ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হাসিনা-মতিয়া-আমু-তোফায়েলের সাক্ষ্য চায় রাষ্ট্রপক্ষ

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
হাসিনা-মতিয়া-আমু-তোফায়েলের সাক্ষ্য চায় রাষ্ট্রপক্ষ হাইপ্রোফাইল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের ঘটনার ২৮ বছর পার হলেও বিচার শেষ হয়নি।  তবে বিচারের ক্ষেত্রে মামলাটি সাত বছরের অচলাবস্থা কাটাতে সক্ষম হয়েছে।  গত এক বছরে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় ৭ জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। 

সাক্ষ্য দেয়ার অপেক্ষায় আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী, আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদের মতো হাইপ্রোফাইল সাক্ষীরা। তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী আশা করছেন, সাক্ষ্যগ্রহণের এই গতি অব্যাহত থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই ইতিহাসের নৃশংসতম এই গণহত্যা মামলার বিচার শেষ হবে।

পিপি মেজবাহ বাংলানিউজকে বলেন, ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারিত আছে।

ওইদিন নিহতদের কয়েকজন স্বজন সাক্ষ্য দেবেন। এরপর আমি তিন মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী ও তোফায়েল আহমেদকে আদালতে হাজিরের জন্য সমন জারির আবেদন করব।   তিন মন্ত্রীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে পারলে আমি এই বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করব।   মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষ্য কিভাবে নেয়া যায় সেটা মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করব।  

গত বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলছে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে।   মূলত এই আদালতে স্থানান্তরের পরই মামলাটির বিচার কার্যক্রমে গতি পেয়েছে।

অথচ চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন থাকাকালে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাত বছরে সাক্ষ্যগ্রহণ হয় মাত্র একজনের।  আর বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তরের পর ধার্য তারিখগুলোর প্রতিটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত  

‘চট্টগ্রাম গণহত্যা: প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি’ শীর্ষক বইয়ের লেখক সাংবাদিক নিরুপম দাশ গুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলি চালানো হয়েছিল।   ২৪ জন মানুষ মর্মান্তিকভাবে প্রাণ দিয়েছিলেন।   এই ঘটনার বিচার অনেক আগেই শেষ হওয়া উচিৎ ছিল।   আইনের শাসন এবং স্বজন হারানো মানুষগুলোকে শান্তি দেয়ার জন্য হলেও বিচার দ্রুত শেষ হওয়া দরকার ছিল।

‘কিন্তু গত ২৯ বছরে নানা প্রতিবন্ধকতায় বিচারের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়নি, যেটা দু:খজনক।   এই ঘটনা স্বজন হারানো মানুষগুলোর হৃদয়কে বারবার রক্তাক্ত করার শামিল।   প্রধানমন্ত্রীর উপর গুলিবর্ষণের মামলার বিচার নিয়ে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মানুষ বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলায় স্বাভাবিক।   তবে এখন সাক্ষ্যগ্রহণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এতে মানুষ আশাবাদী হয়েছে। ’ বলেন নিরুপম দাশ গুপ্ত।

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদিঘি ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন।  আহত হন কমপক্ষে দু’শতাধিক মানুষ।

নিহতরা হলেন, হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম. স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথলেবারট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডিকে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বিকে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, মসর দত্ত, হাশেম মিয়া, মো. কাশেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, মো. শাহাদাত।

এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।   মামলায় হত্যাকান্ডের সময় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বহুল আলোচিত মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের নির্দেশে সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রথম দফায় ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, কোতোয়ালী জোনের তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মন্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মুশফিকুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো.আব্দুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন।

আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়।  প্রথম দফায়  ১৯৯৭ সালের ৫ আগষ্ট এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০০০ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।  

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার পর ২০০১ সালের ১৭ মে থেকে ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মাত্র দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

সেনাসমর্থিত তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র একবছরে সাক্ষ্যগ্রহণ হয় ১৩ জনের।  

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।  ওই বছরের ২৫ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন দেওয়ানের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।  এরপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারিক আদালত চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আর কোন সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।

এই অবস্থায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি মামলাটি বিচারের জন্য আসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে।  

এই আদালতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, প্রবীণ সাংবাদিক অঞ্জন সেন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ ৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।   

বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।