ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সেতুর দুঃখ, ফেনী-কুমিল্লার চেয়েও দূরে বোয়ালখালী!

মাহমুদ মেনন ও রমেন দাশগুপ্ত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৪
সেতুর দুঃখ, ফেনী-কুমিল্লার চেয়েও দূরে বোয়ালখালী! ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: “চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট রেলসেতুটি উন্নয়নের চিত্র বহন করে না। বরং এই চিত্র পিছিয়ে পড়া সময়ের।

” রেলসেতুটির উপর দিয়ে একবার যাতায়াত করলে এমন মন্তব্যই করতে হবে। আর যারা নিত্য যাতায়াতে বাধ্য তারা এই সেতুকে ‘দুঃখ’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন।


কালুরঘাট রেলসেতুই নগরের সবচেয়ে কাছের উপজেলা বোয়ালখালীকে শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। কিন্তু সরু সেতুটির ওপর দিয়ে এখনও একদিকে যান চলাচল। ফলে একপাশ দিয়ে গাড়ি উঠলে আরেক পাশে শত, শত গাড়ি আটকে থাকছে। ৮৪ বছর পার করা সেতুটি এখন দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দুঃখে পরিণত হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, নিউমার্কেটকে চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্র ধরলে এর থেকে বোয়ালখালী উপজেলা সদরের দূরত্ব ১২ কিলোমিটারের বেশি নয়। অথচ এই দূরত্ব পার হতে বোয়ালখালীর মানুষের সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা, যে সময়ে চট্টগ্রাম থেকে মহাসড়ক ধরে কুমিল্লা পর্যন্ত পৌঁছানো যায়।

নামে রেলসেতু হলেও এর উপর দিয়ে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনই চলাচল করে। এতে সেতুর দু’পাশে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। আর সে চিত্রও আজ তিন দশক পুরোনো।  

আন্দোলন সংগ্রামও চলছে এ সমস্যা সমাধানের দাবিতে। বাংলানিউজের কথা হয় বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো.আব্দুল মোমিনের সঙ্গে।   তিনি বলেন, সবচেয়ে কাছের উপজেলা বোয়ালখালী। সবার আগে শহর থেকে বাড়ি পৌঁছানোর কথা বোয়ালখালীবাসীর। কিন্তু একটি সেতুর জন্য আমরা হয়ে গেছি সবচেয়ে দূরের বাসিন্দা। মনে হয়, ফেনী-কুমিল্লা থেকেও আমাদের বাড়ি অনেক দূরে।

শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে বোয়ালখালী পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা চাকুরিজীবী নাজিম উদ্দিন। আসা-যাওয়ায় বিড়ম্বনা এড়াতে নগরে বাসা ভাড়া করেছেন তিনি।

নাজিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, কালুরঘাট সেতুর দক্ষিণ পাড় কধুরখীল, গোমদণ্ডি থেকে শহরে গিয়ে অনেকে পরিবার নিয়ে মোহরা, চান্দগাঁও এলাকায় বসবাস করছেন। শুধুমাত্র সেতু পারাপারের কষ্ট এড়াতে তারা শহরে গিয়েছেন।

কালুরঘাটে একটি সেতু নির্মাণ হলে বোয়ালখালী, পটিয়ার অনেক বাসিন্দাই গ্রামে ফিরে যাবেন, দাবি নাজিম উদ্দিনের।

বৃটিশ আমলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বার্মা ফ্রন্টে সৈন্য আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্য ১৯৩০ সালে কালুরঘাট রেলসেতুটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৫৮ সালে সেতুটি অন্যান্য যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার জানালেন, প্রায় আড়াই দশক আগে সেতুটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ভূমিকম্প কিংবা যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ভেঙ্গে যে কোন মুহুর্তে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা এই নগর পরিকল্পনাবিদের।

সেতুটি ভেঙ্গে অবিলম্বে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র।

আর অন্যদিকে বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে নাগরিক আন্দোলনও চালিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া শিল্প এলাকা সম্প্রসারণ, নতুন পোশাকপল্লী স্থাপনসহ অর্থনৈতিক প্রয়োজনে দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে চট্টগ্রাম চেম্বার ও বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও।

তবে সরকার এ ব্যাপারে পুরো হাতগুটিয়ে বসে নেই। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১২ সালে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর উপর কালুরঘাট রেলওয়ে সেতুর পাশে দ্বিমুখী রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। বর্তমান সেতুর এক’শ মিটার উজানে এ সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব গত দু’বছরেও একনেকের অনুমোদন পায়নি।  

বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মো.আব্দুল মোমিন বাংলানিউজকে বলেন, শুধু যোগাযোগের প্রয়োজনে নয়, অর্থনীতির প্রয়োজনেও নতুন সেতু নির্মাণ জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।