ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লেক-জলাশয় শুকিয়ে বিবর্ণ বোটানিক্যাল গার্ডেন

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮
লেক-জলাশয় শুকিয়ে বিবর্ণ বোটানিক্যাল গার্ডেন এমনই দশা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের লেক-জলাশয়গুলোর। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: কোথাও ছড়ানো-ছিটানো, কোথাও সারিবদ্ধ ফুল, ফল, ওষুধিসহ নানা প্রজাতির সবুজাভ গাছ। গাছের ফাঁকে ছোট-বড় ইট বিছানো পথ। সবুজ গাছ-গাছালির ছাউনিবেষ্টিত পথগুলোতে যেন রাজ্যের নীরবতা। ফাঁকে ফাঁকে কৃত্রিম লেক ও জলাশয়ের পাড়ে সবুজ ঘাসে বা ছোট্ট বেঞ্চিতে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ।

এমনই সুনশান, নিরিবিলি ও সবুজের প্রশান্তি উপভোগে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেনে ছুটে আসা প্রকৃতিপ্রেমী থেকে যুগলবন্দি বা কর্মব্যস্ত নাগরিক সবার।  

এই উদ্যানে বিলুপ্তপ্রায় নানা প্রজাতির ফুল-ফলের গাছ যেমন সংরক্ষিত, তেমনি ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে কর্তৃপক্ষের নানা আয়োজন।

গোলাপ বাগানসহ নানা প্রজাতির ফুলের সঙ্গে রয়েছে ১১টি লেক-জলাশয়।  

সবুজ গাছ-গাছালির ছাউনিবেষ্টিত পথগুলোতে যেন রাজ্যের নীরবতা।                                          ছবি: বাংলানিউজ
কিছুদিন আগেও কৃত্রিম লেক ও জলাশয়ের পানিতে নৌকা ভ্রমণের সুযোগ ছিলো। তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে উদ্যানের সৌন্দর্য বাড়ানো জলাশয়গুলোর অবস্থা এখন বেহালপ্রায়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, অযত্ন, অবহেলায় অধিকাংশ জলাশয়ই শুকিয়ে গেছে।   

উদ্যানে প্রবেশের পথ পেরুলে ডানদিকে সবচেয়ে বড় জলাশয়টি চোখে পড়বে। এটির ওপর দর্শনার্থীদের জন্য বানানো হয়েছে সুদৃশ্য সেতু। তবে দর্শনার্থীদেরই অসচেতনতার কারণে ময়লা-আবর্জনায় সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে সেতুর পথ। এর দুই ধারে দর্শনার্থীদের ফেলে যাওয়া খাবারের প্যাকেট পরিবেশকে করে রেখেছে নষ্ট ও দূষিত।  

উদ্যানের মূল সড়কটি ধরে গোলাপ বাগানের দিকে হাঁটতে হাঁটতেই হিজল বাগানের পর ‘গজারি লেক’। কচুরিপানা, শ্যাওলা ও জলজ উদ্ভিদে ভরা লেকটি দেখে মনে হয় পরিত্যক্ত জলাশয়। লেকজুড়ে অযত্ন-অবহেলার ছাপ। চারপাশে গজারি গাছে ঘেরা হওয়ায় উদ্যানের মালীদের কাছে এটি ‘গজারি লেক’ নামে পরিচিত।  

এর বিপরীত পাশেই শাপলা পুকুর। ভাসমান লাল শাপলা দেখতে উদ্যানের কর্মীর সহায়তায় পুকুরটির কাছে যেতেই হতাশ হতে হলো! লাল শাপলা তো দূরের কথা, হাঁটু ভেজানোর পানিও নেই। খাঁ খাঁ করছে পুকুরটি।  

এখানে কথা হয় উদ্যানের মালী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা লাল শাপলা পুকুর। এখন পানি নেই,  অাবার খনন করা হবে। কয়েকমাস পর পানি থাকবে, শাপলাও দেখা যাবে। ’

হাঁটু ভেজানোর পানিও নেই শাপলা পুকুরে।  ছবি: বাংলানিউজ
উদ্যানের সেকশন-৪০ এর ‘পদ্ম পুকুর’টি বেশ জনপ্রিয় সবার কাছে। নাম পদ্ম পুকুর হলেও ফুলের দেখা পাওয়া গেলো না। গোড়ালি সমান পানিতে কচুরিপানা, নানা জলজ উদ্ভিদ ভেসে রয়েছে। নানা প্রজাতির গাছবেষ্টিত পুকুরটির ঘাটের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা, ‘এপ্রিল-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুকুরে পদ্মফুল দেখা যায়’।   

একটা সময় শীতে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আসা অতিথি পাখিদের বিচরণও দেখা যেতো এ উদ্যানের জলাশয়গুলোতে। তা দেখার জন্য দেশের দূর-দূরান্ত থেকে সৌন্দর্যপ্রেমীরা ছুটে আসতেন এখানে। এখন তা দূর অতীতের ঘটনা বলেই জানান উদ্যানের কর্মীরা।

ঘুরে ঘুরে দেখা গেলো, উদ্যানের প্রায় সব পুকুর-জলাশয়ের দুর্দশা। অযত্ন, অবহেলায় সৌন্দর্যহানি যেমন হচ্ছে, তেমনি প্রকৃত রূপও হারিয়ে যাচ্ছে উদ্যানের।

এ বিষয়ে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতে তার দফতরে গেলেও আধঘণ্টা অপেক্ষা করেও পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় সহকারী বন রক্ষক মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ১১টি লেক ও জলাশয় রয়েছে। বর্তমানে লেকগুলো তেমন ভালো অবস্থায় নেই। এগুলো সংস্কারের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে, তখন উদ্যান দর্শনার্থীদের জন্য পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।  

ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির সময় কাটানোর জায়গা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঢাকাবাসীর হাতের কাছে উদ্ভিদ উদ্যানের এমন নীরব সৌন্দর্য যেন পরম প্রাপ্তি। এই জায়গাটা যেন ধীরে ধীরে ক্ষয়ে না যায়, সেদিকেই কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৮
এমসি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।