ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বিরল কাগজি’র ফিরে আসা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
বিরল কাগজি’র ফিরে আসা শরীরে শুভ্রতা নিয়ে বসে আছে ‘কাগজি’, ছবি: অমিত কুমার নিয়োগী

মৌলভীবাজার: বছর তিনেক আগের কথা। কমলগঞ্জ উপজেলার দুর্গম রাজকান্দি বিটের ঝিরি পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছি। পানিময় ওই পথটুকু প্রচন্ড পিচ্ছিল ও পঙ্কিলযুক্ত। কিছু দূর এগুতেই ‘সাদা’ একটা জিনিস দৃষ্টিতে এসে ধরা পড়ে।
 

কাছে যেতেই তার উড়ার পালা শুরু। বাতাসে ডানা মেলবার পরই বুঝলাম বিরল প্রজাতির কোনো প্রজাপতি।

ক্যামেরা বের করে ছবিধারণের সুযোগ তো দূরের কথা। তারপর প্রায় একশ’ গজ অতিক্রমের পর পুনরায় তার দেখা। দুর্ভাগ্য! তখনও সে উধাও হলো।
মস্তিষ্কে গেঁথে রইল তার অপূর্ব বর্ণচ্ছটার রূপ এবং শারীরিক শুভ্রতাটুকু। সাদা শরীরজুড়ে কালো কালো ছড়ানো টানের সৌন্দর্যটুকু বহুদিন মনে লেগেছিল। লাউয়াছড়া কিংবা সাতছড়ি বনেও এই শ্বেতশুভ্র বিরল প্রজাপতিটাকে অনেক দিন, অনেক খোঁজা হলো। কিন্তু প্রাপ্তির স্মৃতি শূন্য।

আরণ্যক প্রকৃতির এমন পরিবেশটিকে ক্ষণিকের রোদ পোহাবার একমাত্র নির্ভর স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছিল কাগজি। যেখানে তাকে কেউ বিরক্ত করার দুঃসাহস দেখাবে না। বরং অনেক কোনো প্রজাতির প্রজাপতি এলে সে ওই আগন্তুক কে গিয়ে বলবে – এখান থেকে চলে যা; এটা আমার এলাকা!

প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, এই প্রজাপতির বাংলা নাম ‘কাগজি’। এর ইংরেজি নাম ‘কমন ম্যাপ’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম Cyrestis thyodamas। ‘নিম্ফালিডি’ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এই প্রজাপতির ডানার ব্যাস প্রায় ৫০-৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশ্বে Cyrestis গণের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ২৭ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশে Cyrestis গণের মাত্র দু’টি প্রজাতি পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, Cyrestis thyodamas (কমন ম্যাপ) ও Cyrestis cocles (মার্বেল ম্যাপ)। কাগজের মতো হাল্কা এই প্রজাপতিটির পুরুষ ও মেয়ে উভয়েরই ডানার ফ্যাকাসে সাদা। যার মধ্যে কালো রঙের সংকীর্ণ তরঙ্গায়িত রেখা। পাখার রেখাগুলো মাঝে মাঝে চকলেট রঙের ছোপ ছোট দাগ রয়েছে। এই প্রজাপতির পশ্চাৎ পাখনার টরনার অংশে বেশ কিছুটা অংশজুড়ে কমলা রঙ রয়েছে।  

প্রাপ্তিস্থান প্রসঙ্গে অমিত কুমার নিয়োগী বলেন, ‘কাগজি আমাদের দেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেখা যায়। তবে এই প্রজাপতিটি বেশ বিরল। হাল্কা আদ্র বা ভেজা ছড়ার (দুই পাহাড়ের মাঝে পানি প্রবাহের পথ) বালুমাটি হতে খনিজ আরহণ করতে দেখা যায়। এরা মাঝে মাঝে বনের নিচু গাছগুলোতে এসে ডানা প্রসারিত করে রোদ পোহায়। বটগাছ বা Ficus sp. গাছে এরা ডিম পাড়ে। এরা পাতার উল্টো পাশে বসে বিশ্রাম নেয়। ’

কাগজি ধীরে উড়ে বেড়ানো প্রজাপতি। এরা অন্য প্রজাতির প্রজাপতির সঙ্গে প্রায়শই স্থানিক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) কর্তৃক ‘লাল তালিকা-২০১৫’ এর তালিকায় কাগজিকে বাংলাদেশ ‘বিপন্ন প্রজাতি’ ঘোষণা করেছে বলে জানান প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৭
বিবিবি/বিএস  
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।