ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কর্মসংস্থান ব্যাংক আনোয়ারা শাখা

ব্যবস্থাপককে ঘুষ না দিলে ঋণ মেলে না

মো.মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২১ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪
ব্যবস্থাপককে ঘুষ না দিলে ঋণ মেলে না

চট্টগ্রাম: ঋণ প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগ উঠেছে আনোয়ারা উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা ব্যাবস্থাপকের বিরুদ্ধে।  

শাখা ব্যবস্থাপক মাহবুব কামাল বিন খালেদের অনিয়ম দুর্নীতি আর ঋণ গ্রহণে হয়রানিতে অতিষ্ঠ উপজেলার একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

 

গ্রাহকদের অভিযোগ, যথাযথ দলিলাদি না থাকার পরও ঋণ দেয়ার একাধিক নজির রয়েছে । অথচ ঘুষ না দেওয়ায় বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও ঋণ পাচ্ছেন না প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।


আনোয়ারা শাখা ব্যবস্থাপকের অনিয়ম-দুর্নীতি ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মসংস্থান ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) গান্ধি কুমার রায়।

তদন্ত কর্মকর্তা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দিবাকর চৌধুরী বলেছেন এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তিনি।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দিবাকর চৌধুরী প্রশ্রয়েই অনিয়ম-দুর্নীতি করে চলেছেন আনোয়ারা শাখা ব্যবস্থাপক মাহবুব কামাল। অবশ্য এ ধরণের কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মহাব্যবস্থাপক গান্ধি কুমার রায়।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মাহবুব কামাল বিন খালেদ এই শাখায় যোগ দেওয়ার পর থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেন। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ঘুষ না দিলে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। এতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক গ্রাহক ওই ব্যাংক থেকে ঋণ  না নিয়ে অন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছেন।

ব্যবস্থাপকের হয়রানি অব্যাহত থাকায় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহিতা ও ‌আবেদনকারী অনেক গ্রাহক ব্যাংকটির জিএমসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, শাখা ব্যবস্থাপক মাহবুব কামাল বিন খালেদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ জন গ্রাহক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে পাঠানো ১২টি অভিযোগ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের হাতে রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি অভিযোগ ব্যাংকের জিএম বরাবর দেওয়া হয়েছে।

বৈধ কাগজ পত্র থাকার পরও বিগত আটমাস ধরে চেষ্টা করেও ঋণ পাননি আনোয়ারা তৈলার দ্বীপ গ্রামের ব্যবসায়ী শওকত আলী। ব্যবস্থাপকের হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে চলতি মাসের ৯ তারিখ মহাব্যবস্থাপক বরাবর লিখিত অভিযোগ পাঠান তিনি।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তিন হাজার সেটের ব্রয়লার খামার এবং প্রশিক্ষণ সনদ থাকা সত্ত্বেও ঘুষের টাকা না দেওয়ায় ঋণ পাননি তিনি।

শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ১৪ গণ্ডা জমি এবং ১২ কানি জমির দলিল জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ২ লাখ টাকা ঋণ পাইনি। অথচ আমার সামনেই প্রকৃত দলিল ছাড়া একাধিক গ্রাহককে ঋণ দিয়েছেন তিনি। ’ 

ব্যবস্থাপকের দাবি অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় উপযুক্ত দলিল থাকার পরও ঋণ পাননি বলে অভিযোগ তার।

ঘুষ কম তাই কমলো ঋণ:
হয়রানি, ঘুষ গ্রহণ ও স্ট্যাম্পের অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন হেফাজুর রহমান।

বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও ছয় মাস আবেদন ফরম দেয়নি উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, ব্যাংকের একটি বৈঠকে উপস্থিত ৬জনের দুপুরের খাবারের বিল পরিশোধ করতে বলেন মাহবুব কামাল। এরপর তার কাছ থেকে আরো ২ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। দাবিকৃত ঘুষ দিতে না পারায় ১ লাখ টাকার পরিবর্তে ৬০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয় তাকে।

সহযোগী সুজন:
গ্রাহকদের অভিযোগ, কেবল শাখা ব্যবস্থাপক নয় ওই শাখার সেকেন্ড অফিসার সুজন কান্তি পালও গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে ঘুষ আদায় করে চলেছেন।  

এই  সুজন শাখা ব্যবস্থাপকের একান্ত সহযোগী। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি কেবল তারা দুইজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এমনকি অন্য কোন কর্মকর্তার সামনে ঘুষ দিতেও বারণ করেন মাহবুব কামাল।

‍অভিযোগের বিষয়ে মাহবুব কামাল বিন খালেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বচ্ছতার সঙ্গেই কাজ করছি আমি। যারা ‍অভিযোগ দিয়েছেন তারা আমার সামনে এসে বলতে পারবেন না। ’

তবে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলছেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপপক্ষের  কাছে অভিযোগ দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে একাধিক গ্রাহকের বাড়িতে গিয়েেএরকম অভিযোগ না দেওয়ার জন্যে তিনি অনুরোধ করেছেন বলে অনেকে দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।