ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাবুলের উপর সন্দেহ বাড়ছে মিতুর বাবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
বাবুলের উপর সন্দেহ বাড়ছে মিতুর বাবার বাবুল আক্তার ও মাহমুদা খানম মিতু

চট্টগ্রাম: বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের উপর সন্দেহ বাড়ছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন নৃশংস খুনের শিকার মাহমুদা খানম মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।  

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মোশাররফ, তার স্ত্রী সাহেদা এবং মেয়ে নিনজা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.কামরুজ্জামানকে জানিয়েছেন, বাবুল আক্তারের বোন লাবণী মিতুকে জানিয়েছিলো যে, বাবলু আক্তার বর্ণিকে বিয়ে করবে।  এতে তার (মিতুর) কোনো আপত্তি আছে কিনা।

 

‘মিতু একথা শোনার পর ফোনে তার মা ও বোনের সাথে খুব কান্নাকাটি করেছিলো।  যা মিতুর মা পরে তাকে বলেছে।

 মিতুর মা তখন মিতুকে বাবুল আক্তারের বোনের সাথে কথা বলতে নিষেধ করে। ’

টেলিফোনে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আইও সাহেব জানতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর আগে সর্বশেষ কোন কাহিনী ছিল কি না।   নিনজা ও তার মা বলেছে, লাবণী মিতুকে চাপ দিত যে বাবুলকে বর্ণিকে বিয়ে করাবে।  এখন তো বাবুলের সঙ্গে বর্ণির বিয়ের জন্য মিতুকে মরতে হল কি না এটা সন্দেহ হচ্ছে।  আইও চাইলে লাবণীকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।

‘মোট কথা হচ্ছে, বাবুল এবং তার পরিবারের সদস্যদের আচরণে তাদের উপর আমাদের সন্দেহ দিন দিন বাড়ছে।   এটা আমরা পরিস্কারভাবে আইওকে বলেছি। ’

তিনি বলেন, মিতু মারা যাবার পর তার মা বাবুল আক্তারের বোন লাবণীকে এটা জিজ্ঞেস করেছিল।  সে বলেছিল, আসলে আমি তো এভাবে বলিনি।  তখন আমরা জানতাম না, এই বর্ণি বাবুল আক্তারদের ‍বাসায় ভাড়া থাকত।    

‘লাবণীর স্বামীকেও জিজ্ঞাসা করেছি ওদের বাসায় বসে। আমি বলেছি তুমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার, তোমার বৌ আরেকজনের সংসারে কেন ঝামেলা লাগাচ্ছে। বাবুল আক্তারকে বিয়ের জন্য মেয়ে ঠিক করছে, এসব আমি বলেছি। অনুমানের উপর কিছু বলেছিলাম, এখন দেখছি এটাই বাস্তব। ’

ঝিনাইদহের এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী বর্ণির সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। নিহত এসআই আকরাম হোসেনের পরিবারের অভিযোগ, বাবুলের পরিকল্পনায় ২০১৫ সালে তাকে হত‌্যার পর ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে সাজানো হয়েছিল।

মিতুর বাবা মোশাররফ বলেন, বাবুল আক্তারের বাবাকে তার ফ্ল্যাটের মালিক বলেছে যে আপনার ছেলে যদি চট্টগ্রাম থেকে বদলি হয়ে চলে যায়, তাহলে তার পরিবারের উপর আক্রমণ করবে। এরকম আমাদের কাছে সন্দেহ হচ্ছে।   বাবুল আক্তারের বাবা একথা আমার কাছে স্বীকার করছে।   তাহলে বাবুল আক্তার তো একজন এসপি ছিল, তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সে কী করেছিল।

‘ছেলে মাহিরকে কেন আইডিয়াল স্কুলে ভর্তি করে আবার নিয়ে গেল।   সে চাকরি ছাড়ল কেন।   চাকরি ছাড়ার জন্য কোন চাপ থাকলে সেটা সে সরাসরি বলছে না কেন ? কারা হত্যা করেছে এটা নিয়ে সে সংবাদ সম্মেলন করছে না কেন ? তার আচরণেই তো সন্দেহ বাড়ছে। ’ বলেন মোশাররফ

জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, উনারা কিছু সন্দেহের কথা বলেছেন।   দেখা যাক কী হয়।

এর আগে রোববার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ঢাকার রামপুরার মেরাদিয়ায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফের বাসায় পৌঁছেন তদন্ত কর্মকর্তা।   মিতু খুনের পর তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে দীর্ঘদিন এই বাসায় ছিলেন।  

তদন্তকারী কর্মকর্তা মিতুর বাবা-মা ও বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।  

এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর মোশাররফ এবং ২৬ জানুয়ারি মোশাররফ ও তার স্ত্রী সাহেদা মোশাররফকে নিজ কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

 

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারও সিএমপিতে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন।   স্ত্রী খুনের মামলার বাদি হিসেবে ওইদিন বাবুল আক্তার সিএমপিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কার্যালয়ে হাজির হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।

বাবুল আক্তারের মা-বাবা এবং দুই খালাতো ভাইকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।  

গত বছরের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন সদর দপ্তরে কর্মরত তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম ‍মিতু।   এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।