ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কখনো কারও কাছে মাথা নোয়াইনি: সিদ্দিক আহমেদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
কখনো কারও কাছে মাথা নোয়াইনি: সিদ্দিক আহমেদ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মৃতি পরিষদের নেতারা সিদ্দিক আহমেদের হাতে স্মারক তুলে দেন

চট্টগ্রাম: ‘কখনো কারও কাছে কোথাও মাথা নোয়াইনি। আপস করিনি। জীবনকে আমি আমার মতো করে উপভোগ করেছি। যথেষ্ট বিত্তশালী পরিবারের সন্তান হয়েও অর্থ-বিত্ত আমার ছিল না ঠিকই চিত্ত দিয়েই আমি নিজেকে জয়ী করেছি সর্বত্র।’ কথাগুলো বলেছেন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক সিদ্দিক আহমেদ।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা, বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের ত্রয়োদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক ও অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মৃতি পরিষদের ‘মনীষী অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সম্মাননা স্মারক-২০১৬’ গ্রহণোত্তর প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

পরিষদের সভাপতি শিল্পপতি মুহাম্মদ ওসমান গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালির নেতৃত্বে পরিষদ নেতৃবৃন্দ তার চান্দগাঁওস্থ বাসায় গিয়ে সম্মাননা স্মারক এবং স্মারকের অর্থমূল্য ১৫ হাজার টাকা সিদ্দিক আহমেদের হাতে তুলে দেন।

সংক্ষিপ্ত অনাড়ম্বর আয়োজনে সিদ্দিক আহমেদ বলেন, প্রতিনিয়ত একজন সৎ মানুষ হিসেবে সর্বক্ষেত্রে নিজেকে নির্মাণের চেষ্টা করেছি। ফাঁকিবিহীন শিল্পিত জীবনযাপন করছি।

নিজেকে যেমন কখনো ফাঁকি দিইনি অন্যকেও কোনোদিন ফাঁকি দেওয়ার কথা মনে আসেনি।

আমার যা ছিল-যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থেকেছি। নেই বলে কোনো হা-পিত্যেশ কিংবা গ্লানি আমার কখনো ছিল না। আমি কারও কাছে কখনো হাত পাতিনি। আমার যতটুকু আছে ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থেকেছি। নিজের ছেলেমেয়েদের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছি।

১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, ’৬৬ সালে দক্ষিণ রাউজান ছাত্র ইউনিয়নের সেক্রেটারি, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অংশগ্রহণকারী, সাপ্তাহিক একতা’র শুরুর দিকে সাংবাদিকতা, ’৭০ সালে সংবাদে যুক্ত হয়ে খেলাঘরের সহ-সভাপতি, ১৩৫ টাকার সম্মানিতে খিলগাঁও স্কুলের শিক্ষকতা, ঢাকার কষ্টকর শিল্পিত জীবন, নিজ গ্রামের গশ্চি হাইস্কুলে শিক্ষকতা এবং রণেশ দাশগুপ্ত, সত্যেন সেন, বজলুর রহমান প্রমুখ কীর্তিমানদের সান্নিধ্যের গল্পসহ বহুমাত্রিক স্মৃতিচারণ করে এই জীবন্ত পণ্ডিত সিদ্দিক আহমেদ পরিষদ নেতৃবৃন্দকে মনীষী অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সম্মাননা প্রদান করায় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, কোনো না কোনোভাবে আপনারা আমাকে জেনেছেন, জেনে ভালোবেসেছেন-সম্মান জানিয়েছেন। এই সম্মাননা আমি আমৃত্যু মনে রাখব। আপনাদের মনে রাখব।

তিনি বলেন, আমি জীবনে কখনো ভেঙে পড়িনি। দূরারোগ্য ক্যানসারও আমাকে মানসিকভাবে পরাজিত করতে পারেনি। আমি অনেক বিখ্যাত হতে চাইনি। তবে যা হতে চেয়েছি তা হয়েছি। বিএ, এমএ ডিগ্রি না থাকার পরও আমার নয়টি বই বেরিয়েছে। এটি কম কথা নয়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তার হাত দিয়ে কমপক্ষে ৫০ জন লোক ভারতে ট্রেনিংয়ে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিনে মাস্টারি, রাতে দক্ষিণ রাউজান চষে বেড়িয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিকা রেখেছি। আমি মুক্তিযুদ্ধকে হৃদয়ে ধারণ করেছি। সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধা হতে চাইনি। অনেকেই আমাকে ফরম পূরণের জন্য বলেছেন। আমি করিনি। যেহেতু আমি ভারতে ট্রেনিংয়ে যাইনি, সেহেতু আবেদনপত্রে কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে সারাজীবনের সততাকে বিকিয়ে দিইনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের সাম্প্রতিক যাচাই-বাচাইয়ের প্রক্রিয়ার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে অনেক অ-মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে। আবার অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ছে। এটি জঘন্য।

মাইক্রোস্কোপ দিয়েও কোনো অসততার চিহ্ন তার জীবনে খুঁজে পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে অনেকটা অহংকার করেই জীবনযোদ্ধা সিদ্দিক আহমেদ বলেন, সব লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে আমি নির্মোহ জীবন-যাপন করেছি। আমি কোনো অর্থ চাইনি, বিত্ত চাইনি, বাড়ি চাইনি, গাড়ি চাইনি, টাকা চাইনি। চেয়েছিলাম শুধু নিজেকে যেন ফাঁকি না দেই।

অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, সবাই ভুলে গেলেও বাংলাদেশ তাকে ভুলতে পারবে না। অন্যতম সংবিধান প্রণেতা হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানে তার স্বাক্ষর রয়েছে। দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেককে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তিনি বলেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের জন্যই তিনি দৈনিক আজাদী করেছেন। নিজের ভাগ্নে এবং জামাতার মর্যাদা অনুযায়ী একটি কর্মক্ষেত্র তৈরি করে দিতে চেয়েছিলেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের সম্পাদনাগুণে দৈনিক আজাদী জনগণমননন্দিত পত্রিকা হয়েছে। আজাদী হয়েছে বলেই আমি সিদ্দিক আহমেদ আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।

পরিষদ সাধারণ সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি বলেন, ২০১৪ সালে বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও নাট্যবোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদকে, ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বর্ষিয়ান সাংবাদিক আতাউল হাকিমকে এবং চলতি বছর সিদ্দিক আহমেদকে ‘মনীষী অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ সম্মাননা স্মারক’ প্রদান করতে পেরে আমরা সম্মানিতবোধ করছি।

এসময় অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং দেশ টেলিভিশনের বিভাগীয় প্রতিনিধি সৈয়দ আলমগীর সবুজ, পরিষদের কার্যকরী সভাপতি শিল্পপতি ফেরদৌস খান আলমগীর, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মদ মহসীন চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তফা আনোয়ারুল ইসলাম এবং সিদ্দিক আহমেদের জ্যেষ্ঠপুত্র তানিম আহমেদ সিদ্দিক বুলবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ স্মরণায়োজনে অসুস্থতাজনিত কারণে সিদ্দিক আহমেদ উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাই পরিষদ নেতৃবৃন্দ বাসায় গিয়ে সম্মাননা স্মারক তার হাতে তুলে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।