ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

তদারকিতে ম্যাজিস্ট্রেট

ভর্তি বাণিজ্য ঠেকাতে থানাভিত্তিক ৫ কমিটি

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৭
ভর্তি বাণিজ্য ঠেকাতে থানাভিত্তিক ৫ কমিটি

চট্টগ্রাম: শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাগামহীন বাড়তি টাকা আদায় ঠেকাতে নগরীর সকল বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) তদারকিতে নামছে জেলা প্রশাসন। তদারকি করতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৫ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং গঠন করা হয়েছে থানাভিত্তিক ৫টি কমিটি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বাংলানিউজকে বলেন, মহানগরীর বেশ কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভর্তি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে লাগামহীনভাবে ভর্তি বাণিজ্য করছে। যা আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
ইতোমধ্যে মহানগরীর শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে সভাও করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
যা কখনো কাম্য নয়।
 
নীতিমালার বাইরে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এক টাকাও বেশি নিতে দেওয়া হবে না জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহানগরীর ৫ শিক্ষা থানায় তদারকি করতে জেলা প্রশাসনের ৫ নির্বার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি মহানগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট জমা দিবেন। যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি নীতিমালার বাইরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিবে, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে এমপিও বাতিলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
 
এর আগে (১৭ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে মহানগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বাড়তি টাকা ফেরত দিতে ১০ দিনের সময় বেঁধে দেয় জেলা প্রশাসন। ওই সভায় ক্যাব (কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজির হোসাইন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তদারকি ও গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে বলেন, প্রতিবছর বেসরকারি কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লাগামহীনভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকে। ২০১৬ সালেও স্কুলগুলো নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছিল। পরে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ আদায়কৃত শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেয়। অথচ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস এর কোন তদারকি রাখেন না। তাই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ লাগামহীনভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে পারছে। এমনও কয়েকটি স্কুল আছে যেখানে নানা অজুহাতে ভর্তির সময় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে নিচ্ছে। এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) বাবদ হাজারের বেশি টাকা আদায় করছে।
 
পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাতে এ তদারকি কমিটি গঠন করেছে।
 
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ‘কোতোয়ালী, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, পাহাড়তলী ও বায়েজিদ-বন্দর-পতেঙ্গা’ এ  ৫ মাধ্যমিক শিক্ষা থানায় বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগামহীন ভর্তি বাণিজ্য ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের ৫ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। তারা হলেন- জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান মুক্ত, সাব্বির রহমান সানি, শারমিন আক্তার, তৌহিদুল ইসলাম ও শেখ নুরুল আলম।
 
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, নীতিমালার বাইরে বাড়তি কোন টাকা না নিতে বেসরকারি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভর্তি নীতিমালায় বলা আছে সেশন চার্জসহ সর্বসাকুল্যে ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় ৩ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না এবং উন্নয়ন ফি নেওয়া যাবে না। এর বাইরে ভর্তি বাণিজ্য ঠেকাতে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে থানাভিত্তিক ৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, থানা শিক্ষা অফিসের প্রতিনিধি এবং ক্যাবের একজন প্রতিনিধি ওই কমিটির সাথে রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকি করে বাড়তি টাকা আদায় বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যারা ভর্তি নীতিমালার বাইরে বাড়তি টাকা আদায় করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮,২০১৭
 
এসবি/টিসি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।