এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভির স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী। তিনি বাঁশখালীর বাসিন্দা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মোমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর চকাবাজারে আনিকা কমিউনিটি সেন্টারে মহিলা লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বেগম সাফিয়া খাতুন।
সভাপতি চেমন আরা তৈয়ব দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত সংসদের সংরক্ষিত নারী সাংসদও ছিলেন চেমন আরা। গত কমিটির সভাপতি বেগম হাসিনা মান্নান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে থাকায় এবার মহিলা লীগ থেকে বিদায় নিয়েছেন।
সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা প্রয়াত আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে।
সভাপতি পদপ্রত্যাশী শাহিদা আক্তার জাহান সাতকানিয়া থেকে জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। স্কুল শিক্ষকতা ছেড়ে মহিলা লীগে আসা এই নেত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেন।
শাহিদা আক্তারকে জ্ঞান হারানোর পর চকবাজারে সার্জিস্কোপ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের সুজন।
চেমন আরা তৈয়ব দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিনের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। শাহিদাও মোছলেম উদ্দিনের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। শামীমা হারুন লুবনা মোছলেম উদ্দিনের সমর্থনপুষ্ট।
চেমন আরা তৈয়বের কাছে কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, কমিটি ঘোষণার আগে আমি সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। আমার কাজ ছিল। শুনেছি আমাকে সভাপতি এবং শামীমা হারুন লুবনাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
সম্মেলনস্থলে উপস্থিত আব্দুল কাদের সুজন বাংলানিউজকে বলেন, চেমন আরা তৈয়বকে সভাপতি এবং শামীমা হারুন লুবনাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সহ সভাপতি করা হয়েছে শাহিদা আক্তার জাহান এবং সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানকে। খালেদা আক্তারসহ দুজনকে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। রিজিয়া রেজা চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্র থেকে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।
কাউন্সিলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে সভাপতি বেগম হাসিনা মান্নান বক্তব্য দেয়ার সময় থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়।
সত্তরোর্ধ হাসিনা মান্নান বক্তব্য দিতে উঠে বলেন, শুরু থেকেই আমি খেয়াল করছি আমার সঙ্গে বেয়াদবি করা হচ্ছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি নেয়ার সময়ও আমাকে অনেক কিছুই জানানো হয়নি। আমাকে অন্ধকারে রেখে সম্মেলন করা হচ্ছে। আমি সভাপতি ছিলাম। কিন্তু আমার বয়স হয়ে গেছে। এজন্য কোন থানায় কমিটি করতে পারিনি। অথচ এখন থানা কমিটি দেখিয়ে অনেককে কাউন্সিলর করা হয়েছে।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি সভাপতি। অথচ আমাকে ছাড়াই দলীয় পতাকা এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। শেষ বয়সে এসে আমাকে এই অপমান করা হল কেন ? আমি ধিক্কার জানাই।
সভাপতির বক্তব্যের পর চেমন আরা তৈয়ব মাইক নিয়ে বলেন, পুরো সম্মেলনের আয়োজন আমাকে একাই করতে হয়েছে। এত কাজ করতে গিয়ে আমার কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার কোন পদ লাগবে না। আমি শেখ হাসিনার কর্মী হয়েই থাকতে চাই।
বক্তব্য দিয়েই সম্মেলনস্থল ছেড়ে চলে যান চেমন আরা তৈয়ব। এসময় কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে সেখানে থাকার জন্য অনুরোধ করলেও তিনি শোনেননি। শুরু হয় হইচই-হট্টগোল।
হট্টগোলের মধ্যেই বেগম সাফিয়া খাতুন মাইকে সভাপতি হিসেবে চেমন আরার নাম ঘোষণা করলে শাহিদা প্রতিবাদ করেন। এসময় এক পক্ষ চেমন আরা এবং আরেক পক্ষ শাহিদার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে শাহিদা এবং আনোয়ারা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম বেগম বদনি মারমুখী হয়ে উঠেন। তখন কেন্দ্রীয় মহিলা লীগ নেত্রী সাফিয়া খাতুন তাদের ‘চুপ’ বলে শাসান।
সাফিয়া খাতুন সহ সভাপতি হিসেবে শাহিদা আক্তার এবং ওয়াসিকা আয়শা খানের নাম ঘোষণা করেন। প্রয়াত আতাউরর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা এর প্রতিবাদ করে বেরিয়ে যান বলে সূত্র জানিয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানের সঙ্গে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
রিজিয়া রেজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি তো কোন পদ চাইনি । এমপি সাহেবের (নদভি) নির্বাচনের জন্য আমি কাজ করেছিলাম। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমাকে পদ দেয়া হয়েছে। এখন আমার পরিচয়, এমপি সাহেবের পরিচয়, আমার বাবার পরিচয় নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে।
সূত্রমতে, কাউন্সিল অধিবেশন শেষ হওয়ার পর নেতাকর্মীরা একে একে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় সম্মেলনস্থল থেকে কয়েক হাত দূরে পঞ্চাশোর্ধ শাহিদা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। উপস্থিত নেতাকর্মীদের কয়েকজন তাকে ধরাধরি করে পাশের সার্জিস্কোপ হাসপাতালে নিয়ে যান।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের সুজন তাকে দেখতে সার্জিস্কোপ হাসপাতালে যান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি সাড়ে ৫টার দিকে গিয়েছিলাম। তখনও জ্ঞান ফেরেনি।
১৯৯৮ সালে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
আরডিজি/টিসি