ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আদালতে জবানবন্দি

ছিনতাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে ছিল ছাত্রদল নেতা শিপু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭
ছিনতাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে ছিল ছাত্রদল নেতা শিপু ছিনতাইয়ের অভিযোগে আটক ছাত্রদল নেতা শিপু

চট্টগ্রাম: ছিনতাইয়ের ‍মামলায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নগরীর চকবাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুল আলম শিপু।  জবানবন্দিতে শিপু ছিনতাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে থাকার কথা স্বীকার করেছেন।  এছাড়া পুলিশ তার হেফাজত থেকে ১ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে বলেও স্বীকার করেছে।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেন চৌধুরীর আদালতে দন্ডবিধির ১৬৪ ধারায় শিপু জবানবন্দি দেন।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচলাইশ থানার ছিনতাইয়ের মামলায় শিপু নামে এক আসামি আদালতে দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

  জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, তিন পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে শিপু জানায়, আরিফ ও মামুন নামে দুজন তাকে মোটর সাইকেল বিক্রির কথা বলে ঘটনার দিন কাতালগঞ্জ বৌদ্ধমন্দিরের সামনে নিয়ে গিয়েছিল।

  সেখানে ছিনতাইয়ের বিষয়টি সে আগে জানত না।   ছিনতাইয়ের পর তাকে এক লাখ টাকা দিয়েছিল।   পুলিশ ওই টাকা তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করেছে।

শনিবার রাতে নগরীর চকবাজারের মক্কি মসজিদ এলাকা থেকে শিপুকে ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।  

অভিযোগে আটক হওয়া এক ছাত্রদল নেতাকে ছাড়াতে থানা-ঘেরাও করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে যুবলীগ-ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।   বিষয়টি নিয়ে বিস্মিত হয়েছে পুলিশ।   ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারাও এই ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন।

শিপুর বড় ভাই নূর মোস্তফা টিনু নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন।   নগরীর চকবাজার এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারী একটি অংশের নিয়ন্ত্রক টিনু।

শিপুকে ছাড়াতে টিনুর নেতৃত্বে তার ছত্রছায়ায় থাকা যুবলীগ-ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ‍পাঁচলাইশ থানার সামনে অবস্থান নিয়েছিল।   টিনু তার ভাইকে ছেড়ে দিতে পুলিশের উপর চাপ প্রয়োগ করে।   তবে পুলিশ অনড় অবস্থান নিয়ে তাদের থানার সামনে থেকে সরিয়ে দেয়।  

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় নগরীর কাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।  ছিনতাইয়ের শিকার হাটহাজারী উপজেলার ছিপাতলি গ্রামের সিরাজুল হাকের ছেলে নুর উদ্দিন ইসলাম বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, উত্তরা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুলে টেম্পোতে করে যাবার সময় কাতালগঞ্জ নবপন্ডিত বিহারের সামনে ৩-৪ জন যুবক টেম্পোর গতিরোধ করে। এদের মধ্যে একজন ছিনতাইকারী নুর উদ্দিনের শার্টের কলার ধরে টেম্পো থেকে জোর করে নামিয়ে ফেলে।  অন্য দুই যুবক নুরকে মারধর করে হাতে থাকা টাকাভর্তি ব্যাগ ও মোবাইল সেট কেড়ে নিয়ে কাতালগঞ্জ চার নম্বর রোডের দিকে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ অহিদুল ইসলাম ওরফে আরিফ ও চান মিয়া ওরফে মামুন নামে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ সূত্রমতে, আরিফ ও মামুনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ছিনতাইয়ের মূল হোতা হিসেবে নুরুল আলম শিপুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তবে নূর মোস্তফা টিনু দাবি করেছেন, উপরমহলের চাপে তার ভাইকে অন্যায়ভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। শনিবার রাতে তাকে মলিন মুখে থানায় যেতে দেখে অনুসারীরা থানার সামনে জড়ো হয়েছিলেন বলেও দাবি তার।

তিনি বলেন, আমার ভাই ছাত্রদল করে, আমি তো অস্বীকার করি না।   তারপরও সে আমার ভাই তো। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, সেজন্য আমি থানায় গিয়েছিলাম। আমার মুখ কালো ছিল। সেটা দেখে আমার সঙ্গে ছেলেরাও গেছে।

যারা তার এবং তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের ‘বিচারের ভার আল্লাহকে দিয়েছেন’ বলেও মন্তব্য করেন টিনু।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

ছাত্রদল নেতার জন্য থানা ঘেরাও, প্রশ্নের মুখে যুবলীগ-ছাত্রলীগ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।