শনিবার সকাল ১০টায় শুরু হবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। দুটি প্যানেলে ৩৪ প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণের এই ভোটগ্রহণ চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
এবার কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দুই প্যানেলেই রয়েছে হেভিওয়েট প্রার্থী। প্যানেল সাজানো হয়েছে তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে। দুই প্যানেলই শক্তিশালী হওয়ায় সম্ভাব্য জয়ী হিসেবে কাউকেই এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
ভোটারদের মতে, এবারের লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। তবে ব্যবধান গড়ে দিবেন তরুণ আইনজীবীরা। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রার্থীরাও যে যার মতো কৌশলে নবীন ভোটাদের টানতে ব্যস্ত।
তরুণ আইনজীবী মোবারক হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, চেহারা বা প্যানেল বিবেচনায় নয়, দক্ষতা-যোগ্যতা বিবেচনা করে আইনজীবীরা ভোট দেবেন। এবারের নির্বাচনে দুই প্যানেলই শক্তিশালী প্রার্থী মনোনীত করায় কাউকে হেলা করা যাচ্ছে না। প্রচারণাও চলছে অনেকটা সমানতালে।
আইনজীবীরা মনে করেন, কর্মদক্ষ, সাহসী, জুনিয়র আইনজীবীদের চেম্বার সংকট নিরসনে নতুন ভবন নির্মাণে, জমির লিজ সম্পাদন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত পাঁচ কোটি টাকা আনয়ন, বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, বার ও বেঞ্চের মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক সমুন্নত রেখে বিচারপ্রার্থী অসহায় জনসাধারণের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পরীক্ষিত আইনজীবীদের নির্বাচিত করা দরকার।
আইনজীবি সমিতি সূত্র জানায়, সভাপতি পদে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সভাপতি প্রার্থী এড. মোহাম্মদ ইসহাক খুবই সহজ সরল ও উদার মনের মানুষ। তিনি বর্তমান সরকারের জিপি। আইন পেশায় ব্যক্তিগতভাবে কারও কোন ক্ষতি করেননি। পারলে উপকার করেছেন। ব্যক্তিগত ইমেজও রয়েছে তার। গতবারের নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়ায়ে তিনি যৌথভাবে সভাপতি হন। এবারও তাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপরদিকে বিএনপি ঘরনা থেকে সভাপতি প্রার্থী এস এম নুরুল ইসলাম নম্র ভদ্র ও সজ্জন লোক হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ৬৫২ জন ভোটারের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার ভোটার বেশি। নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া আইনজীবীদের মাঝেও বেশিরভাগ তাদের ভোট। তাছাড়া গতবারের নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি থাকলেও এবার তাদের মাঝে চমৎকার বোঝাপড়া হয়েছে। গুনে গুনে সব ভোট নিজেদের বাক্সে ফেলার কৌশল করছেন নেতারা। সে হিসেবে সভাপতি পদে এস এম নুরুল ইসলামের জয়ের সম্ভাবনা বেশি দেখছেন ভোটাররা।
ভোটারদের বিশ্লেষণে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী সব শ্রেণির আইনজীবীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তিনি প্রবীণ আইনজীবী হলেও নবীনদের সাথে তার সম্পর্কটা অতুলনীয়। ১৯৯৬ সাল থেকে অদ্যবধি তিনি জনপ্রিয় একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। পেশাগত জীবনে জুনিয়ার-সিনিয়র সমন্বয় করে চলেছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জিয়া উদ্দিন আহমদ ভোটের হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারেন বলে ধারণা ভোটারদের। তার বাবা অধ্যাপক নুর আহমদ এডভোকেট আদালত অঙ্গনের পরিচিত ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। বাবার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের মাঝে সুন্দর অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। তরুণ আইনজীবীদের একটা অংশ জিয়া উদ্দিন আহমদের জন্য কোমর বেঁধে কাজ করছেন। নিজেও রাত দিন প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে চেষ্টা করছেন তিনি।
জিয়া উদ্দিন আহমদ ২০০২ সাল থেকে আইন পেশায় জড়িত। তিনি ২০১২ সালে আইনজীবী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে আপ্যায়ন ও সদস্য ছিলেন। পেশাগত জীবনে তিনি অনেকটা ক্লিন ইমেজের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে সব হিসেব পাল্টাবে ভোটাররা- এমনটি ধারণা বিশ্লেষকদের।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মোহাম্মদ ইছহাক-১ এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিয়া উদ্দিন আহমদ লড়ছেন। সহ-সভাপতি পদে নুরুল আমিন ও মোহাম্মদ জাকারিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) আবদুল শুক্কুর, সহ-সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) রাহামত উল্লাহ, পাঠাগার সম্পাদক আবুল হোছেন এবং আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এ বি এম মহিউদ্দীন লড়ছেন।
এই প্যানেলের সদস্য পদের প্রার্থীরা হলেন পীযুষ কান্তি চৌধুরী, আমজাদ হোসেন, আবুল কাশেম-২, মাহবুবুর রহমান, মোহাম্মদ নুরুল আজিম, খাইরুল আমিন, সোমেন দেব, সিরাজুল হক চৌধুরী ও লিপিকা দাশ।
অপরদিকে বিএনপি জামায়াত ঘরনার প্যানেল থেকে নির্বাচনী প্যানেলে সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ ছাদেক উল্লাহ, সহ-সভাপতি এড. রমিজ আহামদ, সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) মোহামদ রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) এড. মোহামদ এনামুল হক সিকদার, পাঠাগার সম্পাদক মোহাম্মদ এড.শামিমুল ইসলাম, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এড. ছৈয়দ আলম, নির্বাহী সদস্য এড. আবুল কালাম ছিদ্দিকী, এড. মোহাম্মদ আবুল আলা, এড. সব্বির আহামদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
টিটি/আইএসএ/টিসি