ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্ধ স্টেশনের মূল্যবান মালামাল উধাও!

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭
বন্ধ স্টেশনের মূল্যবান মালামাল উধাও!

চট্টগ্রাম: দুই বছর আগেও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বন্ধ স্টেশনের সংখ্যা ছিল ৬০টি। তবে বর্তমানে এ সংখ্যা ৩৮। বন্ধ হওয়ার পরই স্টেশনের মূল্যাবান যন্ত্রপাতি উধাও হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি জেনেও নির্বিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট বিভাগেরই একটি চক্র কৌশলে মালামাল বিক্রি করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় অন্য কোন স্টেশনে লাগিয়ে দিচ্ছে। এতে রেলের লোকসান বাড়ছে।

অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি।  

স্টেশনের সংকেত ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ মালামাল বিক্রি করে দায় এড়াতে সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারকে অভিযুক্ত করে রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করার মতো ঘটনাও রয়েছে।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মিথ্যা মামলার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও বদলির সুপারিশ করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কোন স্টেশন বন্ধ হলে ওই স্টেশনের সিগনালিং সিস্টেমের মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিগনাল এন্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের। তবে স্টেশন মাস্টার যেহেতু দায়িত্বে থাকেন তাই মালামাল খুলে নিয়ে যাওয়ার সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টারকে অবহিত করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে অনেকগুলো বন্ধ স্টেশনের মালামাল খুলে আনা হলেও সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারকে অবহিত করা হয়নি।

সূত্র জানায়, ব্রিটিশ ইন্টারলগিং ও সিমেন্স ইন্টারলগিং পদ্ধতিতে ট্রেন পরিচালনা করা হয়। প্রত্যেক স্টেশনে ইন্টারলগিংয়ের মোটর, ব্যাটারি ও সার্কিট থাকে। এসব মালামাল খুবই মূ্ল্যবান। অথচ অনেক বন্ধ স্টেশন থেকে এসব মালামাল খুলে নেওয়া হয়েছে নিয়ম না মেনেই।

সূত্র জানায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সংকেত ও টেলিযোযোগ প্রকৌশলী চন্দন কান্তি দাসের অধীনে উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সংকেত, চট্টগ্রাম) শিবানন্দ চক্রবর্তী এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট-দোহাজারী থেকে ফেনী পর্যন্ত সব স্টেশনের সংকেত ও টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ এবং যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধ স্টেশন থেকে মোটর, ব্যাটারি ও সার্কিট খুলে নিতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ জারি করতে হয়। ওই আদেশ সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারকে প্রদর্শন করে তবেই মালামাল খুলে নিতে পারে। এরপর এসব মালামালের যোগ্যতা বিচার হয়। তারপর বিক্রি এবং সংরক্ষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অকেজো মালামাল সেল ডিপোতে হস্তান্তর করবে। সেখান থেকেই টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হবে। বাকিগুলো স্টোরে সংরক্ষণ করার কথা।  

অভিযোগ রয়েছে, এসব নিয়ম অনুসরণ না করেই চট্টগ্রাম বিভাগের বন্ধ স্টেশন থেকে মূল্যবান যন্ত্রপাতি খুলে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। এতে রেলওয়ে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হলেও কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন।

এসব অনিয়মের বিষয়ে বারবার অবহিত করা হলেও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌলশী চন্দন কান্তি দাস কোন ব্যবস্থা নেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে তিনি বাংলানিউজকে বলেছেন, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার সকল দায় শিবানন্দকেই নিতে হবে। কারণ এসব মালামাল রাখার দায়িত্ব তার।

অনিয়মের অভিযোগ থাকার পরও একই পদে ১২ বছর থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেবল এখানেই নয়, আরও বিভিন্ন জায়গায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরে আছে।

উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে?

২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে ভাটিয়ারি স্টেশন। ওই স্টেশন মাস্টার ও পয়েন্টসম্যান জাফর আলম কাজ করছেন অন্য স্টেশনে। অথচ স্টেশনের সিগন্যাল বিভাগের যন্ত্রাংশ চুরির অভিযোগ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জিআরপি থানায় মামলাও করা হয়।

উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সংকেত, চট্টগ্রাম) শিবানন্দ চক্রবর্তী বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বিষয়টি পরিবহন বিভাগের নজরে এলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মিয়া জাহান।

অভিযোগে তিনি বলেন, সংকেত বিভাগের সংশ্লিষ্ট মালামালের স্টকহোল্ডার একমাত্র এসএসএই, সংকেত/চট্টগ্রাম। তার অধীনে ভাটিয়ারিতে একজন এমএস ও একজন এমএস খালাসী পদায়িত আছে। তাদের তত্ত্বাবধানে মালামালগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তমান রয়েছে। অন্যদিকে চুরি যাওয়া মালামাল এসএসএই স্টেশন মাস্টারকে বুঝিয়ে দেননি।

‘নিজের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি আড়াল করে নিজের দোষ অন্যের উপর চাপানোর হীন উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। স্টেশন কক্ষের প্যানেল বোর্ড ছাড়া সিগন্যাল বিভাগের অন্যান্য কোন মালামালের দায় দায়িত্ব, ক্ষয়ক্ষতি স্টেশন মাস্টার বা পয়েন্টসম্যানের নয়। চুরি যাওয়া মালামাল সিগন্যাল সংক্রান্ত কাজে অন্য কোথাও ব্যবহার করা হয়েছে। ’

ওই চিঠিতে সিওপিএস আরও বলেন, ‘মামলায় অসত্য তথ্য পরিবেশন করে সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতি ও হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। অপরাধীকে গোপন করতেই মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে রেলের সম্পত্তি অপসারণ করতে জালিয়াতি করেছে। ’

ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শিবানন্দ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ঘটনা তদন্ত করে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও অন্যত্র বদলির ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। ব্যবস্থা না নিলে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে আদালতে মামলা করা হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে। এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনার পরও তার বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নেননি চন্দন কান্তি দাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ঘটনার পর সহকারী সংকেত প্রকৌশলী সম্ভু বড়ুয়াকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তবে একটি মহলের চাপে ওই কমিটি তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি। অন্যদিকে অবসরে গেছেন কমিটির আহ্বায়ক।

তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দন কান্তি দাস বিভাগীয় সিগন্যাল এন্ড টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা অথবা বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা ভাল বলতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭

এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad