ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘একুশের মা’ হতে চান অনেকেই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
‘একুশের মা’ হতে চান অনেকেই ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক ‘একুশ’

চট্টগ্রাম: জন্ম দিয়ে নিজের মা ডাস্টবিনে ফেলে চলে গেলেও ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক ‘একুশের’ মা হতে আগ্রহের কমতি নেই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের।  চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও একুশকে সন্তান হিসেবে পাওয়ার জন্য ছুটছেন আদালতে।  এদের মধ্যে নি:সন্তান দম্পতি যেমন আছেন, তেমনি আছেন সন্তানের মা-বাবাও।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) একদিনে ছয়টি আবেদন জমা পড়েছে চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও শিশু বিষয়ক বিশেষ আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছে।  

আদালত সব আবেদন নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

একুশ সুস্থ হওয়ার পর বিশেষ শুনানির মাধ্যমে আবেদনগুলো আদালত নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সাধারণ নিবন্ধন শাখার এএসআই মনির আহমেদ।

আদালতে যাদের আবেদন জমা পড়েছে তারা হলেন অ্যাডভোকেট চুমকি চৌধুরী, ব্যবসায়ী মো.শহীদুল্লাহ, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) কর্মকর্তা  মোহাম্মদ উল্লাহ, সাধারণ গৃহিণী জেসমিন আক্তার, অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের জুনিয়র সহকারী শিক্ষিকা লুবনা ইয়াসমিন এবং ডা.জাকের ইসলাম ও শাকিলা আক্তার দম্পতি।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট এম এ ফয়েজ বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি চুমকি চৌধুরী আমাদের বারের আইনজীবী।   তার মেয়ে আছে কিন্তু ছেলে নেই।   ছেলে হিসেবে তিনি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করা শিশুটিকে লালনপালন করতে চান। একজন নি:সন্তান চিকিৎসকও আবেদন করেছেন।   আবেদনের সঙ্গে তিনি তার বিএমএ সনদও জমা দিয়েছেন।

‘ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়া পাওয়া একটি শিশুর জন্য এই ভালবাসা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।   আদালত বলেছেন, শিশুটি আগে সুস্থ হয়ে উঠুক।   হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ যখন প্রতিবেদন দিয়ে বলবে যে শিশুটি সুস্থ তখন শুনানি হবে। ’ বলেন ফয়েজ

গত ২০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাত ১২টার দিকে নগরীর কর্ণেলহাট এলাকার লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংলগ্ন ড্রেনে নবজাতকটিকে পড়ে থাকতে দেখেন কয়েকজন যুবক।  তাদের মধ্যে নগর ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন টিটু ও এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী মোমিন শাহসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন।   তারা আকবর শাহ থানার সেকেন্ড অফিসারকে ফোন করে বিষয়টি জানান।

আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে টহলরত পুলিশকে নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন।  পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওই নবজাতককে প্রথমে নগরীর এ কে খান এলাকার আল আমিন হাসপাতাল এবং এরপর নগরীর আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ওই হাসপাতালে ইনকিউবেটর খালি না থাকায় শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩২ নাম্বার ওয়ার্ডে।  শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (ইনকিউবেটর) রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুলিশ।   সঙ্গে থেকে পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারক করেন ওসি আলমগীর মাহমুদ।

এরপর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে নবজাতককে উদ্ধার করা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেন আকবর শাহ থানার ওসি।  চট্টগ্রামের প্রথম মহানগর হাকিম এস এম মাসুদ পারভেজ নবজাতকের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চমেক হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন। আর নবজাতককে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আকবর শাহ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

একুশের রাতে উদ্ধার হওয়ায় সেই নবজাতকের নাম ‘একুশ’ রেখেছেন আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ।  

হাসপাতালে শিউলি দত্ত ও সুচিতা বড়ুয়া নামে দুই প্রসূতি শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন।   শিশুটির অবস্থা এখন ভালর দিকে বলে জানিয়েছেন ওসি আলমগীর মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।