ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি, দুশ্চিন্তায় চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ

মো.মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৪
বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি, দুশ্চিন্তায় চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রাম: গত বছর হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতায় বড় ধরণের রাজস্ব ঘাটতিতে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

রাজস্ব ঘাটতির এ হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ছ’মাসে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব ঘাটতি দেড় হাজার কোটি টাকা হলেও তার দুই মাস পর ঘাটতি দাড়িয়েছে দুই হাজার কোটি টাকায়।

ঘাটতি কমাতে চলতি বছরের শুরুতে সাতটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।
তবে এসব উদ্যোগের কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ঘাটতি কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। ফলে ঘাটতি পূরণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় কর্মকর্তারা।

রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খোলেননি। ফলে আমদানি রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরের আট মাসেই(জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। এ আট মাসে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রার বিপরিতে আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০কোটি টাকা।

ঘাটতি কমানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিল অব এন্ট্রি দাখিল হওয়া চালান দ্রুত শুল্কায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বড় ধরনের রাজস্ব জড়িত, গুরুত্বপূর্ণ এমন মামলাগুলো কজ লিস্টে তুলে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে চিঠিও দেওয়ার পাশাপাশি যেসব মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, সেগুলোর বিপরীতে প্রদত্ত ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
 
এছাড়া বন্দরে পণ্য পৌঁছার ৩০ দিনের মধ্যেও যেসব আমদানিকারক তা খালাস করেননি, সেগুলো নিলামে তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন প্রতি মাসে নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নাম, ঠিকানা বা এ-সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য পাওয়া গেলে আমদানি চালান শুল্কায়নকালে কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ৩২ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে আগের চেয়ে কঠোরতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রতি মাসে অন্তত একবার মতবিনিময় সভারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শুল্ক বিভাগের দৈনন্দিন কার্যক্রম গতিশীল করতে আন্তঃকমিশনারেট যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তবে এসব উদ্যোগের তেমন কোন সুফল মিলছে না। আমদানি-রফতানি কম হওয়াতে এসব পদক্ষেপের সুফল মিলছে না বলে মনে করছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।  

চট্টগ্রাম কাস্টম  অতিরিক্ত কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় কাস্টম হাউসের রাজস্ব আহরণে প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসেই রাজস্ব ঘাটতি দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

রাজস্ব আহরণ-সংক্রান্ত আমদানি নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ১৭টি পণ্য আমদানিতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে। এসব পণ্যের আমদানি অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকায় চলতি অর্থবছরে রাজস্ব কমতে থাকে।

আমদানি কমে যাওয়া এসব পণ্যের তালিকায় আছে শ্যাম্পু, রিকন্ডিশনড গাড়ি, মোটরসাইকেল, বাস ও ট্রাকের টায়ার, হটরোল্ড কয়েল (ইস্পাতের কাঁচামাল), রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনিং মেশিন, ইলেকট্রিক ফ্যান, ইনস্যুলেটেড ওয়্যার, ডাই-সোডিয়াম কার্বোনেট, অ্যালমুনিয়াম প্রোডাক্ট, লাইটিং ফিটিংসের যন্ত্রপাতি ও কমলা।

জামান কো‘র স্বাত্ত্বাধিকারী ও সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সাইদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর জুড়েই ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। ফলে ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।