ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আমি ঘুষ না খেলেই অফিস দুর্নীতিমুক্ত নয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
‘আমি ঘুষ না খেলেই অফিস দুর্নীতিমুক্ত নয়’  বক্তব্য রাখছেন দুদক মহাপরিচালক

চট্টগ্রাম: আমি ঘুষ না খেলেই আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত নয়। অভ্যন্তরীণভাবে নজরদারী বাড়ালে অফিসে দুর্নীতি প্রতিরোধ অনেকাংশে কমে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (গবেষণা, পরীক্ষণ, প্রতিরোধ ও গণসচেতনতা) ড. মো. শামসুল আরেফিন।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবাপ্রদান সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দুর্নীতিমুক্ত চট্টগ্রাম প্রতিষ্ঠায় সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে জানিয়ে দুদকের মহাপরিচালক ড. মো. শামসুল আরেফিন বলেন, এ দুর্নীতির কারণে আমরা প্রতিবছর ২ শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছি।

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র ও জনগণ। তা্ই দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করতেই হবে।
জনগণ যাতে কোনমতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জনগণের সুবিধা অনুযায়ী কর্মপ্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে এবং অফিসের কর্মযজ্ঞ জনগণের সুবিধা অনুযায়ী ঢেলে সাঁজাতে হবে। সেবা প্রত্যাশীদের আস্থার জায়গায় সরকারি অফিসগুলো এখনও প্রবেশ করতে পারছে না। এজন্য চিন্তা করতে হবে কিভাবে সন্তোষজনক সেবা প্রদান করা যায়।
 
ঘুষ, দুর্নীতি ঠেকাতে দুদককে অনুসন্ধান পর্যায়ে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকারি সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। কিন্তু বেতনের তুলনায় সেবারমান কতটা বেড়েছে সেটা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিবেচনা করতে হবে। অথচ তুলনামূলক কম বেতনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেবা প্রত্যাশীদের সন্তোষজনক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেবা প্রদানের জন্য যথাযথ ম্যাকানিজম (কর্মযজ্ঞ) তৈরি করতে হবে। ম্যাকানিজমের কারণে গ্রাহক সন্তুষ্ট হয় না। এজন্য চিন্তা করতে হবে কিভাবে সন্তোষজনক সেবা দেওয়া যায়। সেবা প্রত্যাশীদের জন্য আইন কোন বাঁধা নয়। জনগণকে দ্রুত সার্ভিস দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে, সেখানে আইন কখনো বাঁধা হবে না। একটু সজাগ হলে চট্টগ্রামকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব।
 
তিনি আরও বলেন, ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়, কোচিং, নোটবুক এসব সরকার চায় না। অনিয়ম ঠেকাতে অতন্দ্র প্রহরীর মত সোচ্চার হতে হবে। অভিভাবকেরা স্কুলে বাড়তি টাকা জোগাড় করতে গিয়ে আরেকটি দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। পাসপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ে যদি না দেন, গ্রাহকেরা তো বিরাট সমস্যায় পড়ে যাবে। পাসপোর্ট পেতে যে সমস্যাটা হচ্ছে, সেইটি আইন দেখবে। সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করাতে সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে যে ইচ্ছেমত ফি আদায় ও রিপোট নিয়ে যে অভিযোগ রয়েছে সেই বিষয়ে তদারকি বাড়াতে হবে।
 
সরকারি হাসপাতালগুলোতে রিপ্রেজেনটিভদের কারণে রোগীদের যে সমস্যা হচ্ছে সেই বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদারকি এবং ক্লিনিক মালিকদের সাথে বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্মাণ সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, খোলা কাগজে আর টেন্ডার চলবে না। আজকে থেকেই অনলাইনে কার্যক্রম চালু করতে হবে। ইফাইলিং, ই-প্রকিউরমেন্ট, সিটিজেন রিপোর্ট কার্ড ও গণশুনানীর উপর বিশেষভাবে জোর দিয়ে মনোভাব পরিবর্তন করে সরকারি সেবা আরও সহজ ও দুর্নীতিমুক্ত করারও পরামর্শ দেন তিনি।
 
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আবদুল জলিল, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) দৌলতুজ্জামান খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান, পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শাহ মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ, চট্টগ্রাম ওয়াসার সহকারী সচিব মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন, বিএসটিআই চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাক আহম্মেদ, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে আরা, পাউবো চট্টগ্রাম-১ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জহির উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহাব উদ্দিন আনসার ভিডিপির উপ পরিচালক মো. আমিন উদ্দিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
এসবি/টিসি

‘দুদকের ভেতরে যদি কোন দুর্নীতি থাকে সেটাও লিখুন’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।