ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শহীদ বেদিতে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের’ মারামারি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
শহীদ বেদিতে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের’ মারামারি শহীদ বেদিতে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের’ মারামারি (ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

চট্টগ্রাম: একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে ফুল দেয়ার সময় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হয়েছে।  ফুল দিতে মূল শহীদ বেদিতে মারামারি, হাতাহাতিতে জড়িয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ নামে একটি সংগঠন। 

এছাড়া জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠে এবং মোবাইলে সেলফি তোলার কারণে শহীদ মিনারে  ভাবগম্ভীর পরিবেশের বদলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।   কারও মুখে শোনা যায়নি অমর একুশের সেই কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’।

রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তো ছিলেনই, খোদ মুক্তিযোদ্ধারাও নেমেছিলেন ফুল দেয়া নিয়ে ধাক্কাধাক্কি আর প্রতিযোগিতায়।   এছাড়া প্রতিবছর যে নিয়মে ফুল দেয়া হয়, এবার রাজনৈতিক নেতারা সেই নিয়মও মানেননি।

জুতা পায়ে শহীদ বেদিতে (ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম) 

রাত ১২টা ১ মিনিটে ফুল দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে প্রতিমন্ত্রী এবং মেয়র ফুল দেন।   এরপর প্রতিবছর বিভাগীয় কমিশনার ফুল দেন।   এবার বিভাগীয় কমিশনারকে পেছনে ফেলে ফুল নিয়ে শহীদ বেদিতে উঠে যান সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।   তার সঙ্গে সিডিএ কর্মকর্তারা ছাড়াও ছিলেন একদল নেতাকর্মী।

বিভাগীয় কমিশনারকে পেছনে রেখেই মেয়র এবং সিডিএ চেয়ারম্যান মিলে নগর আওয়ামী লীগের ফুল দেন।   এর মাঝে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ফুল নিয়ে ৪-৫ জন নেতাকর্মীও শহীদ বেদিতে উঠে যান।   পুরো সময় সরকারী কর্মকর্তা শহীদ মিনারের সিঁড়িতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকেন। ফুল দিতে গিয়ে তুলছেন সেলফি (ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)  

এসময় শহীদ মিনারে কর্মসূচির সঞ্চালক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীও অসহায় বোধ করেন।   বারবার শৃঙ্খলা মেনে ফুল দেয়ার তাগাদা দিয়েও তিনি ব্যর্থ হন।  

সরকারী কর্মকর্তাদের পুস্পস্তবক অর্পণের পালা শুরু হলে পেছন থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন মুক্তিযোদ্ধারা।   তারা তাদের আগে ফুল দিতে দেয়ার দাবি জানাতে থাকে।   এসময় ইফতেখার সাইমুল তাদের শান্ত হতে অনুরোধ করেন।  

একই সময়ে শহীদ মিনারে প্রবেশের মূল ফটকের বাইরে হাতাহাতিতে জড়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।   তারা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পেছনে ছিল।  

সরকারী প্রতিষ্ঠানের ফুল দেয়ার শেষ পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা সন্তান কমান্ডকে নিয়ে হুড়োহুড়ি করে উঠে যান শহীদ বেদিতে।   এসময় কাস্টমস এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও তাদের আগে ফুল নিয়ে উঠে যাবার চেষ্টা করেন।   তখন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মিলে কাস্টমস ও ফায়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ধাক্কা দেন এবং মূল বেদিতে উঠে যান। শহীদ বেদিতে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের’ মারামারি (ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম) 

সেখানে উঠার পরই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের দুই পক্ষ মারামারি শুরু করে।   প্রায় ১০ মিনিট ধরে মারামারির সময় তারা একে অপরকে কিল, ঘুষি দিতে দিতে শহীদ বেদি থেকে নিচে ফেলে দিতে থাকে।   আবার নিচ থেকে আরেকপক্ষ উঠে প্রতিপক্ষকে কিল, ঘুষি দিতে থাকে।  এসময় তারা শহীদ বেদিতে রাখা ফুল এলোপাতাড়ি ছুঁড়তে থাকে।   অশ্রাব্য ভাষায় ‘পাভেল ও ফারুক’ নাম ধরে একে অপরকে গালিগালাজ করতেও শোনা যায়।  

মারামারির সময় ফুল দিতে না পেরে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।   বিরক্তি প্রকাশ করেন জেলা সংসদের কমান্ডার মো.সাহাবউদ্দিনও।

পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে মারামারিতে জড়িত তরুণ-যুবকদের শহীদ বেদি থেকে নামিয়ে দেয়।   শহীদ বেদি থেকে নামার পর রাস্তায় গিয়ে তারা আবারও মুখোমুখি হয়।   এসময় খোদ সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার এসে তাদের পুলিশ বেস্টনির বাইরে বের করে দেন। শহীদ বেদিতে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের’ মারামারি (ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

জানতে চাইলে শহীদ মিনারে দায়িত্বরত নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বাংলানিউজকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠনের ছেলেদের মধ্যে ফুল দেয়া নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।   সামান্য বিশৃঙ্খলার পর আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি।

কর্মসূচির সঞ্চালক নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আশির দশক কিংবা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝির পর যেসব প্রজন্ম গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে আমরা একুশ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা জাগ্রত করতে পারিনি।   এটা আমাদের ব্যর্থতা।  

‘এজন্যই তারা একুশে ফেব্রুয়ারিতে এসে হাসিমুখে সেলফি তুলে, আবার মারামারিতেও জড়ায়।  অথচ ভোরে নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরী করে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া এটাই একুশের মূল কর্মসূচি।  আজকের প্রজন্ম ভুলেই গেছে বোধহয় প্রভাতফেরী কি। ’ বলেন ইফতেখার সাইমুল

বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।