চট্টগ্রাম: মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধি হিসেবে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার করেছেন চট্টগ্রামের সরকারদলীয় সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী। নিজ নির্বাচনী এলাকা পটিয়ার পাশাপাশি সাগরবেষ্টিত বিচ্ছিন্ন জনপদ সন্দ্বীপের সাংসদকেও একই কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘পটিয়া ও সন্দ্বীপের মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবায় কিশোরী ও নারীদের অভিগম্যতা বৃদ্ধি এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝড়ে পরা রোধ’ বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী এসব অঙ্গীকার করেন।
পটিয়া, সন্দ্বীপ ও চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক পলিসি ফোরাম জেলা পর্যায়ের এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পটিয়ার সাংসদ।
সেমিনারে তিনি বলেন, পাবলিক পলিসি ফোরামের আগের একটি সেমিনারে ধারণা পেয়েই আমি সারাদেশে নতুন নির্মাণাধীন বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব সংসদে দিয়েছি। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এটা বাস্তবায়িত হলে ছাত্রীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমবে। পাশাপাশি কমবে বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ার হারও।
সামশুল হক চৌধুরী বলেন, পাবলিক পলিসি ফোরামের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। তিন বছর আগে ফোরামের সেমিনারে উপস্থিত থাকার পর আমি পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলাম। দেখি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতার অভাব। সেবার মানও ভাল না। এরপর আমি নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। পাবলিক পলিসি ফোরামের সঙ্গে থেকে এখাতে ভবিষ্যতে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন সাংসদ।
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ থেকে এক’শ শয্যায় উন্নীতকরণ, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন প্রদান, আরও একটি অ্যাম্বুলেস ও চালকের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী।
পাশাপাশি সন্দ্বীপ উপজেলার দুটি সী অ্যাম্বুলেন্স, হারামিয়া হাসপাতালে জনবল নিয়োগ ও প্রসুতি মাতৃসেবা নিশ্চিত করতে সন্দ্বীপের সাংসদের সঙ্গে একযোগে কাজ করারও ঘোষণা দেন তিনি।
সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পর্যায়ে একাধিক ইসিজি মেশিন না থাকা অত্যন্ত দুখঃজনক। যেসব যন্ত্র থাকে তা-ও সচল থাকে না। সন্দ্বীপে চিকিৎসকরা থাকতে চান না। সন্দ্বীপের মত উপজেলায় চিকিৎসকদের রাখতে হলে আলাদা বেতন স্কেলসহ পরবর্তীতে পেশাগত সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সন্দ্বীপ উপজেলায় একটি ব্লাড ব্যাংক স্থাপন, একজন অ্যানেসথেসিয়ান নিয়োগ ও চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথি জেলা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, উপজেলা পর্যায়ে যে অবকাঠামো আছে তা আপাতত প্রতুল। তবে জনবল নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হলে প্রণোদনা ও পরবর্তীতে উচ্চতর শিক্ষায় অগ্রাধিকারসহ বিভিন্ন সুযোগ দেয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করে দেখতে পারে।
সেমিনারে পাবলিক পলিসি ফোরামের সদস্য সচিব শরীফ চৌহান গত তিন বছরের কর্মকাণ্ড ও অর্জন তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১১ সালের আগস্টে পাবলিক পলিসি ফোরামের কাজ শুরুর সময় পটিয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক ছিল ২৩টি। এখন এ সংখ্যা ৪৪টি। ফোরামের দাবির প্রেক্ষিতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন অ্যানেসথেসিয়ান নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এর পাশাপাশি রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ এবং সেবা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করেছি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের উচিত সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। উপজেলা পর্যায়ে করা রোগ নিরূপণের প্রতিবেদন শহরের চিকিৎসকরা গ্রাহ্য করেন না। এতে রোগীর সময় ও অর্থ নষ্ট হয়।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জেমস গোমেজ, সন্দ্বীপ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফোরকান উদ্দিন আহমদ, সন্দ্বীপ পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মাস্টার আবুল কাশেম শিল্পী ও ফোরাম সদস্য মাস্টার কামাল উদ্দিন তালুকদার, পটিয়া পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক পঙ্কজ চক্রবর্তী, পটিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশীষ চৌধুরী, ডা. দিদারুল মনির রুবেল ও সন্দ্বীপ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আ ক ম ফোরকান উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম বক্স চৌধুরী, পটিয়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস ও বিএনপিএস’র চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. ফেরদৌস আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২২,২০১৪