ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সবজি বিক্রির টাকায় তিনতলা ভবন !

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭
সবজি বিক্রির টাকায় তিনতলা ভবন ! সবজি মাঠে ব্যস্ত কৃষক আনোয়ার। ছবি: উজ্জ্বল ধর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ১৯৮৪ সাল থেকেই চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীর লালটিয়ার চরে সবজির আবাদ করে আসছেন কৃষক আনোয়ার হোসেন। বছরের ১২ মাসই নানারকম সবজিতে হাত লাগিয়ে দিন কাটে তার। এটাই যে তার একমাত্র পেশা।

আনোয়ার হোসেনের সবজির ক্ষেত সাংগু নদীর উত্তরপাড়ে হলেও তার বাড়ি দক্ষিণ পাড়ের কালিয়াশ এলাকায়। প্রথমদিকে সবজি বিক্রির টাকায় টেনেটুনে সংসার চললেও বিগত কয়েক বছর ধরে ভালোই লাভ করতে পারছেন এই কৃষক।

সম্প্রতি আনোয়ার হোসেনের সবজি ক্ষেতে কথা হয় তার সঙ্গে। চার কানি জমিতে ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা ও বিভিন্ন জাতের শাক চাষ করছেন তিনি।

বাধাকপির চারা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন আনোয়ার হোসেন।

কেমন লাভ করছেন জানতে চাইলে বেশ সানন্দেই উত্তর এল, ‘বেশ ভালো। শীতের শুরুতেই ফুলকপি, মুলা আর বাধাকপি বিক্রি করে লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে। ২৭০টা মরিচ গাছ থেকে আয় করেছি ২৯ হাজার টাকা। নতুন করে মুলা, বাধাকপি, টমেটো রোপন করেছি। এখন সবজির দাম কমলেও আশা করছি লোকসান হবে না। এই সবজি চাষের লাভ দিয়েই তো তিনতলা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে দুইতলা পর্যন্ত হয়ে গেছে। আর কিছুদিন পর তৃতীয়তলার কাজে হাত দেব। ’

‘তিন ছেলেকে পড়ালেখা করাতেও পারছি। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমার পরিবারে ভাগ্য বদল হয়েছে সবজি চাষ করে। ’

আনোয়ার হোসেনের তিনি ছেলের মধ্যে বড় দুজন দেলোয়ার হোসেন ও কবির আহমেদ যথাক্রমে স্থানীয় উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোটজন রাফি হোসেন পড়ে কালিয়াশ আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

শুধু আনোয়ার হোসেন নন, এই অঞ্চলের আরও অনেক কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে সবজিতে। কথা হয় আরও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। এর মধ্যে কালিয়াশ এলাকার কৃষক শামসুল ইসলাম ও আবদুর রহিম তুলেছেন দুইতলা ভবন, মোহাম্মদ হেলাল আর মোহাম্মদ আখতার তুলেছেন একতলা ভবন।

এই অঞ্চলের প্রায় চার হাজার কৃষক সারাবছর সাংগু নদীর পাড়ের হাজারীবাজার, বারতখানা, চাগাচর, জামিরজুরী, লালটিয়া, দিয়াকুল, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া, লালিয়ারচর সহ নানা এলাকায় সবজি চাষ করেন। সবমিলিয়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে সারাবছর সবজি চাষ হচ্ছে এখানে।

ইউনিয়ন কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চৈত্র থেকে আষাঢ় মাস-খরিপ-১ মৌসুম, শ্রাবণ থেকে আশ্বিন খরিপ-২ মৌসুম ও কার্তিক থেকে ফাল্গুন রবি মৌসুম বলে পরিচিত। তিন মৌসুমেই অর্থাৎ সারাবছরই সবজি চাষ করছেন এই অঞ্চলের মানুষ।

এর মধ্যে খরিপ-১ মৌসুমে ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এই মৌসুমে কৃষকরা বরবটি, ঢেড়শ, মুলা, লালশাক, বেগুন পালংশাক সহ মৌসুমের সঙ্গে মানানসই সবজি চাষ করেন।

খরিপ-২ মৌসুমে ৩০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এসময় মুলা, শিম, ঢেড়শ, বেগুন চাষ হয় বেশি।

রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এই মৌসুমে প্রায় সব সবজিই চাষ হয়। এর মধ্যে ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, বেগুন, শিমসহ নানা জাতের শাক চাষ হয়।

দোহাজারী ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দাশ বাংলানিউজকে জানান, এই অঞ্চলে প্রায় চার হাজার কৃষক সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। সারাবছরই তারা বিভিন্ন সবজি চাষ করেন। এটাই তাদের মূল পেশা। সবজি চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।