চট্টগ্রাম: সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামার পালা। চারপাশ আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে হিম-কুয়াশার চাদরে, আর তা ভেদ করে শহরের এক কোনে হাজারো আলোর মেলা।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় প্রতীকী যীশুকে কোলে নিয়ে প্রার্থনা কক্ষে ঢুকেন গীর্জার ফাদার লিওনার্ড রিবেরো। যীশুকে সম্মান জানাতে দাঁড়িয়ে যায় হল ভর্তি ভক্তরা। এরপর যীশুর জন্মলগ্নকে স্মরণ করে শুরু হয় ভক্তদের প্রার্থনা।
ক্রিসমাস ইভ উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন গীর্জায় প্রার্থনায় জড়ো হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রায় দু’হাজারের বছরের বেশি দিন আগে এমনি রাতে পৃথিবী আলোকিত করে বেথেলহেমের গোয়ালঘরেই জন্ম নিয়েছেন যীশু খ্রীস্ট। যীশু খ্রিস্টের আবির্ভাব আগের রাতকে বলা হয় ‘ক্রিসমাস ইভ’।
তবে এবার বড়দিনের আগে বিরোধী জোটের অবরোধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন। এটাকে তারা ধর্মীয় উৎসবে বাধা হিসেবে দেখছেন।
দেশের অস্থিতিশীল পরিবেশকে সামনে রেখে গীর্জায় করা হয় বিশেষ প্রার্থনা। দু’হাজার বছর আগে স্বর্গের দূতেরা যীশুর জন্মবারতা জানিয়ে যেভাবে গেয়ে উঠেছিলেন সেভাবে এ শুভক্ষণে সবাই গেয়ে উঠেন, ‘ঊর্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা এবং পৃথিবীতে তাঁহার প্রিয়পাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি। ’
দু’হাজার বছর আগে যীশু বলেছিলেন,‘আমি জগতের আলো, যে আমার অনুসরণ করে, যে কখনো অন্ধকারে চলবেনা, সেতো জীবনের আলো লাভ করে। ’
যীশুর সে বাণীতে অনুপ্রাণিত হয়ে খ্রিস্ট ভক্তরা গীর্জায় জড়ো হয়ে প্রার্থনায় রত হন। গীর্জার পুরোহিতের মুখে মুখে ভক্তরা যীশুকে স্মরণ করে বলেন, ‘হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক। তোমার রাজ্য আসুক। তোমার ইচ্ছা যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও পূর্ণ হোক। যে খাবার আমাদের দরকার তা আজ আমাদের দাও। যারা আমাদের উপর অন্যায় করে, আমরা যেমন তাদের ক্ষমা করেছি তেমনি তুমিও আমাদের সমস্ত অন্যায় ক্ষমা কর। আমাদের তুমি পরীক্ষায় পড়তে দিয়ো না, বরং শয়তানের হাত থেকে রক্ষা কর। ’
এছাড়া বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বেথলেহেমের সেই আবহ সৃষ্টি করতে গীর্জায় তৈরি করা হয়েছে প্রতীকী গোশালা। গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন করে। বুধবার সকালে এ গীর্জায় প্রার্থনা পরিচালনা করবেন বিশপ মোজেস কস্তা।
ফাদার লিওনার্ড রিবেরো বাংলানিউজকে বলেন, ‘এইদিনে ইশ্বর মানুষকে ভালবেসে মানুষের আকৃতি ধারণ করে পৃথিবীতে এসেছিলেন। তিনি পৃথিবীকে পাপ মুক্ত করেন। আজকেও আমরা যীশুর পৃথিবীতে আবির্ভাবকে স্মরণ করে তার পথে চলার প্রার্থনা করি। তার আদর্শে যেন উজ্জীবিত হয়ে সারা জীবন চলতে পারি সে প্রার্থনায় করা হবে। এ ছাড়া দেশের শান্তি কামনা করেও প্রার্থনা করা হয়। ’
তিনি জানান, রাত ১২টায় আরেকবার প্রার্থনা করা হবে। এছাড়া বড়দিনের সকালে আবারো প্রার্থনায় নত হবে যীশু ভক্তরা।
পরিবার নিয়ে প্রার্থনায় যোগ দিতে এসেছেন এলেক্সসেস সেরাও। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘অবরোধের কারণে অনেকে পরিবারের সঙ্গে গিয়ে উৎসব পালন করতে পারছে না। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে অনেকে বিদেশ থেকে উৎসবে যোগ দিতে পারেনি। যা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে মর্মাহত করেছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।