ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

হাইল হাওরে শত্রুতার বিষ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
হাইল হাওরে শত্রুতার বিষ!  বিষে মরে ভেসে ওঠা মাছ। ছবি : বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মাছের ঘেরে বিষপ্রয়োগ করে বিনষ্ট করা হয়েছে ১৫ লক্ষ টাকার মৎস্যসম্পদ। শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইলহাওর সংলগ্ন লামুয়া এলাকায় একটি মাছের ঘেরে শত্রুতাবশত বিষ প্রয়োগ করেছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে পাউডার জাতীয় এই বিষ প্রয়োগের ফলে ওই মাছের ঘেরসহ হাইল হাওরের বিস্তৃর্ণ এলাকার পানি দূষিত হয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের হাইল হাওরের হালদিঘা বিলে জনৈক মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আশিক মিয়ার মাছের ঘেরে এই বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে আশিক মিয়া অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে সংসার ও ঋণের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।


এদিকে সংবাদ পেয়ে ওই ঘেরের পানির নমুনা পরীক্ষা করে বিষ প্রয়োগের প্রমাণ পেয়েছেন উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের মালিক আশিক মিয়া জানান, ঘেরে বিষপ্রয়োগের ঘটনায় তিনি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। স্থানীয় এনজিও কারিতাস ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে লিজ নেয়া ১২ কেয়ার জায়গাজুড়ে মাছের চাষ করে আসছিলেন। এজন্য প্রচুর বিনিয়োগও করে রেখেছেন। আসছে শুকনো মৌসুমে সেখান থেকে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মাছ আহরণ করার কথা ছিল। কিন্তু শত্রুতাবশতঃ বিষ প্রয়োগের ফলে আধা কেজি থেকে ৭ কেজি ওজনের বড় আকারের অনেক মাছ ঘের থেকে বেরিয়ে হাওরের পানিতে মিশে গেছে। আর ছোট মাছগুলো মরে ভেসে উঠেছে।

বিষয়টি স্থানীয় সংবাদকর্মীর মাধ্যমে জেনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলামের তাৎক্ষণিক নির্দেশে উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা সহিদুর রহমান সিদ্দিকী বুধবার দুপুরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের নিয়ে সরেজমিন মাছের ঘের পরিদর্শন করেন।

বিষে মরে ভেসে ওঠা ভেড়া মাছ, ছবি : বাংলানিউজসেখানে তিনি বিষাক্ত পানি পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের জানান, পানিতে স্বাভাবিক মাত্রায় ৭.৫ থেকে ৭.৮ মাত্রার পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন (পিএইচ) থাকার কথা, কিন্তু সেখানে ৫.৩ থেকে ৫.৪ মাত্রায় পিএইচ পাওয়া গেছে। এছাড়া পানিতে যেখানে ৫ মাত্রায় পিপিএম থাকার কথা সেখানে ০.৫ পিপিএম পাওয়া যায়। এর ফলে পানিতে অক্সিজেন অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। পিএইচ ও পিপিএম কমে যাওয়ায় পানিতে বিষের উপাদান আছে বলে জানান মৎস্য কর্মকতা।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে লামুয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাছের ওই ঘেরের পানিতে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে ভেসে আছে। মাথার উপরে একদল চিল এবং বাজ এসব ভাসমান বিষাক্ত মাছ শিকার করে উড়ে যাচ্ছে। এই বিষে তাদেরও আক্রান্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে। মাছের ঘেরের পাড়ে চূর্ণ করা এক ধরনের বিষাক্ত পাউডার ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এসব বিষাক্ত পাউডারের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছেন মৎস্য বিভাগের লোকজন।

ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘেরের মালিক আশিক মিয়া জানান, বুধবার সকালে ঘেরে মাছের খাদ্য দিতে এসে দেখি চিল এবং বাজদের উড়াউড়ি। পরে পানিতে নেমে দেখি প্রচুর পরিমাণে মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, এলাকার কিছু লোক শত্রুতামূলক আমার মাছের ঘেরে বিষপ্রয়োগ করে থাকতে পারে।

মাছের ঘেরের পাশে বসে আছেন আশিক মিয়া, ছবি : বাংলানিউজতিনি আরো বলেন, গত ৬টা মাস ধরে বাড়ি ঘর ছেড়ে হাওরে পড়ে আছি। এর উপরই আমার ৯ সদস্যের পরিবারের নির্ভরতা, বাচ্চাদের স্কুল কলেজে লেখাপড়ার খরচপাতি চালাতে হয়। সমিতি, ব্যাংক এনজিও মিলে আমার অনেক টাকা ঋণ। মাছের খাদ্যের দোকানেও দেনা আছে। এখন আমার মরণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি আইনের কাছে বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
বিবিবি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।