ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিপন্ন শ্রীমঙ্গলের ‘ভুরভুরিয়া নদী’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
বিপন্ন শ্রীমঙ্গলের ‘ভুরভুরিয়া নদী’

মৌলভীবাজার: অতীতের অত্যাচারে বিপন্ন হয়ে পড়েছে শ্রীমঙ্গলের ভুরভুরিয়া নদী। এর বিভিন্ন স্থানের পাড়গুলো ভেঙে গেছে। ধ্বংস হয়েছে এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা নানান ধরনের জীববৈচিত্র্য।

এক সময় এখানে ঘাট বানিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ করা হয়।

কিন্তু তারপরেও প্রকৃতি তার বদলা নিতে ভুল করেনি। দুর্বল হয়ে গেছে চা জনপদ বেষ্টিত এই নদীর প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য।
 
ভুরভুরিয়া নদীটি বালিসিরা টিলা থেকে উৎপন্ন হয়ে হাইল হাওরের সঙ্গে মিশেছে। সারাবছর পানি থাকে, মোহনার দিকে মাছও মেলে। এ নদীর সবচেয়ে বড় উপযোগিতা হলো চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীরা এ নদীর পানি গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহার করে থাকেন।  

‘নদী গবেষক এবং রিভারাইন পিপল’ এর মহাসচিব শেখ রোকন ভুরভুরিয়া সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক সংজ্ঞানুযায়ী যে কোনো প্রাকৃতিক প্রবাহমান জলধারাকে অবশ্যই নদী বলা যাবে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক প্রবাহ মাত্রই ‘নদী’। সে হিসেবে ভুরভুরিয়া একটি নদী। স্থানীয়ভাবে ‘খাল’ বা ‘ছড়া’ বলে এ নদীটিকে ক্ষুদ্র অর্থে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক এ জলধারার গুরুত্ব অনেকাংশে কমিয়ে প্রবাহটি মেরে ফেলার আয়োজনও পোক্ত করা হচ্ছে।  
শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ভুরভুরিয়া নদী।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপননদীর পুনঃজীবন সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘নদীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। বালু উত্তোলন যে কোনো নদীর জন্য খারাপ। বিশেষ করে ভুরভুরিয়ার মতো ছোট নদীগুলোর জন্য তো বেশি খারাপ। তা নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। আপনি ব্রহ্মপুত্র, যুমনা বা পদ্মায় বালু উত্তোলন করলেন; সেটা বড় দেহের কারণে সেই নদীগুলো এক সময় তার ক্ষতিটি কাভার করে ফেলে। কিন্তু ভুরভুরিয়াতে আপনি যখন বালু তুলবেন তখন ছোট দেহের কারণে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ’ 

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘যেমন ধরুন- আলপিন দিয়ে আমাদের শরীরে খোঁচা দিলে আমরা হয়তো কিছুটা ব্যথা পাবো; কিন্তু সেই আলপিন দিয়ে যদি পিঁপড়ার শরীরে খোঁচা দেয় হয়, তাহলে তার তো জীবনই শেষ। কারণ সে তো ছোট। ওই খোঁচার আঘাত সে সহ্য করতে পারবে না। ছোট নদীর ক্ষেত্রে বালু উত্তোলনের বিষয়টা সম্পূর্ণ এমনই। ’
 
তিনি আরো বলেন, বালু উত্তোলনের দুটো খারাপ দিকের মাঝে একটা হলো তা নদীর কাঠামো নষ্ট করে দেয়। বালুর এই যে স্তর এবং নদীর বেগ তা শত শত বছর বছর ধরে গড়ে উঠেছে। আপনি যখন সেই নদীর একটি অংশ খুঁড়ে ফেললেন তখন ওখানে গর্ত হবে এবং পানি এসে ঘূর্ণিপাক খেতে খেতে মাটিতে চর পড়বে। তখন বালিগুলো আলগা হয়ে যাবে। চর পড়লেই সেখানে ভাঙন দেখা দেবে। ভুরভুরিয়া নদীর দুইপাড় ভাঙন দেখা দিয়েছে।  
শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ভুরভুরিয়া নদী।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনবালু উত্তোলনের আরেকটি ক্ষতির দিক হলো- একটা নদী যখন সেটেল (আপনা থেকেই নির্মিত) করে, তখন এর উপর ভিত্তি করে মৎস্যসম্পদ, উদ্ভিদসহ নানান জীববৈচিত্র্য গড়ে উঠে। বালু উত্তোলন করলে এই সমস্ত কিছু নষ্ট হয়ে যায়। মাছের ডিম পাড়ার জায়গা নষ্ট হবে এবং অন্যান্য আরো প্রাণী আছে এদের অস্তিত্ব পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শহরতলী ঘেঁষা এই ভুরভুরিয়া নদীকে টিকিয়ে রাখতে তার উপর আমাদের নজরদারী রয়েছে। এখন আর সেখান থেকে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হচ্ছে না।
 
শ্রীমঙ্গলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় দু’ডজনের বেশি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
  
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
বিবিবি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।