যাকেই সামনে পান, হাত জোড় করে ধরেন। চোখে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে অস্ফূট স্বরে বলেন, আমি বাঁচতে চাই।
কে জানত নাট্যকলার চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শামসুল ইসলাম মাসুদের লালিত স্বপ্নে হানা বসাবে মরণব্যাধী ক্যান্সার, যে কিনা মাস কয়েক আগেও স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়েছে। তার আগে হুমায়ন আহমদের পাপগল্প অবলম্বনে নাটকে মাসুদ অভিনয় করেছে, সে কিনা এখন ক্যান্সার আক্রান্ত! এ কথা কী ভাবা যায়।
ভাবতে পারছে না মাসুদ নিজে, ভাবতে পারছে না তার পরিবার, তার সহপাঠীরা। ভাবতে না পারলেও বাস্তবতা এই, ক্যান্সারাক্রান্ত মাসুদ এখন মৃত্যুর খুব কাছকাছি।
মাসুদকে বাঁচানোর জন্য লাগবে ৪২ লাখ টাকা। যে পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরার মত অবস্থা, সে পরিবারে এত টাকা জোগাড় করা যেন স্বপ্নকেও হার মানানো।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকেল পাঁচটা। বিশ্ববিদ্যালয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের ১৩৭ নম্বর কক্ষ। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায় মাসুদ এক পাশ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। বারবার চেষ্টার পরও কোনোভাবেই উঠতে পারল না মাসুদ।
সহপাঠী বিকুল তাজিম জানালেন, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছিল মাসুদ। টাকার অভাবে সপ্তাহখানেক আগে ফিরে আসে। প্রথম কয়েকদিন স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারত। একটু-আধটু হাঁটাচলা করার শক্তিও ছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই তার শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছে।
‘মাসুদের জন্য আমরা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু শুধু প্রদর্শনী দিয়ে কত টাকা আর আমরা জোগাড় করতে পারব। আমরা ছাত্র মানুষ। আমাদের সাধ্যও তো সীমিত। আমরা বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ’ বলেন বিকুল তাজিম।
যেভাবে ধরা পড়ল ক্যান্সার: ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের কথা। মাসুদ একটু জ্বর অনুভব করায় আর চোখ হলদে রূপ দেখে জন্ডিস হয়েছে এমন ভেবে চিকিৎসকের কাছে যান। পরে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে জন্ডিস। জন্ডিসের ওষুধ সেবনের পরেও অসুখ না কমায় আবারও পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সেই পরীক্ষায় ধরা পড়ে ক্যান্সার।
মাসুদের বাড়ি রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায়। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে মাসুদ দ্বিতীয়। বড় বোন বিয়ে করে সংসারী। ছোট বোন এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। ছোট ভাই বাড়িতে থাকে। বাবাও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন বাসায়। তাই তার অসহায় পরিবার এবার সাহায্য চেয়েছেন সমাজের বিত্তবানদের কাছে।
মাসুদকে সাহায্য পাঠানো যাবে যেভাবে:
নাট্যকলা বিভাগের সভাপতি অসিম দাশের অ্যাকাউন্ট নম্বর ০২০০০০২০৪২৪৮৬, অগ্রণী ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা অথবা মাসুদের মা মাকসুদা বেগমের ইসলামি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বরে ২০৫০২০১০২০০০১৭২০১ সাহায্য পাঠানো যাবে।
মাসুদের সঙ্গে কথা বলে সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বের হয়ে আসার মুহূর্তে মাসুদ বলে উঠলেন, ‘ভাই রোববার (২২ জানুয়ারি) বাড়িতে যাচ্ছি। আর কদিন বাঁচবো কে জানে? তাই আব্বু, আম্মু ও ছোট ভাই ও বোনকে দেখতে যাচ্ছি।
মাসুদের চোখে তখন জল। কণ্ঠে হাহাকারের জড়তা। সেই চোখ আর কণ্ঠ যেন বলছে, ‘আমি আরও অনেকদিন বেঁচে থাকতে চাই। ’
হ্যাঁ, মাসুদ ক্যান্সারের কাছে হারবেন না। এজন্য অবশ্য আপনাকে তার পাশে দাঁড়াতেই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৭
জেইউ/টিসি