ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবি ছাত্রলীগের বড় সংঘাত এড়াচ্ছে দেয়াল!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
চবি ছাত্রলীগের বড় সংঘাত এড়াচ্ছে দেয়াল! শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের মাঝখানে সীমানা দেয়াল। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: একটু আগে ফিরে যাওয়া যাক। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দু’পক্ষের বাকবিতণ্ডার সূত্রপাত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে।  সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনে তাদের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। প্রতিপক্ষের গুলিতে তখন মারা যান তাপস সরকার নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। ওই সময় ঘণ্টা দু’য়েক ধরে চলা ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষে দুই হল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হয় ছাত্রলীগের দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

২০১৫ সালের ২ নভেম্বর। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে সংঘর্ষ জড়ায় ছাত্রলীগের দু’পক্ষ।

শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনে ঘণ্টা-দেড়েক ধরে চলা ওই সংঘর্ষে তৎকালীন হাটহাজারী থানার ওসি ইসমাইল সহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয় তাও শাহজালাল ও শাহ আমানত হলকেন্দ্রিক।

এক ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সভাপতি পক্ষের তিনজন এবং সাধারণ সম্পাদকের তিন অনুসারী গুরুত্বর আহত হন।

শুধু এই তিনটিই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম বড় বড় সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ঘটেছে শাহজালাল ও শাহ আমানত হলকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে শাহজালাল হলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী ও শাহ আমানত হলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা থাকেন। ফলে সংঘর্ষ শুরু হলেই শক্তি বাড়িয়ে তাদের মধ্যে চলতো দীর্ঘক্ষণ হামলা পাল্টা-হামলা। রূপ নিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।

তবে বর্তমানে হলকেন্দ্রিক এ ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে। দুই হলের মাঝখানে থাকা দেয়ালটি এখন দু’পক্ষের বড় ধরনের সংঘাত থেকে বাঁচাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দু’হলের মাঝখানে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের ও নয় ফুট উচ্চতার দেয়াল নির্মাণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  ২০১৬ সালের ৫ মার্চ শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের মাঝখানে এ দেয়াল নির্মাণ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তর। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ওই বছরের মে মাসের শেষের দিকে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দুই হলকেন্দ্রিক বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা আর ঘটেনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে। যে সংঘর্ষগুলো ঘটছে তা হয় ওই দুই হল সংলগ্ন রাস্তায় নতুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো জায়গায়।

ওই দুই হলের সামনে থাকা মার্কেটের দোকানিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আগে এই দুই হলকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হলে দোকানপাট বন্ধ রাখতে হতো। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতো তাদের মধ্যে সংঘর্ষ। তবে এখন যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা প্রায় গুপ্ত হামলা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই হলের দুই নেতা বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০১৪ সালের ঘটনা, ২০১৫ সালে ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে সংঘর্ষ ও ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষ কিন্তু এই দুই হলকেন্দ্রিক। তখন দুই হলের মাঝখানে দেয়াল ছিল না বলে সংঘর্ষ হলেই এক হল থেকে অন্য হলে গিয়ে হামলা চালানো হতো। কিন্তু এখন দেয়াল থাকায় এ ধরনের বড় ঘটনা ঘটছে না। ’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দেয়াল থাকায় ওই দুই হলে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াতে পারছে না ছাত্রলীগ। ফলে আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে সংঘর্ষ চললেও বর্তমানে তা আর হচ্ছে না। এছাড়া হল দুটিতে একে অপরের উপর হামলা করলে সীমানা দেয়াল না থাকায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হত পুলিশকে। দেয়াল থাকায় এখন পুলিশ সহজে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়। যেটি বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কারণ দেয়ালটি নির্মাণ করার আগে শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হতে পারত। এখন তা আর পারছে না। এক হল থেকে অন্য হলে আগে যেখানে সরাসরি যাওয়া যেত এখন আর যেতে পারছে না। ফলে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭

জেইউ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।