ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে কাজ করবেন ১৮ দলের নেতারা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে কাজ করবেন ১৮ দলের নেতারা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: তফসিল অনুযায়ী ভোটের মাত্র দশদিন বাকি থাকলেও নির্বাচনকে সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ করা নিয়ে এখনও আশংকার মধ্যে আছেন চট্টগ্রামের প্রশাসন। ঝুঁকি কাটিয়ে ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করতে প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছে।



অন্যদিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনপ্রতিনিধিরা সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এমনকি ১৮ দলীয় জোটের কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহযোগিতা করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।


বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ডিসি আব্দুল মান্নান জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, অন্তর থেকে বলছি, আমাদের সহযোগিতা করুন। চট্টগ্রামে যদি আমরা একটি সহিংসতাবিহীন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে পারি, সেটা মাইলস্টোন হবে।

পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার জনপ্রতনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে এখনও কিছুটা শংকা আছে। চট্টগ্রামে এখনও যেসব সহিংসতা ঘটছে, গরু পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, নিরীহ মানুষকে মারা হচ্ছে, তাতে শংকা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচনে যাতে কেউ বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। নাশকতার বিরুদ্ধে এলাকায় গিয়ে মোটিভেশন করুন।

সভায় বাঁশখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া এলাকার জনপ্রতনিধিরা তাদের এলাকায় ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেন।

বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ দলীয় পৌর মেয়র শেখ ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, সারাদেশের চিত্র একরকম আর বাঁশখালীর চিত্র ভিন্ন। বাঁশখালীকে আপনারা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করুন। সেখানে বিএনপি-জামায়াত শক্ত ঘাঁটি তৈরি করেছে। বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র ফোর্স দিন। ঝুঁকিমুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে সব ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবে।

এসময় বাঁশখালী উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়ামুন নাহার পৌর মেয়রের বক্তব্যকে সমর্থন করলে জেলা প্রশাসক তাদের নির্বাচনের সময় গ্রামে অবস্থান করার অনুরোধ করেন।

আনোয়ারার আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম সওগাত বলেন, আনোয়ারায় বিরোধী দল যে সংগ্রাম কমিটি করেছে সেটাকে অবহেলা করলে চলবেনা। সেটা খুবই শক্ত। এদের মোকাবেলা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দেব।

পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইদ্রিস মিয়া বলেন, পটিয়ায় সরকারী দল ও বিরোধী দলের মধ্যে কোন সংঘাত নেই। আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখি। হরতাল-অবরোধের মধ্যে পটিয়ায় কোন গাড়ি ভাংচুর হয়নি, কোন গাড়িতে আগুন দেয়া হয়নি। নির্বাচনেও কোন সমস্যা হবেনা। আমি সহযোগিতা দেব।

এসময় ডিসি তাকে বলেন, ভোটের দিন আপনি নিজে এলাকায় থাকবেন কিনা সেটা বলুন। এসময় ইদ্রিস মিয়া হাত তুলে থাকবেন বলে জানান।

পটিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু বলেন, পটিয়ার ভোটাররা বিশেষ করে নারীরা ভোটকেন্দ্রে আসতে আগ্রহী। তারা টেলিফোন করে জানতে চান, ভোট হবে কিনা, ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা ? আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি যে, ভোটকেন্দ্রে কোন সমস্যা হবেনা। এখন ভোটকেন্দ্রে আসতে এবং ফিরে যেতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেটা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।

সাতকানিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান আব্দুল মোনাফ বলেন, সাতকানিয়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। জামায়াত-শিবির এখানে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আপনাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।

লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এলডিপি নেতা জিয়াউল হক বাবুল বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, কোন সমস্যা যাতে না হয় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখব।

লোহাগাড়ায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিবাস সরকার বলেন, কয়েক মাস ধরে লোহাগাড়ায় বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের দু’তিনজন নেতার ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে আপনাদের আরও বেশি নজর দিতে হবে।

বাঁশখালীর বিএনপি দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর কবির চৌধুরী বলেন, আশা করি বাঁশখালীতে কোন সমস্যা হবেনা। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে যাতে হয় সেজন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব।

চন্দনাইশ উপেজলা চেয়ারম্যান এলডিপি নেতা আব্দুল জব্বার বলেন, খবর পেয়েছি আমার নাম নাকি নাশকতাকারী হিসেবে যৌথবাহিনী তালিকাভুক্ত করেছে। আমি তো কোন নাশকতার সঙ্গে যুক্ত নই। আমি যাতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে, সেই চেষ্টা করছি।

রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুল বলেন, নির্বাচন ৫ তারিখ হবেই। দয়া করে কেউ কারও বাড়িঘরে আগুন দেবেন না। দু:খ লাগলে টেলিফোনে গালিগালাজ করবেন।

সভায় পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী দাবি জানান, নির্বাচনের জন্য প্রথমে বিআরটিসি’র সব গাড়ির পর যেন ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়িগুলো রিকুইজিশন করা হয়। আর নির্বাচনের সময় যানবাহন যাতে ভাংচুরের শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা যারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন ফোর্স, আমরা সবাই এখন নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী। আমার অনুরোধ, জনপ্রতিনিধিরা সবাই আমাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করুন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কেউ যদি ভয় পেয়ে দায়িত্বে অবহেলা করেন, সেটি হবে আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘণ।

তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদল বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়েছে বলে শুনেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহিংসতা মোকাবেলায় আমরাও কাজ শুরু করেছি। গাছ কাটার বিরুদ্ধে উপজেলায় উপজেলায় প্রচারণা চলছে। যাদের বাড়িতে গাছ কাটার যন্ত্রপাতি পাওয়া যাবে তাদেরও গ্রেপ্তারের আদেশ আমরা দিয়েছি।

তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপানার ভোটারদের মৌখিভাবে সহযোগিতা করুন। তাদের আশ্বস্ত করুন যে ভোটকেন্দ্রে আসতে কোন সমস্যা নেই। এবার নারীদের রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবেনা। তাহলে হয়ত তারা কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হবে।

তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আপনারা সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন। আমি বিষয়টি মনে রাখব। ভোটের দিন আমরা বিভিন্ন এলাকায় দেখতে যাব।

সভায় পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, নির্বাচনে অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেয়া যাবেনা। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ গাফেলতি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা কমিটির এ বিশেষ সভায় সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, জেলা পরিষদ, নির্বাচন অফিসসহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫,২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।