ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

‘তিনবেলা ভাত খাওয়াই দায়, আবার নতুন জামা!’

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
‘তিনবেলা ভাত খাওয়াই দায়, আবার নতুন জামা!’ মেঘনা পাড়ের ছিন্নমূল শিশুদের ঈদ কেটেছে বিবর্ণভাবে। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: বাঁধের ওপর খেলা করছে ৮/১০ বছর বয়সী নাইম, ফাহিম, রাব্বি, জিহাদ, তাসনুর ও ভুট্টুসহ কয়েকজন শিশু। দূরন্ত শৈশবের আনন্দে মেতে উঠেছে তারা। চোখে-মুখে তাদের রঙিন স্বপ্ন।

তবে ঈদের দিনও এ স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাদের। ভালো খাওয়া-দাওয়া দূরে থাক, একটি নতুন জামাও পায়নি।



ঈদ তাই বাঁধে আশ্রিত ছিন্নমূল পরিবারের এই শিশুদের জীবনে নিয়ে আসেনি খুশির বার্তা। তারা জানায়, সোমবার (২৬ জুন) ঈদের দিনেও তাদের পুরনো-ছেড়া জামা-কাপড় পরতে হয়েছে। জোটেনি সেমাই-মিষ্টি কিংবা মাংস-পোলাও। অন্য দিনগুলোর মতোই খেতে হয়েছে ডাল-ভাত।

মঙ্গলবার (২৭ জুন) সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে,  চারদিকে আনন্দ বয়ে গেলেও মেঘনা পাড়ে কেটেছে বিবর্ণ ঈদ। ভালো খাবার বা নতুন পোশাক জোটেনি বাঁধে আশ্রিত পরিবারগুলোর কারো ভাগ্যেই। শিশুরাও ঈদ কাটিয়েছে পুরনো-ছেড়া পোশাক পরে। ঈদের পরদিনও ওই জামা পরেছে কেউ কেউ, তবে বেশিরভাগই খালি গায়ে খেলে-ঘুরে বেড়াচ্ছে।

 বেশিরভাগ শিশুই খালি গায়ে খেলে-ঘুরে বেড়াচ্ছে ঈদের পরদিনও।  ছবি: বাংলানিউজমেঘনার ভয়ঙ্কর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত গ্রামটি অসহায় ওই জেলে পরিবারগুলো। কিছুদিন আগেও যাদের সব ছিলো, এখন তাদেরই আশ্রয় বাঁধের ওপরে। তাদের জীবন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। কখনও খাবার জোটে, আবার কখনও জোটে না।
তাই ঈদ আনন্দ ম্লান এসব পরিবারে।

তবে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা অবুঝ শিশুরা বুঝতে পারে না, কেন ঈদে তাদের ভাগ্যে জোটে না নতুন জামা। শুধু জানে, তাদের এ বায়না পূরণ হয় না।

নাইম বলে, ‘ঈদের নতুন জামা কেনা হয়নি। তাই ছেড়া-পুরনো জামা গায় দিয়ে ঈদের দিনটিও কাটিয়েছি। আজও ঘুরতে বা খেলা করছি সেই জামা পরেই’।

তার ছোট ভাই ফাহিম বলে, ‘কিভাবে নতুন জামা পরবো? আব্বায় কিনা দেয়নি’।

রাব্বির মা রোকেয়া বলেন, ‘নদীতে মাছ নেই, টাকাও নেই। তাই বায়না মেটাতে পারিনি ওদের। তিনবেলা ভাত খাওয়াই যেখানে দায়, সেখানে আবার নতুন জামা!’

মান্নানের মেয়ে তাসিন বলে, ‘আমাদের সঙ্গের অনেকে ঈদের জামা কিনেছে, কিন্তু আমার নেই। গত ঈদেও নতুন জামা পাইনি’।

খাদিজা জানায়, তার বাবা প্রতিবন্ধী, আয়-রোজগার নেই। বোনের দেওয়া ২ হাজার টাকায় সংসার চলে। কেউ পোশাক কিনেও দেয়নি। তাই এবারও ছেড়া জামায় কেটেছে ঈদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।