ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘সবার বাবা আছে, আমার বাবা কেন নেই ?’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৭
‘সবার বাবা আছে, আমার বাবা কেন নেই ?’ শ্রেয়সী শিরিন সাত্তার (ফেসবুক থেকে নেয়া)

চট্টগ্রাম: ‘আমি আমার বাবাকে অনেক ভালোবাসতাম। কিন্তু বাবাকে কাছে কম পেতাম। ভাবতাম, আমার বাবা কেন বাসায় থাকে না?  শুক্র-শনিবার আমাদের সাথে থেকে আবার চিটাগাং। ভাবতাম, সবার বাবা পাশে থাকে, আমার বাবা থাকে না কেন ? এখন ভাবি, সবার বাবা পাশে আছে, আমার বাবা কেন নেই ?’

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের তুখোড় ছাত্রনেতা ডা.জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) আয়োজিত স্মরণসভায় তার মেয়ে শ্রেয়সী শিরিন সাত্তার এসব আবেগঘন কথা বলেছেন।  

নগরীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণসভায় শ্রেয়সী আরও বলেন, আমার বাবা নেই, আজ পাঁচ বছর।

দু:খবোধ একটুও কমেনি। পাঁচ বছর পরও কেন এমন মনে হয়, বাবা কেন নেই।
 বাবা থাকলে কেমন জীবন আমার হতো ?

‘আগে যারা আমাকে দেখেছেন, আমি খুব হৈ-হৈল্লোড় করা একটা মেয়ে ছিলাম। বাবার যখন ক্যান্সার ধরা পড়লো, বাবা আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, তোমার যে কন্ঠ আছে, এটি মূল্যবান। কোন কারন ছাড়া এ কন্ঠ উচু করবে না। কন্ঠ যখন উঁচু করবে, তখন জানতে চেষ্টা করবে কি কারনে উঁচু হচ্ছে তোমার কন্ঠ। ’

‘ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি আমার বাবা। প্রতিরাতে তখন আমি হাসপাতালে বাবার কাছে যেতাম। ডাকতাম আব্বু বলে। উত্তর না পেয়ে আবার ডাকতাম আব্বু। এরপর একটু চোখ তুলে আব্বু আমার দিকে তাকাতো। তখন মনে হতো আমার বাবা সুস্থ হয়ে উঠবে। ’

আবেগাপ্লুত কন্ঠে শ্রেয়সী বলেন, আসলে আমার পক্ষে এই বক্তৃতা দেয়া অনেক কঠিন। চেষ্টা করছি মনকে শক্ত করার। পাঁচ বছর পর এদিনে সবাই এসেছেন, বাবার কথা শুনছেন এটাই আজ অনেক বড় পাওয়া। বাবার যতো প্রত্যাশা ছিলো, তা যেন পূরণ করতে পারি।  

শ্রেয়সীর বক্তব্য শুনে স্মরণসভার প্রধান অতিথি সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, টিংকুর  মেয়ে যে আবেগপূর্ণ কথা বলেছে, বাচ্চা মেয়ের মুখ থেকে এই কথা বের হয়ে আসা কঠিন। বক্তৃতার সময় যে মানসিক শক্তি তা দেখে মনে হলো, এই কন্যা টিংকুর রেখে যাওয়া স্মৃতি। টিংকুর অভাবকে পূরণ করতে পারবে টিংকুর কন্যা। জাতির জন্য সে কাজ করবে।

‘টিংকুর মেয়ে কেবল ষ্ট্যান্ডার্ড নাইনে পড়েন। ও লেভেল, এ লেভেল শেষ করে দেশের বাইরে গেলেও দেশে এসে রাজনীতি করবে। দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। পিতার মতো সৎ ও সাহস নিয়ে চলতে পারবে। ’

মহিউদ্দিন আরো বলেন, টিংকু আমাকে দেখলেই বলতো, আমি কি পার্লামেন্টে যেতে পারবে না? কিন্তু এখন অর্থের যুগ। অর্থ দিয়ে, গলাবাজি করে বড় নেতা হওয়া যায়। কিন্তু মানুষের আস্থা অর্জন করা যায় না। আমরা মানুষের কল্যাণের ওয়াজ করি। কিন্তু বাস্তবায়ন করিনা। কমিটমেন্ট করেও কমিটমেন্ট রক্ষা করতে পারিনা।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, আদর্শিক চেতনা, রাজনৈতিক চেতনা, দলীয় চেতনা নিয়ে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সবসময় দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অসীম সাহস ছিল টিংকুর। এখন ছাত্র রাজনীতির মাঝে ক্ষমতা, অর্থ ভর করেছে। টিংকুরা এর ব্যতিক্রম ছিলেন।

নগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, ভালোবাসা একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। এটি অর্জন করতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, বেঁচে আছি না, মরে গেছি। যে রাজনৈতিক দর্শন তার কতটা বাস্তবায়ন করতে পারছি। টিংকু তার জীবনের শেষ সময়টুকু মানুষের জন্য ব্যয় করেছেন। ক্ষমতার রাজনীতি তাকে স্পর্শ করেনি।

নগর আওয়ামী লীগ নেতা জামসেদুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ডা. জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণসভায় টিংকুর স্ত্রী খুজিস্তা নূর-ই-নাহারিন মুন্নিও উপস্থিত ছিলেন।

বক্তব্য রাখেন মিরসরাই উপজেলা পরিষদেরর সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সাইদুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ, মশিউর রহমান চৌধুরী, ওয়াহেদুল আমিন ওয়াহেদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৭ 

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।