চট্টগ্রাম: আহসান উল্লাহ। বয়স ৩৫।
মহাসড়কে পুলিশি নিরাপত্তায় গাড়ি পার করা হচ্ছে শুনে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রাকে মাল বোঝাই করে ঢাকায় উদ্দশ্যে রওনা হন। সীতাকুণ্ডের বড় দারোগা হাট এলাকায় অবরোধ সমর্থকদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। পুড়ে যায় শরীরের ২৫ শতাংশ।
জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আহসান। কাছে যেতেই কি যেন বলতে চেয়েও পোড়া মুখ নিয়ে বলা সম্ভব হয়নি তার। অনেক চেষ্টার পরও বলতে ব্যর্থ হয়ে চোখ বন্ধ করে ঝিমিয়ে পড়েন।
আহসানের সঙ্গে থাকা আরেক চালক মো. রহিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ট্রাকটি আমাদের দু’জনের। নিজেরাই চালায়। রাস্তায় গাড়িতে আগুন দেওয়ার কারনে প্রায় ২০ দিন গাড়ি বের করিনি। জানতে পারি পুলিশ প্রহরায় গাড়ি সীতাকুণ্ডে পার করে দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার তার পীড়াপীড়িতে গাড়ি বের করি। ’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ট্রাক নিয়ে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগা হাট এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন পার হওয়ার পরই দেখি একদল যুবক গাড়ি ভাংচুর করছে। তাড়াতাড়ি গাড়িটি সড়কের পাশে একটি পেট্টল পাম্পে ঢুকাতে যাওয়ার সময় ওই যুবকরা গাড়ি লক্ষ্য করে কি যেন ছিটিয়ে দিয়ে আগুন দেয়। তাৎক্ষনিক আগুন ছড়িয়ে পড়লে আমি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে গেলেও আহসান গাড়ি পার্ক করতে গিয়ে বের হতে পারেনি। ’
রহিম বলেন, ‘রাস্তার পাশে বালুর রাখা ছিল। তাড়াতাড়ি বালু দিয়ে আগুন নিভিয়ে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। ’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক ডা. মিশমা ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগুনে আহসানের শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার মুখ, পিঠ ও শরীরের নিচের অংশ দগ্ধ হয়েছে। আগুনে শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় কোনভাবেই আশঙ্কামুক্ত নন তিনি। ’
আহসান লক্ষীপুর জেলার কমলনগর থানার চর মার্টিন ইউনিয়নের আহমদুল্লাহ’র ছেলে। আহসান দু’সন্তানের জনক। বড় মেয়ে লাজু আকতার পড়েন চতুর্থ শ্রেনীতে। ছোট ছেলে জিহাদ হোসেন পড়েন প্রথম শ্রেণীতে। ধার দেনা করে কয়েক মাস আগে যৌথ মালিকানায় কিনেন ট্রাকটি। দেখেছিলেন স্বচ্ছল হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু তার আগেই অবরোধের আগুনে পুড়েছে তার দেহ। সঙ্গে পুড়েছে তার স্বচ্ছল হওয়ার সম্বলটিও।
আহসান উল্লাহ’র বড় ভাই আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক চালাতেন আহসান। কয়েক মাস আগে সবাই মিলে ধার দেনা করে গাড়িটি কিনে দেয়। গাড়ির আয় দিয়েই চলে তার সংসার। বেশ কিছুদিন গাড়ি বের করতে না পারায় পরিবারের অনটন দেখা দেয়। তাই এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম চলে যায়। বুধবার সকালে শুনি সে পোড়ে গেছে। অবরোধের কারণে ঘর থেকে বের হয়েও চট্টগ্রাম যেতে পারছি না। ‘
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরীহ লোকদের পুড়ে দিয়ে লাভ কি। এখন অবরোধের কারণে আমার ভাইটিকে দেখতেও যেতে পারছি না। নিজেদের সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। এখন চিকিৎসা করাবো কিভাবে। এ দেশে গরীবের কোন বিচার নেই। আল্লাহর কাছেই এ বিচার দিলাম। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।