ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ায় গাছ নিধন: হুমকিতে জীববৈচিত্র্য 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৪ ঘণ্টা, মে ৮, ২০১৮
লাউয়াছড়ায় গাছ নিধন: হুমকিতে জীববৈচিত্র্য  লাউয়াছড়ার কেটে ফেলা বৃক্ষ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: হুমকির মুখে পড়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। সংঘবদ্ধ গাছচোরেরা যেমন অবাধে চুরি চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি জাতীয় উদ্যানের নীতিমালা ভঙ্গ করে ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছগুলোকেও কেটে স্থানান্তর করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে লোহাকাঠ, চাপালিশ, জারুলের মতো বিশালাকৃতির ও মূল্যবান গাছ। এছাড়া রাতের আঁধারে পাচার হচ্ছে সেগুন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ক্ষতি হচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্যের। 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো এবং সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান দু’জনেই  সম্প্রতি বদলি হওয়ার পর থেকে ভেঙে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। প্রায় দুই বছরের অধিক সময় ধরে দমে যাওয়া সংঘবদ্ধ গাছচোরচক্র এখন সক্রিয়।

এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বনবিভাগের অসাধু কর্মচারীরা। প্রতি সপ্তাহেই লাউয়াছড়া থেকে উজাড় হচ্ছে দু-চারটি করে মূল্যবান বৃক্ষ।  

সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন বিটে গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ে ভেঙে পড়া বিশালাকৃতির গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। টুকরো টুকরো অংশগুলো ছড়িয়ে রাখা হয়েছে বনের ভেতরে। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলার পাকা সড়ক থেকে অনেক ভেতরের গাছগুলোকে করাত দিয়ে কেটে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এই একেকটি গাছের বয়স পঞ্চাশ থেকে শতবৎসর।  লাউয়াছড়ার কেটে ফেলা বৃক্ষ।  ছবি: বাংলানিউজ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এএম শামসুল মুহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘গাছগুলো ঝড়ে পড়েছে। তাই এগুলো কেটে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। ’ 

লাউয়াছড়াসহ অন্যান্য সংরক্ষিত বনের ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ স্থানান্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে – এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই তো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হলে সব দিক থেকেই লাভ হবে। ’ 

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রচলিত আইন রহিতপূর্বক দেশের জীববৈচিত্র্য, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানকল্পে প্রণীত ২নং আইনের ১২নং ধারায় উল্লেখ আছে: ‘কোর জোন’ অর্থাৎ রক্ষিত এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যমান বন এলাকা, যাহা জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বংশবৃদ্ধির জন্য সকল ধরনের বনজদ্রব্য আহরণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ এবং পর্যটক প্রবেশ সীমিত করার জন্য ব্যবস্থাপনা করা হয় এবং যাহা এই আইনের ধারা ২০ অনুসারে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষিত।  

এ বিষয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইসতেয়াক সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জাতীয় উদ্যানগুলো থেকে গাছ কেটে নিয়ে আসার কোনও প্রয়োজন নেই। ঝড়ে দু-চারটি গাছ যদিও পড়েও যায় তবে সেগুলো ওইভাবেই ফেলে রাখা উচিত। সেটা ওই বনের পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত উপকারী।  

লাউয়াছড়ার কেটে ফেলা বৃক্ষ।  ছবি: বাংলানিউজ
ইসতেয়াক আরও বলেন, ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছগুলো দিনের পর দিন মাটিতে পড়ে থাকতে থাকতে পঁচবে এবং সেটা থেকে রিসাইকেল হবে। একটা গাছ যখন বনের মধ্যে প্রাকৃতিভাবে পঁচে সেটাও অনেক রকম লাইফকে সার্পোট দেয়। কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে ব্যাঙ, সাপ প্রভৃতি জীববৈচিত্র্যের খাদ্যশৃঙ্খল তৈরিতে দারুণ ভূমিকা পালন করে।

বৃক্ষ কর্তন সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, বনে ঝড়ে পড়া মূল্যবান বৃক্ষ কেটে রাজস্ব আহরণের জন্য সরকার নীতিগতভাবে কখনও দায়িত্ব দেয়নি বনবিভাগকে। বনবিভাগের দায়িত্ব কনজারভেশন করা, প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করা।  রাজস্ব আয় করা নয়। বন বিভাগের ঝড়ে পড়া গাছই হোক কিংবা নরমালভাবে কাটা গাছই হোক এগুলো কাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।  

কয়েক বছর আগে সিডরের সময় সুন্দরবনের হাজার হাজার গাছ যখন পড়ে গিয়েছিলো, সরকার তখন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এগুলো কোনও কিছু করবে না। কেটে আনবে না বা সরাবেও না। পরবর্তীতে দেখা গেল ওই সিদ্ধান্তই  ঠিক ছিল এবং তাতেই সাফল্যই পাওয়া গিয়েছিল বলে জানান এ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪২ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০১৮
বিবিবি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।