একইসঙ্গে দুর্ঘটনার জন্য দেয়া রায়টি ভবিষ্যতের সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য একটি দৃষ্টান্ত হতে পারত বলে মনে করেন এই গুণীজন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় তার মনে সেভাবে আশা জাগাতে পারেনি বলে তিনি মনে করেন।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে রায় ঘোষণার এই দিনে তিনি তারেক মাসুদকে খুব মিস করছেন বলে জানিয়েছেন। আবেগাপ্লুত কন্ঠে তিনি বলেছেন, তারেককে মিস করি সত্যি সত্যি।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রায় ঘোষণার পর নিজ কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন ঢালী আল মামুন।
‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। কোন মৃত্যুর বিনিময়ে মৃত্যু আমার কাছে কাম্য নয়। সে আমাকে মেরেছে, আমি তাকে মারব এটা আমি কামনা করতে পারি না। তবে আইনের বিচারে প্রণিধানযোগ্য একটি রায় হওয়া উচিৎ ছিল। কিংবা নির্দেশনা আসা উচিৎ ছিল। যেটি আমাদের রাষ্ট্রের সড়ক ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করার দিকে নিয়ে যেতে পারত। সেক্ষেত্রে আক্ষেপের জায়গাটি থেকেই গেল। ’
বক্তব্যটি আরও স্পষ্ট করেন তিনি, প্রত্যাশা অনুযায়ী রায়টি বিবেচনা করতে পারছি না। আমি মৃত্যুর প্রতি খুবই সংবেদনশীল। কোন মৃত্যুই আমার কাছে সহনশীল না। কিন্তু ব্যবস্থাপনার দিক থেকে আমি মনে করি জিনিসটি প্রণিধানযোগ্য হওয়া উচিৎ ছিল।
‘দুর্ঘটনার পর, তখন যে মন্ত্রী ছিল তিনি বলেছিলেন গরু-ছাগল চিনলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যায়। উনার মত লোক যদি এটা বলেন, দু:খজনক আসলে। ’
২০১১ সালের ১৩ অগাস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাইক্রোবাস আরোহী তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বাসচালক জামিরকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় বেপরোয়া চালনার কারণে অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য (পরিকল্পিত নরহত্যা নয়) দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর।
রায় ঘোষণার পর আবেগাপ্লুত কন্ঠে স্মৃতিচারণ করে ঢালী আল মামুন বলেন, ৮০ সালের আগে থেকেই তারেক মাসুদদের সাথে আমার সম্পর্ক। সে যখন আদম সুরত করে তখন থেকেই সম্পর্ক। তারপর একসময় অনেক সময় কাটিয়েছি। তারেককে মিস করি সত্যি সত্যি। ও ম্যাচিউড হয়ে উঠছিল সবেমাত্র। বেঁচে থাকলে হয়ত আরও ভাল ভাল কাজ করত। সে শুধু নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই ভাবত না।
‘তারেকের নির্মিত মুক্তির গান কিন্তু নতুন করে বাংলাদেশের ইতিহাসকে আলোকপাত করেছে। সংস্কৃতির ইতিহাস নিয়ে এর আগে তো কেউ মুক্তিযুদ্ধের ছবি বানায়নি। সবাই তো ছবি বানিয়েছে, বন্দুক নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দৌড়াচ্ছে। এই প্রথম সংস্কৃতি নিয়ে একটি ছবি হয়েছিল। ’ বলেন ঢালী আল মামুন
তিনি বলেন, তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীররা নিজেরাই নিজেদের তৈরি করেছেন। এটি তো জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, এটি তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তারেক-মিশুক যা করতে পারত, সেটি কি আর এখন হচ্ছে ? এখন তো হচ্ছে না। হয়ত অন্য কিছু হচ্ছে। এই অভাববোধ তো আমাদের থেকেই যাবে।
সড়ক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন এই শিক্ষক।
‘রাস্তা বা রাজপথ গাড়ি চালানোর জন্য, হাঁটাচলার জন্য কিছু নিয়মশৃঙ্খলা থাকে। যদি গাড়ির ফিটনেস না থাকে, সেই গাড়ি কিভাবে রাস্তায় থাকে। যদি ড্রাইভারের লাইসেন্স না থাকে, তিনি কিভাবে গাড়ি চালাতে পারেন। এই ব্যবস্থাপনার উন্নতি হওয়া খুব জরুরি। কারণ যে জীবন হারায়, তার প্রিয়জনরাই বুঝতে পারে যে এর মর্মবেদনা কি। ’
সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মানিকগঞ্জের আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ঢালী আল মামুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
আরডিজি/টিসি