ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চোররা এভাবেই সাধু হতে চায়

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
চোররা এভাবেই সাধু হতে চায়

মৌলভীবাজার: শেষ পর্যন্ত চুরি পেশাটি পরাজয় বরণ করলো চার চোরের জীবনে। এখন তারা অনুশোচনায় কাতর। গভীরভাবে এখন তারা উপলব্ধি করতে পারছে বড় ভুল হয়ে গেছে জীবনে। পরিবার-পরিজন এবং সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তারা। ফিরতে চাইছে স্বাভাবিক জীবনে। বাঁচতে চাইছে অন্য মানুষদের মতো।

এদিকে, পুলিশ তাদের পিছু ছাড়ছে না। একেক জনের উপর ঝুলছে ডজন ডজন মামলা।

যেদিকেই যাচ্ছে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য ধাওয়া করছে।
 
আরো মজার ব্যাপার, এক সময় তারা স্বেচ্ছায় চুরির পথে পা বাড়ালেও, যখন পরে উপলব্ধি করতে পেয়েছিল কাজটি খুবই খারাপ। তারপর থেকে চুরি করা বন্ধ করে দিলেও বনবিভাগ তাদের পিছু ছাড়েনি। অন্য চোররা চুরি করলেও বনবিভাগের মামলায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ হতে থাকে।

এ যেন আলোহীন গুমট অন্ধকারময় একটি ঘরে প্রতীকী বসবাস তাদের। ঘরের চারদিকজুড়ে বাহিরের আলো প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। কেবলমাত্র জীর্ণ জানালার পাজরে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র। যা দিয়ে সূর্যের অপ্রতিরুদ্ধ কিরণ সেই গুমট ঘরে প্রবেশ করে জানান দিচ্ছে ফিরে এসো আলোর দিকে।
 
শনিবার (২২ জুলাই) রাতে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জ অফিসে এসে আত্মসমর্পণ করে। এই চার চোরের নাম সুয়েব মিয়া, পিতা- রহমান উল্লা, মাসুক মিয়া, পিতা- অরমুজ মিয়া, রহমান মিয়া, পিতা- শফি উল্লা, এবং মুসলিম মিয়া, পিতা- রহমান উল্লা।

এদের প্রত্যেকের বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভেড়াছড়া গ্রামে। এরা সবাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের কালাছড়ার বিটের গাছচুরির সঙ্গে এক সময় জড়িত ছিল।
 
সোয়েব মিয়া বলেন, ‘আমাদের পরিবার-পরিজন ও বাচ্চাকাচ্চা আছে। আমাদের উপর কেইস-মামলা থাকার কারণে আমরা ঠিক মত আমাদের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারি না। পুলিশ এসে ধাওয়া করে’।
 
সোয়েব আরো বলেন, ‘আমরা সরকারের দৃষ্টিতে আমরা সম্পূর্ণ অপরাধী। জীবনে অনেক ভুল করেছি। এখন সুস্থ জীবনে ফিরতে চাই। এখন পবিত্র কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে কসম করে আমরা ৪ জন ওয়াদাবদ্ধ হতে চাই যে আর জীবনে কখনো গাছচুরি করবো না[’।

মাসুক মিয়া বলেন, শুক্র ও শনিবার বাদে প্রতিদিনই মৌলভীবাজার কোর্টে গিয়ে যাতায়াত, হাজিরাসহ উকিলকে দৈনিক ৭০০ টাকা দিতে হয়। দেখা যায় প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খবর হয়ে যাচ্ছে। এই টাকা আমরা কোথায় পাবো? এখন কিছু টাকা যদি আমাদের হাতে থাকতো তবে ছোট-খাটো একটা চায়ের দোকান দিতে পারতাম।
 
মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান বাংলানিউজে বলেন, আমাদের সংরক্ষিত বনগুলোতে টহল বৃদ্ধিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করার কারণে গাছচুরি প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। পুলিশ মামলা অনুযায়ী আসামিদের ধরতে জোর তৎপরতার কারণে গাছচোরারা বর্তমানে মারাত্মক বিপদের মধ্যে আছে।

সুস্থ জীবনে কেউ ফিরে আসতে চাইলে তাদের সহযোগিতা করা হবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে এসিএফ তবিবুর রহমান বলেন, আমাদের সামাজিক বনায়নের নামে বনের বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন বৃক্ষরোপণ হয়েছে এবং আগামীতেও হবে। এরা সামাজিক বনায়নের সুবিধাভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এছাড়াও ওরা আমাদের শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত হলে দৈনিক দু’তিনশ টাকা করে মুজুরি পাবে। এভাবেই এরা কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়তো পাবে।
 
তিনি আরো বলেন, ওই চার গাছচোরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওরা আমাকে বলেছে আগামী শুক্রবার ওদের এলাকার মসজিদের জুম্মার নামাজের পরে মসজিদের ইমামের নিকট ওয়াদা করবে যে ওরা জীবনের আর কখনো, কোনোদিন গাছচুরি করবে না। আমাদের বনবিভাগের লোকও তখন সেখানে উপস্থিত থাকবে।

সুযেব, মাসুক, মুসলিম ও রহমান এরা চার জন আত্মশুদ্ধির পথে এবং সুস্থ জীবনের দিকে পা বাড়ালেই কেবল তাদের উপর দায়ের করা আমাদের বন মামলাগুলো তুলে নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে বলে জানান এসিএফ তবিবুর রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
বিবিবি/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।