ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

২৫ বছরে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ পোকা ধ্বংস

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৭
২৫ বছরে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ পোকা ধ্বংস টুনটুনির মতো খুদে পাখিরা এভাবে পাতার নিচ থেকে পোকা ধরে খায় আর ‘টুন-টুন...’ শব্দে সারাক্ষণ ডাকতে থাকে, ছবি: ইনাম আল হক

মৌলভীবাজার: পাখিদের জন্য পোকা-মাকড়কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পৃথিবীর ৮০ শতাংশ পাখিই পোকা-খাওয়া পাখি। এই পাখিরাই পোকা-মাকড় খেয়ে আমাদের মূল্যবান বন-জঙ্গলের বৃক্ষসম্পদগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমরা এতো ব্যাপক পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করছি যে, আমাদের চারপাশ থেকে এখন পোকা-মাকড় বিলুপ্ত হয়ে আজ নানা প্রজাতির পাখিরাও বিলুপ্ত হতে চলেছে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার (৫ মে) দুপুরে বাংলানিউজকে এ কথা বলেন প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক।
 
তিনি আরো বলেন, এটা শুধু আমাদের দেশেরই সমস্যা নয়, সারা পৃথিবীর সমস্যা।

সম্প্রতি ‘বিজ্ঞান’ নামক একটি জর্নালের মে সংখ্যার প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৫ বছরে পৃথিবী থেকে ৮০ শতাংশ পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ শেষ হয়ে গেছে। তো ৮০ শতাংশ পোকা শেষ হয়ে গেলে পাখি কী খেয়ে বেঁচে থাকবে?
 
পতিত জমি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  বাংলাদেশের তো অবশ্যই গাছপালার আর জায়গা নেই। সব কেটে-কুটে সাফ। তার চেয়ে বড় কথা, পতিত জমিকে প্রাকৃতিক অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখা। কিছু ঘাস, কিছু লতাগুল্ম যে স্থানে রয়েছে সেখানেও তো পাখি থাকে। সেই পতিত জমিটুকুও তো নেই। পাখির জন্য জমি লাগে। হয়তো একটা ডোবা। সেখানে হয়তো গাছপালা নেই, কয়েকটা লতাপাতা রয়েছে; এমন জমিই পাখির জন্য ভীষণ উপকারী। মরুভূমিতেও পাখি থাকে। সব পাখির গাছ লাগে না। বিশেষ করে পানির পাখির জন্য লতাগুল্ম লাগে। ’
 
‘আমাদের যেটা লাগবে তা হলো একটি নির্জন পতিত জমিতে প্রাকৃতিক উদ্ভিদ লাগবে। আমরা যেটাকে আগাছা বলি। পাখির জন্য ওইটাই অত্যন্ত জরুরি। এটা ছাড়া সে টিকে থাকতে পারবে না। এগুলোও আমরা রাখি না, রাখছি না। এই পরিবেশ উপযোগী ভাবনাটি এখনো লোকের মনের গভীরে যায়নি। ক্ষুধার্ত ছানাদের জন্যে কাঠশালিক পোকা শিকার করেছে, ছবি: ইনাম আল হক
 
একটা পতিত জমি পেলেই আমরা সাফ করে একদম সুন্দর করে রাখি। এটা হয়তো আমাদের চোখে সুন্দর, কিন্তু পাখিদের চোখে নয়। তাই আমাদের পাখিদের জন্য আমাদের পতিত জমিটুকুকে অবশ্যই প্রাকৃতিক অবস্থায় রাখার চেষ্টা করতেই হবে বলে মন্তব্য করেন প্রবীণ এই পাখি বিশেষজ্ঞ।
 
কীটনাশকের ভয়াবহতার উদাহরণ উল্লেখ করে ইনাম আল হক বলেন,  মানুষ এবং পরিবেশের জন্য কীটনাশক অত্যন্ত বিষাক্ত। আমেরিকাতে চলতি বছরের মে মাসের ৫ তারিখে কীটনাশক ছড়াতে গিয়ে ৫০ জন কৃষক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আমেরিকার মতো দেশে এতো সংখ্যক মানুষের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কত ভয়ংকর একটি সংবাদ। আমরা রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার করে পরিবেশের সুস্থতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছি।
 
‘কিন্তু অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করতেন তা পরিবেশের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন করতো না। আপনি খেয়াল করে দেখেন, আগে আমাদের বাসায় রাতে বাতির পাশে যে পরিমাণ পোকা আসতো; সেগুলো এখন আর আসে না। তাহলে কোথায় গেল ওরা? রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার আমাদের চারপাশের পোকামাকড়কে ধ্বংস করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ করে দিচ্ছে। ’
 
‘পোকা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ধরে নেই পোকা মানেই খারাপ কিছু একটা। তা কিন্তু নয়। পোকা মনে মৌমাছি, প্রজাপতি, মথ প্রভৃতি। মৌমাছি ছাড়া ফুলের পরাগায়নই হবে না। পোকা দিয়েই পৃথিবীর সুস্থতা টিকে রয়েছে। কিন্তু আমরা একেবারে অন্ধের মতো পোকা নিধন করে যাচ্ছি। যা পৃথিবীর সার্বিক মঙ্গলের জন্য মারাত্মক হুমকি।
 
বাংলাদেশে পাখি নিধনের বড় দুটি কারণই একটি হলো- বাংলাদেশে প্রাকৃতিক জমি নেই। যেখানে লতাগুল্ম, আগাছা, ডোবা-নালা এগুলো রয়েছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো, রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে পোকা ধ্বংস করা হচ্ছে। যা পাখিদের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত হুমকি বলে মনে করেন পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।    
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৭
বিবিবি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।