ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শতবর্ষী দুলশী ক্ষিরির গাছ!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৮
শতবর্ষী দুলশী ক্ষিরির গাছ! ক্ষিরির গাছ/ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজ

নাটোরের (সিংড়া) শুকাশ গ্রাম থেকে ফিরে: উঁচু মাটির ঢিবির উপর দাঁড়িয়ে একটি বিশাল আকৃতির বৃক্ষ। গোড়ার দিক থেকে অসংখ্য শেকড় নিচের দিকে নেমে এসেছে। অগুণতি ডালপালায় ঝাঁকড়া গাছটি অনেকটা ছাতার আকৃতি নিয়েছে।

সারাক্ষণ শোভা ছড়াচ্ছে গাঢ় সবুজ রঙের পাতাগুলো। নিচের বিশাল অংশজুড়ে বিরাজমান মনোমুগ্ধকর ছায়া।

ক্লান্ত শ্রান্ত পথিকের জন্য এ যেন এক শান্তির বিশ্রামাগার।

গাছের নিচটায় একটু ফাঁকে বসে গোবরের ঘুটা নেড়ে দিচ্ছিলেন জোবেদা নামে এক নারী। গাছের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ক্ষিরির গাছ। জনম জনম ধরে নানা জনের কাছে এ গাছের গল্প শুনে আসছি।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ারুল বাংলানিউজকে এ নামের কোনো গাছ সম্পর্কে জানাতে পারেননি। হয়তো গাছটির আলাদা কোনো নাম থাকতে পারে। যা হয়তো স্থানীয়দের জানা নেই। তবে এ প্রতিবেদকের কাছ থেকে গাছের বর্ণনা পেয়ে অধ্যাপক বলেন, এটি অবশ্যই বিরল প্রজাতির কোনো গাছ হবে। যা দেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায়। ক্ষিরির গাছ/ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজনাটোরের জাতীয় তথ্য বাতায়নে সিংড়া উপজেলার ১নং শুকাশ ইউনিয়নের দুলশী গ্রামে দর্শনীয় পাঁচটি স্থানের নাম রয়েছে। তালিকার প্রথমে রয়েছে একটি গাছের নাম। সেখানেও গাছটির নাম দুলশী ক্ষিরির গাছ হিসেবে লেখা রয়েছে। গাছটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে আসেন বলে জানান স্থানীয়রা।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার ১নং শুকাশ ইউনিয়নের দুলশী আদর্শ গ্রামে একটি বিশাল পুকুর পাড়ের পূর্ব-দক্ষিণ কোণায় দাঁড়িয়ে আছে বিলুপ্তপ্রায় বিরল প্রজাতির বিশালাকার ক্ষিরির গাছটি। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তে অনেকটা পেটের মধ্যে শুকাশ ইউনিয়নের দুলশী গ্রামটির অবস্থান।

নন্দীগ্রাম সদর উপজেলা থেকে বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক ধরে সোজা দক্ষিণে গিয়ে হাতের বামে পূর্ব দিকে গেলে রণবাঘা হাট। সেখান থেকে আরও পূর্বে কিছুটা যাওয়ার পর আবারও হাতের বামে আরেকটি সড়ক চলে গেছে। সেই সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে গেলে তিন মাথা। আর সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে বিরল প্রজাতির ক্ষিরির গাছটি। ক্ষিরির গাছ/ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজ

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের তিন মাথায় তিনটি দোকান রয়েছে। এরমধ্যে একটি মুদিখানার ও দু’টি রিকশা-ভ্যান মেরামতের দোকান। গাছটির পূর্বপ্রান্ত রয়েছে অনেক পুরনো একটি ভাঙা মাটির বাড়ি। উত্তরে রয়েছে মাদ্রাসা ও মসজিদ এবং পশ্চিমে বিশাল আয়তনের দুলশী পুকুর। যেটি দুলশী আদর্শ গ্রাম নামে পরিচিত। এই পুকুরপাড়ে ৫০টির মতো ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে।

জাতীয় তথ্য বাতায়ন অনুযায়ী শুকান ইউনিয়নে দুলশী গ্রামে সারুপাড়া মাজার শরীফ, বেলগাড়ী একদিনতল মাজার ও গির্জা রয়েছে। পাশের চালাপাড়া গ্রামে ৪০টির মতো খ্রিস্টান পরিবার বসবাস করে।

মধ্য বয়সী মুদি দোকানি আলাউদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, তার বাবার নাম মৃত সাদেক আলী খন্দকার। দাদার নাম মৃত শমসের আলী খন্দকার। বাবা-দাদার মুখ থেকেই গাছটির নাম শুনে আসছেন তিনি। বংশ পরম্পরায় তিনি গাছটির নাম শুনে আসছেন, নিজেও দেখছেন। স্থানীয় প্রবীণদের তথ্য মতে গাছটির বয়স কয়েকশ’ বছর হবে। ক্ষিরির গাছ/ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজপ্রবীণ ও মধ্য বয়সী স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ, আফজাল, আলফাজ হোসেন বাংলানিউজকে গাছটি সম্পর্কে একই কথা বলেন। তারা জানান, আর কিছুদিন পর গাছটিতে ফুল আসবে। এরপর যথারীতি তা ফলে পরিণত হবে। সেই ফল পাকলে হলদে রূপ ধারণ করে, যা খেতে অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু। ফল দেখতে অনেকটা নিম গাছের ফলের মতো। তবে কালের আবর্তে গাছটিতে এখন আগের মতো বেশি পরিমাণে ফল ধরে না।

স্থানীয় এসব ব্যক্তি আরও জানান, তাদের চোখের সামনে দিয়েই অনেক ঝড়সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলে গেছে। কিন্তু গাছটির কোনো ডালডালা ভেঙে পড়েনি। গাছটির ডালপালা খুব মজবুত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৮
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।