ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্ধু কী খবর বল..

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
বন্ধু কী খবর বল.. ফিরোজশাহ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের

চট্টগ্রাম: ভবিষ্যতের টানে পৃথক হয়ে গিয়েছিল তাদের গন্তব্য। বন্ধুর সঙ্গে ‘দেখা-দেখি’টা কারও কারও জীবনে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের পর্দাতেই। কারও তো আবার-স্কুল জীবনের শেষ দিনে পথটা যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল তারপর আর মুখ দেখাদেখিই হয়নি। সেই সমস্ত হারিয়ে যাওয়া পথগুলো ফের পুরোনো মোহনায় ফিরেছিল শুক্রবারে।

বহুদিন পর প্রিয় ফিরোজশাহ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় এসে তারা যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই ‘আকাশি-সাদা ইউনিফর্মে’ বন্দি থাকার সোনালী দিনগুলোতে। উপলক্ষ একটাই-বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।

তারা সবাই যে একটা সময় এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন, পাশাপাশি বসতেন ক্লাসরুমে।

বহুদিন পর স্কুলে ফেরায় শুক্রবারের ভরদুপুরে তাই স্কুল প্রাঙ্গণের এপাশ-ওপাশে প্রাক্তনদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছিল অজস্র আবেগি সংলাপ।

তার কোনটা এমন-‘বন্ধু কী খবর বল, কতদিন পর দেখা,’ ‘এই মাঠেই তো খেলে বেড়াতাম আমরা, আজ চেনায় যায় না’, ‘এটাই না ছিল আমাদের সেই ক্লাসরুমটা, আজ রং লেগেছে তার দেয়ালে দেয়ালে। ’

নগরীর আকবর শাহ থানা সংলগ্ন এই বিদ্যালয়ের বয়স হাফ সেঞ্চুরি পার করেছে বহু আগেই। ১৯৬২ সালে জন্ম এই বিদ্যালয়ের। তবে ১৯৮৩ সাল থেকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমই অনুষ্ঠিত হলো পুনর্মিলনী। তাই উৎসবের মাত্রাটা ছিল একটু বেশিই।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী রিউনিয়নের সভাপতি এই স্কুলেরই সহকারী শিক্ষিকা রোকেয়া তাসনিম, আহবায়ক উম্মে কুলসুম কেয়া এবং সদস্য হুসনা আরা বেগম, শারমিন আক্তার হ্যাপি, উম্মে সালমা, জোহরা আক্তার, সোনিয়া আক্তার, শামীমা আক্তার, শাহীদা আক্তার, রেজোয়ানা জাহান তন্বি, রিবাত আক্তার, জান্নাতুল ফেরদোস জেমি,শারমিন আক্তার কথা সহ আরও অনেকের সহযোগিতায় এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

পুনর্মিলনী উপলক্ষে স্মৃতিচারন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-আয়োজনে বাকি ছিল না কিছুই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এছাড়াও বক্তব্য দেন মহিলা কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম, নাজমুল হক ডিউক প্রমুখ।

পুনর্মিলনী উপলক্ষে এদিন সকাল থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকেন প্রাক্তন আর বর্তমান ছাত্রীরা। প্রাক্তন ছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে দেশের বহু জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তারা তাদের পরিবার নিয়ে অংশ নেন পুনর্মিলনীতে। ফিরোজশাহ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে গান গাইছেন এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী

সেই সাবেকরা যেন খুঁজে ফিরছিলেন তাদের স্কুল জীবনের সেইসব স্বর্ণময় দিনগুলো। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই ভিড়-বুনো উল্লাস। সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশে চলছে ক্লিক ক্লিক, দেদারসে উঠছে সেলফি-ছবি। পেছনের দৃশ্যপটে কোথাও বিদ্যালয় তো, কোথাও আবার মঞ্চস্থল। ফেলে আসা ক্লাসরুম, শিক্ষক আর হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা মিলে হুড়মুড়িয়ে বইতে থাকে গল্পের স্রোত।

এই বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এবং রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী উম্মে সালমা ও শারমিন হ্যাপি বলেন, ‘পুনর্মিলনীতে এসে মনে পড়ে যাচ্ছে স্কুলের শেষ দিনের কথা। সেদিন বন্ধুকে ছেড়ে যাওয়ার সময় বলেছিলাম একসঙ্গে থাকার। দেখা হবার। কিন্তু বাস্তবতার কারণে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি এরপর থেকে। পুনর্মিলনীতে এসে আবার তাদের সঙ্গে দেখা হলো। সত্যিই নস্টালজিক হয়ে পড়েছি আমরা। ’

আলোচনা সভা শেষে দুপুর থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমেই ২০০৯ ব্যাচের এর উম্মে সালমা প্রয়াত সঞ্জিব চৌধুরীর বিখ্যাত ‘বায়োস্কোপ’ গানটি গেয়ে মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন। এরপর ২০১৫ ব্যাচের শিল্পীর কণ্ঠে শোনা গেল ‘আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া নিল রে মরার কোকিলে’। ২০০৮ ব্যাচের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা ‘সেই তুমি কেনো এতো অচে না হলে’ গানটির মাধ্যমে যেনো আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করিয়ে দিলেন আরেকবার। এছাড়া গান পরিবেশন করেন প্রাক্তন ছাত্রী সোনিয়া আক্তার সহ আরও অনেকেই। বাদ পড়েনি বর্তমান ছাত্রীরাও। ছিল নাচও। সেখানে কিছুক্ষণের জন্য শিক্ষক পরিচয় ভুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উৎসবে মেতেছিলেন শিক্ষকরাও। ফিরোজশাহ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রাক্তনদের আড্ডার একটি মুহূর্ত

এরপরেরটা ‘ব্যান্ডযুগ’। জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘প্রতিক্ষা’ পরিবেশন করে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান।

এভাবেই বাড়তে থাকে সময়ের বয়স। ঘড়ির কাটা তখন রাত সাড়ে আটটা ছুঁইছুঁই। সময় বলছে এবার বিদায়ের পালা। তবে এর আগের ১০ ঘণ্টাটা যেন বার বার বলে গেছে বন্ধুত্ব হারায় না, থেকে থেকে ফিরে আসে বন্ধুর মুখ।

তাই তো যাবার বেলায় বিদায়ী মুখগুলো বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলছিল ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো?’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।