ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ডালজুড়ে ফুলপূর্ণ উপকারী উদাল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৭
ডালজুড়ে ফুলপূর্ণ উপকারী উদাল পাহাড়ি অঞ্চলের উদাল ফুল, ছবি: বাংলানিউজ

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): পাতাঝরা মানেই নতুন পল্লবের আগমনী বার্তা। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই গাছের শরীরজুড়ে আসে নতুন প্রাকৃতিক আবরণ। পুরাতন পোশাক ফেলে নতুন পোশাকে হয়ে ওঠে অপরূপা। চারদিকে কেবল গাঢ় সবুজের ছড়াছড়ি।

এ বসন্তে উদাল গাছের পাতাও ঝরে। আসে ফুল।

গাছের ডালে ডালে ফুটে থাকে ফুল আর ফুল। এতো ফুল ফুটে যে গাছের ডাল-পাতাই দেখা যায় না। পুরো গাছটাই একেবারে হলুদ রঙে পূর্ণ হয়ে যায়। এগুলো ফুল, নাকি পাতা- দূর থেকে দেখলে মনে লাগে ধাঁধা। কাছে এসে তাকালে ধরা পড়ে গাছজুড়ে ফুলেদের এমন অপূর্ব মেলা।

বরেণ্য লেখক হুমায়ুন আহমেদের ‘হিমু’ ভক্তরা এ গাছে এসে তাদের প্রিয় ‘হলুদ’কে পেয়ে সমূলে আনন্দিত হয়ে উঠবেন। উদাল ফুলে জুড়াবে আঁখি।

সম্প্রতি সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা হরিণছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা যায় উদাল গাছজুড়ে ফুলের হলুদহাসি। হলুদময় বলে দূরে থেকে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ফুল। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে এ ফুলগুলো আপন মনে উপভোগ করা যায়।
সারা গাছজুড়ে ফুটে আছে উদাল ফুল, ছবি: বাংলানিউজএ গাছেরও রয়েছে ঢের উপকারিতা। হরিণছড়া এলাকার স্থানীয় অধিবাসী পিতর বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদালগাছের ফুল ও ছাল উপকারী। মহিলাদের ঋতুস্রাব নিয়মিতকরণেও এর উপকার রয়েছে। এছাড়াও আমাশয়ে এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

‘উদাল’ ছাড়াও কোনো কোনো অঞ্চলে ‘চালা’ নামে পরিচিত এ গাছটি। এদের আঞ্চলিক নামও রয়েছে। উদালের ইংরেজি নাম- Hairy Sterculia এবং বৈজ্ঞানিক নাম- Sterculia villosa। এটি Malvaceae পরিবারভুক্ত। উদাল বাংলাদেশসহ ক্রান্তীয় এশিয়ার একটি প্রজাতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং লেখক ড. মো. আবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শীতের শেষে তীব্রতা কমার পরই সব পাতা ঝরে যায়, তারপর গাছভরে আসে ফুল। আপনি খেয়াল করে দেখবেন কোনো উদাল গাছে এখন একটি পাতাও নেই। এখন ফুল ফুটে ভরে আছে।

তিনি আরও বলেন, এ ফুল মাসখানেক বা দেড়মাস থাকে। ফুল ঝরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডালের আগায় ফল আসতে শুরু করবে। থোকায় থোকায় ফলগুলো লেগে থাকলেও পরবর্তীতে আলাদা হয়ে যায়। ফলগুলো সবুজ রং থেকে পেকে গাঢ় লাল রঙে রূপ নেয়। পাকা ফলের ভেতরে কালো রঙের বীজ থাকে। উদাল গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার বা তার চেয়েও উঁচু হয়। আর ফুলগুলোও হয় দেড় সেন্টিমিটার চওড়া।
সারা গাছজুড়ে ফুটে আছে উদাল ফুল, ছবি: বাংলানিউজএর প্রাপ্তিস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ গাছটি বেশি দেখা যায়। ওখানেই প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। দেশের অন্য অঞ্চলে খুবই কম। আমাদের বোটানিক্যাল গার্ডেন ও কার্জন হলে এ গাছটি লাগানো রয়েছে।

গাছের উপকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনি পৃথিবীতে এমন একটা প্ল্যান্টও পাবেন না যে গাছের কোনো না কোনো উপকারিতা নেই। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মানুষ যে গাছগুলো উপকার হিসেবে আবিষ্কার করতে পেরেছে তাকেই মনে করে উপকারী গাছ। আর যে গাছগুলোকে মানুষ এখনো আবিষ্কারই করতে পারেনি তাকে মনে করে বাজে গাছ।

‘যখন এ গাছে ফুল হয়, তখন বাকলের মধ্যে এসে এর উপকারী কেমিক্যালগুলো জড়ো হয়। তখন এর বাকল বা ছাল ওষুধি হিসেবে কাজে দেয়। ’

উদাল গাছের কাঠ বাদামি রঙের। কাঠটি নরম ও হালকা বলে জানান অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাসান।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৭
বিবিবি/ওএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।