চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলায় প্রথমবারের মত খেলতে আসা নারায়নগঞ্চের আড়াই হাজারের হাবিবুর রহমান বলিকে মাত্র দশ সেকেন্ডে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন দিদার বলী।
এর আগে সেমিফাইনালে মাত্র ৫০ সেকেন্ডে বান্দবানের ক্যা হলপ্রু মারমাকে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেন রামুর দিদার।
জয়ের পর রামুর দিদার বলী তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, “প্রত্যেকবার চ্যাম্পিয়ান হওয়ার আশা নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, বিগত তিন বছর প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারার বেদনা আমাকে এখনো তাড়া করে। আগে থেকে আশা ছিল অংশ নিতে পারলেই জয়ী হতে পারব এবং জয়ী হয়েছি।
সারাদেশ থেকে আসা ১৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১০৩ জন বলী খেলা প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডে অংশ নেন। প্রতিযোগিতায় যেমন লড়েছেন পাথরঘাটার ১১ বছর বয়সী শাখাওয়াত ও সোহাগ যেমন লড়েছেন তেমনি হাটহাজারী ও পতেঙ্গা থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ মফিজ মিয়া, খাজা আহামদও। ১০৩ জন বলীর মধ্যে থেকে নক্ আউট ভিত্তিতে রাখা হয় ৫১ জনকে।
সবশেষে শুরু হয় চ্যালেঞ্জ রাউন্ড। এতে অংশ নেন রামুর দিদার, নারায়নগঞ্জের হাবিবুর রহমান, কুতুবদিয়ার থোরশেদ সিকদার এবং বান্দরবানের ক্যা হলপ্রু মারমা।
খেলা শেষে বিজয়ী দিদার বলী ও হাবিবুর রহমানের হাতে যথাক্রমে নগদ ১৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা ও ট্রফি তুলে দেন চ্যানেল আই’র বার্তা প্রধান শাইখ
সিরাজ। এছাড়া প্রথম রাউন্ডে জয়ী সবাইকে দেয়া হয় ৫০০ টাকা করে নগদ পুরস্কার।
আয়োজক কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিজিকেএস এর সাধারণ সম্পাদক ও রাজনীতিবিদ আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার, কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার ও বাংলালিকের কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
প্রথমবারের মত খেলতে আসা নারায়নগঞ্চের আড়াই হাজারের হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমবার এসে রানার আপ হওয়া একটি গৌরবের বিষয়।
তিনি বলেন, আমি জাতীয় কাবাডি দলে বেশ কয়েকবার চ্যাম্পিয়ান হয়েছি। ইচ্ছে ছিল জব্বার মিয়ার বলী থেলায় চ্যাম্পিয়ান হওয়ার।
এবার চ্যাম্পিয়ান হতে না পারলেও আগামীবার জয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
শুক্রবার দুপুর থেকেই লালদীঘির ময়দানে আসতে শুরু করেন বলীখেলার প্রতিযোগীরা। বিকেল ৪টার আগেই দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে লালদিঘী ময়দান। মাঠে স্থান না পেয়ে আশপাশের ভবনের ছাদে অবস্থান নেন কৌতূহলী দর্শক।
ঢাকঢোল বাজিয়ে বলীখেলার মঞ্চের চারপাশে ঘুরছিল বাদক দল। বিকাল ৪টায় দিকে ঢোলের তালে তালে শুরু হয় জব্বারের বলী খেলা। খেলা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আবদুল মালেক।
১৯০৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে স্থানীয় বদরপতি এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করেন। পরবর্তীতে তাঁর নামানুসারেই এ খেলার নামকরণ করা হয় ‘জব্বর বলী খেলা’।
এদিকে জব্বারের ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের বৈশাখী মেলা। নগরীর লালদীঘি মাঠকে ঘিরে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বসেছে এই মেলা।
প্রতিবারের মতো এবারও বৈশাখী মেলায় হরেক রকম পসরা নিয়ে ভিড় করেছেন দোকানিরা। আন্দরকিল্লাহ থেকে কোতোয়ালী মোড়, আসাদগঞ্জ থেকে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত চলছে মেলার বেচা বিক্রি। মেলায় হাতপাখা, শীতল পাটি, মাটির কলস, চুড়ি, ফিতা, রঙ্গিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি,বাঁশ ও বেতের নানা তৈজসপত্র,কাঠের পুতুল,নকশী কাঁথা, প্লাস্টিক, মুড়ি মুড়কি, লাড্ডুসহ নানা সামগ্রী। চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে মানুষ এসেছে শতবছরের পুরনো এই মেলায় পুরো বছরের জন্য তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৪