ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘অন্ধকার পৃথিবী’তে মেয়ে দুটির দেড়মাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭
‘অন্ধকার পৃথিবী’তে মেয়ে দুটির দেড়মাস গ্রেফতার হওয়া আসামিরা

চট্টগ্রাম: বছর ১৬’র মেয়েটা কাজ করতো ঢাকার একটি পোশাক কারখানায়। কিন্তু সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাকে ফেরত আসতে হয় বাড়িতে। বাবা গরীব কৃষক। টেনেটুনে চলে সংসার। এমন পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে থাকার জোঁ নেই। তাই আরেকটা চাকরির আশায় গত বছরের ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম শহরে এসেছিল সে।

ভরসা ছিল গ্রামের পরিচিত অনেকেই এখানে কাজ করে। তাদের পাওয়া গেলে নতুন চাকরি হবে।

বাড়ি তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে।

এতটুকু পর্যন্ত মেয়েটার পৃথিবী ঠিকই ছিল।

এর পরেরটা বিভীষিকাময়।

গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরার দিন বান্ধবীর খোঁজে নগরীর ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশনে আসে। কোন কিছু চিনতে না পারায় এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করছিল। এমন সময় একজন বয়স্ক লোক তাকে জিজ্ঞেস করে সে কোথায় যাবে? চাকরির খোঁজে এসেছে জানালে ওই ব্যক্তি তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় যাওয়ার পর মেয়েটি জানতে পারে ওই ব্যক্তির নাম দুলাল শীল। সেই বাসায় দুলালের স্ত্রীও ছিল।

পরবর্তীতে দুলাল মেয়েটিকে চাকরিতে নিয়ে যাবার কথা বলে ১০ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকার চৌধুরী টাওয়ারের ছয় তলায় মানিক দাশ রতনের বাসায় রেখে আসে। সেই বাসায় আগে থেকে আটকা ছিল আরও এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে। সেই থেকে শুরু হয় মেয়েটার বিভীষিকাময় দিনগুলো।

বাসায় তালাবদ্ধ অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে মৃত্যুভয় দেখিয়ে তাকে বাধ্য করা হয় অসামাজিক কাজ করতে। ভয় দেখিয়ে ছবিও তুলে রাখে তারা। বলে দেয় তাদের কথামতো রাজি না হলে এই ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এবং পরিবারের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এরই মধ্যে মেয়েটি অনেকবার পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তালাবদ্ধ থাকায় সে কোনোভাবে বের হতে পারছিল না। পরবর্তীতে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে মেয়েটিকে মোহাম্মদপুরের ওই বাসা থেকে রহমাননগর এলাকায় মিন্টু তালুকদার নামের আরেক ব্যক্তির বাসায় নিয়ে তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেই বাসায় মিন্টু তালুকদারসহ অন্যরা তার ওপর নির্যাতন চালাতো।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে মেয়ের খোঁজ না পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে এসে মেয়েটির বাবা পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ করেন।

অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে রহমাননগরের মিন্টু তালুকদারের বাসায় অভিযান চালায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে তারা সেখান থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে।

এসময় আটক করা হয় মিন্টু তালুকদারকেও। পরে মিন্টুর স্বীকারোক্তি অনুসারে বহদ্দারহাট, মোহাম্মদপুর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দুলাল শীল (৫৯), সুমি শীল (৪৫), রতন দাশ মানিক (৫৫), বেবী দাশকে (৩৭) আটক করে। একইসঙ্গে উদ্ধার করা হয় আগে থেকে আটক থাকা মেয়েটিকেও। তার ওপরও একই রকম নির্যাতন চলে আসছিল এতদিন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দীন আকবর বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি খুবই করুণ কাহিনী। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মেয়ে দুটিকে বাসায় নিয়ে আসে জড়িতরা। এরপর এই দুটি মেয়েকে গত দেড়মাস ধরে বাইরের আলো বাতাসও দেখতে দেওয়া হয়নি। অন্ধকার ঘরে আটকে রেখে প্রতিদিনই তাদের দিয়ে অসামাজিক কাজ করানো হতো। অবশেষে আমরা তাদের উদ্ধার করতে পেরেছি এবং জড়িতদের গ্রেফতার করতে পেরেছি। গ্রেফতার পাঁচজনের বিরুদ্ধে মানবপাচার দমন ও প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘উদ্ধার করার পর মেয়ে দুটিকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এরপর পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।