ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

লক্ষ্মীপুরের শত বছরের হাট-বাজার নদীগর্ভে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
লক্ষ্মীপুরের শত বছরের হাট-বাজার নদীগর্ভে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লক্ষ্মীপুর: কাদিরপণ্ডিতের হাট ও লুধূয়া বাজার কমলনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাজার। এ দু’টি বাজারের সঙ্গে শত বছরের ইতিহাস জড়িত।

মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে হাট-বাজার দু’টি এখন নদী গর্ভে।

শত বছর আগে-পাটারিরহাট, ফলকন ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নের মিলনস্থলে লুধূয়া বাজার গড়ে ওঠে। তিন ইউনিয়নের হাজার-হাজার মানুষের ভরসা ছিল এ বাজার। বিশেষ করে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের প্রাণ কেন্দ্র লুধূয়া বাজার। এ বাজারে প্রায় পাঁচশতাধিক দোকান-পাট ছিল।

এছাড়াও সপ্তাহে দুইদিন বাজারের গলিতে বসতো গ্রাম্যহাট। খাদ্য-দ্রব্য, কৃষিপণ্য, বাঁশ-বেতের সামগ্রীসহ সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এ বাজার হয়ে ভোক্তাদের ঘরে পৌঁছাতো। এখন এ বাজার নদীগর্ভে।

বাজারের পাঁচ শতাধিক দোকানপাটের মধ্যে চার শতাধিক নদী গর্ভে চলে গেছে। বাকি দোকানগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অব্যাহত ভাঙনে বাজারটি সম্পন্ন বিলীন হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের।

দশ-বারো যুগের পুরনো বাজার কাদিরপণ্ডিতের হাট। এ হাটকে ঘিরে আশেপাশে গড়ে ওঠে বসতি। প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা-মসজিদ ও ব্যাংক ও এনজিওসহ বহু স্থাপনা। সাহেবেরহাট ইউনিয়নে এ বাজারের অবস্থান হলেও আশপাশের সব ইউনিয়নের বাসিন্দারা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এ বাজারে সমাগম হতো।

গত ৮/১০ দিনের মেঘনার ভাঙনে কাদিরপণ্ডিতের হাটের প্রায় অর্ধেক (দুই শতাধিক দোকান পাট) নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভেঙে গেছে হাটের দক্ষিণ প্রান্তের চলাচলের রাস্তা। খুলে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের তার। তুলে নেওয়া হচ্ছে খুঁটি। তাই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ হাট।

লুধূয়া বাজার ও কাদিরপণ্ডিতের হাট নদীতে ভেঙে যাওয়ায় ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। বহু ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে এখন অসহায়।

মেঘনা নদীর ভাঙনে এমনই পরিস্থিতি হয়েছে উপজেলার সাহেবেরহাট, নতুন সাহেবেরহাট, আজু বেপারীরহাট, সাঈদ মুহুরির হাট, পাতাবুনিয়া বাজার, মাতাব্বরনগর বাজার ও সফিকগঞ্জ বাজারের। বর্তমানে হুমকির মুখে মতিরহাট, মাতাব্বরহাট, হাজীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, ইসলামগঞ্জ ও নাছিরগঞ্জ বাজার।
ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, শত বছরের লুধূয়া বাজার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাজারটি ভেঙে যাওযায় এ অঞ্চলের মানুষ যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে।

সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বাংলানিউজকে জানান, ঐতিহ্যবাহী কাদিরপণ্ডিতের হাট নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা কোটি-কোটি টাকার পুঁজি হারাচ্ছে। বাজারটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বহু ব্যবসায়ী টাকার অভাবে ফের ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।

কমলনগর নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আবদুল মোতালেব বাংলানিউজকে বলেন, মেঘনার ভাঙন প্রতিরোধে বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী বছরের পর বছর ভাঙন রোধের দাবি জানিয়ে এলেও এখনও কাজের কাজ কিছু হয়নি। এভাবে ভাঙতে থাকলে কমলনগর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর এলাকায় নদী তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার অনুমোদন করে একনেক। ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম পর্যায়ে ১৯৮কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দকৃত টাকায় রামগতিতে এক কিলোমিটার, আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার এবং কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধ বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার কাজ বাস্তাবায়ন করছে। নৌ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মিত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।