান পাক হানাদার বাহিনীর একান্ত অনুগত ও কক্সবাজার সাব জেলে সিপাহী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি জেলের সাধারণ হাজতীদের মুক্তিযোদ্ধা অপবাদ দিয়ে নির্যাতন চালাতেন। শাহাজান মুক্তিযুদ্ধের সময় সরকারি বাসভবনে থেকে লেখাপড়া করেছেন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া শাহাজাহানের স্থানীয় ঠিকানা কুমিল্লার কসবা থানায়। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজ এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিধান থাকলেও তিনি কক্সবাজারের মুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্ত হন।

শাহজাহান ছাড়াও ‘ভুয়া’ তালিকায় রয়েছেন- কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়া এলাকার মৃত বদিউল আলমের ছেলে কামাল হোসেন চৌধুরী (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০৪৫), বাহারছড়া এলাকার মৃত মমতাজ আহমদের ছেলে আলতাফ হোসেন (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০৪৬), টেকপাড়ার মৃত আবদুল করিমের ছেলে নুরুল আবচার (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০৩১), মধ্যম নুনিয়ারছড়া এলাকার মৃত জালাল আহমদের ছেলে আবু তালেব (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০৩৩), কক্সবাজার সদরের জালালাবাদ এলাকার মৃত রাম চন্দ্র দাশের ছেলে মৃত সুনীল চন্দ্র দাশ (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০০৯), মৃত আমির হোসেনের ছেলে নুরুল হুদা (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০২১), ঈদগাঁও জাগিরপাড়ার মৃত নজীম উদ্দিনের ছেলে নুরুল আজিম (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০২৫), ঝিলংজা বড়ুয়াপাড়ার দিন্নাত বড়ুয়ার ছেলে কালাসু বড়ুয়া (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০১৮) এবং কক্সবাজার সদর থানা রোড এলাকার মৃত বগীরত বড়ুয়ার ছেলে ধর্ম দর্শন বড়ুয়া (মুক্তিবার্তা নং-০২১৩০১০০৩৬) ।  

জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা এস এম কামাল উদ্দিন বলেন, যারা জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের সঙ্গে ‘ভুয়া’ নাম দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। আশা করি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এ তালিকায় স্থান পাবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০১ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭

টিটি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।